দেশজুড়ে জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহে কনকনে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীতের তীব্রতা বাড়ার পাশাপাশি ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে দেশের বেশির ভাগ অঞ্চল। এতে যান চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। বিঘ্ন ঘটছে নৌ চলাচলেও।
নওগাঁ, পঞ্চগড়, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মৌলভীবাজার ও কুড়িগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় গত এক সপ্তাহ ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। হাড় কাঁপানো শীতের কষ্ট থেকে বাঁচার জন্য গরিব মানুষের খড়কুটো জ্বালিয়ে একটু উষ্ণতার পরশ নিতে হচ্ছে। কুয়াশার চাদরে সারাদিন সূর্য ঢাকা থাকায় ঘর থেকে বেরিয়ে কাজের সন্ধানে যেতে না পারায় মানবেতর জীবনযাপন করছে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। একইসঙ্গে শীতজনিত রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা।
ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক-মহাসড়কে সকালেও হেডলাইড জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। গতকাল সোমবার কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল রাজধানী। সকাল থেকে ঘন কুয়াশার কারণে রাজধানীতে যানবাহন চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। কিছু কিছু স্থানে কুয়াশা এত ঘন হয়ে জমেছে যে, ২০ হাত দূরের জিনিসও দৃশ্যমান হয় না। শীত ও কুয়াশার এ অবস্থা আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এ সংস্থার তথ্যমতে, চলতি সপ্তাহের শেষে শৈত্যপ্রবাহ শক্তিশালী হয়ে আরো কয়েকটি জেলায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। চলতি মাসে দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। তবে এ মাসে শৈত্যপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ বা তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নামার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
গতকাল সোমবার রাজধানীসহ দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকার তাপমাত্রাও শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি। রাজধানীতে গত রবিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক শূন্য ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে সোমবার ঢাকার তাপমাত্রা বেড়ে হয়েছে ১৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একদিন আগে তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল
১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে, গত বৃহস্পতিবার থেকে দেশে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়। নওগাঁ, পঞ্চগড়, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মৌলবিবাজার ও কুড়িগ্রামে সন্ধ্যার পর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত হিমেল বাতাস বইছে। এতে কনকনে ঠান্ডায় দুর্ভোগে পড়েছে ছিন্নমূল, অসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষ। ভোর থেকে সূর্য ওঠা পর্যন্ত কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকছে চারপাশ। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে ঘন কুয়াশা বেশি দেখা যাচ্ছে। অনেককে হাত-পা-মুখ মোটা কাপড়ে ঢেকে যাতায়াত করতে দেখা যাচ্ছে। শহর-বন্দর-গ্রাম সর্বত্র খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে। যানবাহনগুলো দিনেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ জানান, উত্তরের হিমেল বাতাসে তীব্র ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। আজ (গতকাল) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রবিবার (আগের দিন) তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনি ও শুক্রবার রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা।
এদিকে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা থেকে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকে পঞ্চগড়, মৌলভীবাজার ও কুড়িগ্রামের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৯ দশমিক ৬, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চলমান ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস তুলে ধরে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকা ও উত্তরাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। এ সময় সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।