বাংলাদেশ নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা কাউকে দেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দেশ চলবে। এই মাটিতে বসে প্রতিজ্ঞা নিচ্ছি, বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি কেউ যাতে গতিরোধ করতে না পারে, তার জন্য আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যন্ত প্রতিটি নেতা কর্মী সজাগ থাকবে, দৃঢ় থাকবে। যে কোনও অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করবে। এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবো।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় কমিটির এক যৌথসভা এসব কথা বলেন তিনি। গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে দলটির নতুন নেতৃত্ব আসার পর এই প্রথম বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত টুঙ্গীপাড়ায় সভা অনুষ্ঠিত হলো।
সভার মুলতবি বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, এই বিএনপি-জামায়াত ২০১৩ থেকে ১৫ সাল পর্যন্ত অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল। তাদের ঘৃণা জানাতে হবে। তারা মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। হত্যা, খুন ও গুম জিয়াউর রহমান শুরু করেছিল। খালেদা জিয়া ও তার কুলাঙ্গার পুত্র মিলে ২১ আগস্ট থেকে শুরু করে এত মানুষ হত্যা করেছ এবং অত্যাচার নির্যাতন করেছে।
তিনি বলেন, আগামীতে যদি একটা মানুষকেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত করে তাহলে যে হাত দিয়ে আগুন দিবে ওই আগুনে সেই হাত পুড়িয়ে দেওয়া হবে। যে হাতে মানুষ খুন করবে তাদের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া হবে। এই কথাটা যেন সকলের মনে থাকে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, তারা আন্দোলন করতে চায় আমরা বাধা দেব না। কিন্তু আন্দোলনের নামে যদি আবারও রকমের নাশকতা করে, দেশের ক্ষতি সাধন করতে চায়, আর্থ সামাজিক ক্ষতি করতে চায় তাহলে তাদের উপযুক্ত জবাব বাংলাদেশের জনগণ দেবে।
২০০৮ সালের নির্বাচনের বিএনপি ৩০ আসনে বিজয়ী হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা বোধহয় আপনাদের মনে থাকে না। ওই নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ২৯টি সিট পেয়েছিল। পরে উপনির্বাচনে একটা। এটাই ছিল তাদের শক্তি। সে জন্য তারা নির্বাচন চায় না বা ভিন্ন পথে ক্ষমতায় আসতে চায়।
মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, বিনামূল্যে করোনা টিকা দেওয়াসহ অবকাঠামো উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তারা বলে আওয়ামী লীগ নাকি দেশের সর্বনাশই করেছে। তাহলে মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন কী তাদের সর্বনাশ করা? এগুলো কী মানুষের ক্ষতি সাধন করা? তাদের জিজ্ঞেস করতে হবে ক্ষতিটা দেখলো কোথায়?
শেখ হাসিনা বলেন, একইদিন ১০০ সেতু ও ব্রিজ এবং ১০০টি সড়ক উন্নত ও উদ্বোধন করা কী সর্বনাশ? এগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরা উচিত। আমরা আছি জনগণের পাশে আর তারা আছে ধ্বংস করতে।
আগামীতে গোপালগঞ্জে এলে আগে কোটালিপাড়ায় যাবেন বলে নেতাকর্মীদের জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এসময় আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের নেতাদের টুঙ্গীপাড়া সফরের অনুরোধ জানান দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আপনাদের সবার দাওয়াত থাকলো, যে কোনও টুঙ্গীপাড়ায় আসতে পারেন। আমাদের আতিথিয়েতা নিতে পারেন।
এদিকে সভায় নতুন বছরের দলীয় কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়, সেগুলো ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর মধ্যে রয়েছে- ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, সাত মার্চই ঐতিহাসিক ভাষণ,১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসসহ নানা কর্মসূচি।
এর আগে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের নব-নির্বাচিত জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের নেতারা। দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শনিবার ১২টার পরে শ্রদ্ধা জানান তারা।
বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর টুঙ্গীপাড়া ও কোটালিপাড়ায় ২৮টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এসব প্রকল্পের মধ্যে ১৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। বাকি ৯টি প্রকল্প শিক্ষা ও গণপূর্ত বিভাগ এবং টুঙ্গীপাড়া পৌরসভা বাস্তবায়ন করেছে।
শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গীপাড়ায় এসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর সড়কপথে খুলনায় গিয়ে মায়ের নামে কেনা সম্পত্তি ঘুরে দেখেন তিনি।
খুলনা থেকে আবার সড়কপথে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় ফিরে নিজ বাসভবনে রাত্রিযাপন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে টানা দশমবারের মতো দলটির সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। এই সম্মেলনে টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ওবায়দুল কাদের। কাউন্সিলে প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় কমিটিসহ বিভিন্ন কমিটি মনোনীত করেন শেখ হাসিনা।