ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ইসরাইলি হত্যাকাণ্ডে ইসরাইলকে কঠোর জবাবদিহির কাঠগড়ায় তুলতে এবং নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্ত পরিচালনার আহ্বান নিরাপত্তা পরিষদ জানালে এ বিবৃতি আটকে দিয়েছে ওয়াশিংটন।
মঙ্গলবার কূটনীতিকরা এ কথা জানিয়েছেন। খসড়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করার অধিকার খর্ব করে ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইল হত্যা ও চরম বর্বরতা চালিয়েছে। ইসরাইলকে কঠোর জবাবদিহির কাঠগড়ায় তুলতে এ হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্ত পরিচালনার আহ্বান জানায় নিরাপত্তা পরিষদ।
তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরকে ইঙ্গিত করে নিরাপত্তা পরিষদ আরও জানায়, পবিত্র শহর জেরুজালেমের অবস্থান ও ভৌগোলিক পরিবর্তনে প্রভাব ফেলে এমন কোনো সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ এখানে গ্রহণযোগ্য নয়।’ পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি নষ্ট করে উত্তেজনা না বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানানো হয়।
এএফপি জানায়, সোমবার জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস উদ্বোধন করা হয়। ফিলিস্তিনিদের নাকবা দিবসের আগের দিন দূতাবাস উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে চলমান ভূমি দিবসের বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়ে ওঠে। এদিন ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৬০ জন নিহত ও আড়াই হাজার ফিলিস্তিনি আহত হন। ২০১৪ সালে গাজায় ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর একদিনে এত সংখ্যক ফিলিস্তিনি নিহতের ঘটনা এটাই প্রথম।
ইসরাইলের এ হত্যাকাণ্ডকে মানবাধিকারের সর্বোচ্চ লঙ্ঘন এবং একে যুদ্ধাপরাধ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তুরস্ক এ ঘটনাকে গণহত্যা বলে বর্ণনা করেছে। মিসর অভিযোগ করেছে, ইসরাইল ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনার জেইদ রাদ আল হুসেইন বলেছেন, যারা এ জঘন্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী, তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। জার্মানিও এ হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে। জার্মান সরকারের মুখপাত্র স্টিফেন সেইবার্ট বলেন, সীমান্ত এলাকায় রক্তক্ষয়ী এ সংঘাত স্বাধীন তদন্তের দাবি রাখে।
এসব অভিযোগ সত্ত্বেও তদন্ত কাজ আটকে দিতে তৎপর হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গাজা ও ফিলিস্তিনে ইসরাইলি সেনারা বর্বতা চালালেও বারবার এর দায়ভার হামাসের ওপর চাপাচ্ছে ওয়াশিংটন। সোমবারের হত্যাকাণ্ডেও হামাসকে দোষী করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার রাতে সাংবাদিকদের হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র রাজ শাহ বলেন, নৃশংস মৃত্যুর নেতৃত্ব দিচ্ছে হামাস। আমরা বরং সহিংসতা বন্ধ করতে চাচ্ছি।
জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস উদ্বোধনের ঘটনা প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি)। ৫৭ রাষ্ট্রের এ জোট জানায়, যুক্তরাষ্ট্র অন্যায়ভাবে জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তর করেছে। এটি আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জেদ্দাভিত্তিক সংস্থাটি জানায়, মার্কিন প্রশাসন অবৈধভাবে এ দূতাবাস খুলেছে। এ ঘটনা আন্তর্জাতিক আইন এবং ন্যায্যতার লঙ্ঘন। জেরুজালেম প্রশ্নে আন্তর্জাতিক কমিউনিটির অবস্থানের প্রতি সুস্পষ্ট অবজ্ঞাও এটি।
বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, দূতাবাস খোলার এ কার্যক্রমকে জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান এবং এ ঘটনাকে মার্কিন প্রশাসনের অবৈধ সিদ্ধান্ত হিসেবে মনে করছে ওআইসি। পাশাপাশি এ অ্যাকশনকে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ঐতিহাসিক, বৈধ, প্রাকৃতিক এবং জাতীয় অধিকারের ওপর ‘হামলা’ হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ধরনের কার্যকলাপ জাতিসংঘের অবস্থান ও আন্তর্জাতিক আইনের শাসনের প্রতি অবজ্ঞা। এটা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর প্রকাশ্য অপমানের শামিল।
ওআইসি জানায়, মার্কিন প্রশাসন নিজের করা প্রতিশ্র“তিরই বিরুদ্ধাচরণ এবং ফিলিস্তিনি নাগরিকদের বৈধ অধিকারের প্রতি চরম অবজ্ঞা ও অশ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছে। তারা এটাও স্পষ্ট করেছে যে, আন্তর্জাতিক আইন ও অধিকার এবং মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি তাদের কোনো শ্রদ্ধা নেই। এর অর্থ এই, ফিলিস্তিনে ভবিষ্যৎ শান্তি প্রক্রিয়ার উদ্যোগ বর্তমান মার্কিন প্রশাসন ব্যর্থ করছে।