রংপুর প্রতিনিধি: রংপুরের চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে শিশুর মৃত্যুর খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলায় গুরতর আহত হয়েছেন এশিয়ান টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সন একেএম সুমন (২০)। বুধবার রাত ৯টার দিকে নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন জনসেবা ক্লিনিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
সুমনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ক্লিনিকের মালিক ডা. মোছাদ্দেক হোসেন ও স্থানীয় কাউন্সিলর মিজানুর রহমান মিজুর ইন্ধনে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
আহত সুমনের সহকর্মী, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শাল্টিগোপালপুর গ্রামের আব্দুল বাতেন মিয়ার ছেলে বাবুর (৪) হার্নিয়া অপারেশন করার জন্য গত সোমবার সকালে তাকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ওইদন সন্ধ্যায় বাবুর অপারেশন করেন চিকিৎসক মোছাদ্দেক হোসেন। এরপর থেকে বাতেনকে তার ছেলের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
এদিকে তিনদিনেও ছেলেকে দেখতে না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন বাতেন মিয়া। বিষয়টি সংবাদকর্মীদের নজরে এলে বুধবার সন্ধ্যায় সংবাদ সংগ্রহের জন্য ওই ক্লিনিকে যান এশিয়ান টিভির প্রতিবেদক ও ক্যামেরাপার্সনসহ আরও কয়েকজন সাংবাদিক। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ক্লিনিকের মালিক ডা. মোছাদ্দেক স্থানীয় ২২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিজানুর রহমান মিজুকে বিষয়টি অবগত করেন। খবর পেয়ে মিজু তার লোকজন নিয়ে ক্লিনিকে যান।
এ সময় উপস্থিত সংবাদকর্মীরা বাবুর অবস্থান ও তার মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়ে ক্লিনিকের মালিক ডা. মোছাদ্দেক হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেন মিজু ও তার সঙ্গে থাকা লোকজনেরা। এক পর্যায়ে ক্লিনিকের সামনে অবস্থানরত এশিয়ান টিভির ক্যামেরাপার্সন সুমনকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন মিজুর লোকজন। এতে সুমন মাটিতে পড়ে গেলে মিজু ও ডা. মোছাদ্দেক ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে সহকর্মীরা সুমনকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এদিকে সুমনের উপর হামলার ঘটনা জানাজানি হলে অন্যান্য গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এসময় মিজুর লোকজনসহ ক্লিনিকের অন্যান্য কর্মচারীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সাংবাদিকদের উপর হামলার জন্য মারমুখি অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।
এ বিষয়ে বাতেন মিয়া জানান, তিনদিন আগে অপারেশন হয়েছে। ছেলেকে দেখতে চাইলেও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ছেলের সঙ্গে তার দেখা করতে দেয়নি। ছেলে কোথায় আছে এ বিষয়ে তাকে কিছু বলাও হচ্ছে না।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, সুমন তার মাথার পিছনে ও ঘাড়ে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না।
কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল মিঞা বলেন, বিষয়টি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। শিশুর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া এশিয়ান টিভির ক্যামেরাপার্সন সুমনের উপর হামলার ঘটনায় যারাই জড়িত থাক না কেন তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।