Connect with us

জাতীয়

রাজধানীতে যে দুর্ধর্ষ ব্যাংক লুট নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল

Published

on

২০০৮ সালের ৫ই জানুয়ারি, আজ থেকে ঠিক ১৫ বছর আগে বাংলাদেশের ঢাকায় এক দুর্ধর্ষ ব্যাংক লুটের ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। ঘটনাটি ঘটেছিল ঢাকার অন্যতম বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের শুক্রাবাদ শাখায়। সেই অভিনব কায়দায় চুরির ঘটনা যে কোন লোমহর্ষক থ্রিলার গল্পকেও হার মানাবে।

খুবই পেশাদার চোরের কাজ-

সে সময় প্রথম আলোর ক্রাইম বিটের প্রধান ছিলেন কামরুল হাসান। ৬ই জানুয়ারি রোববার দুপুরের দিকে তিনি খবর পান শুক্রাবাদে ব্র্যাক ব্যাংকের বাইরে বেশ হট্টগোল হচ্ছে। ব্যাংকটি ছিল হোটেল নিদমহল ভবনের দোতলায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি দেখেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা তাদের কার্যালয়ের দরজা জানালা বন্ধ করে আছেন এবং বাইরে গ্রাহকরা হইচই করছেন।

গ্রাহকদের থেকে তিনি জানতে পারেন যে ব্যাংকের লকার থেকে মূল্যবান জিনিষপত্র চুরি গিয়েছে এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের কেউ গ্রাহকদের এ বিষয়ে কোন তথ্য দিচ্ছে না। “কিছুক্ষণ পর পর দেখা যায় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বেরিয়ে আসছেন, তাদের কাছে কিছু জানতে চাইলেই তারা পরিচয় গোপন করছিলেন। তাদের চেহারায় ভয়, উদ্বেগ ছিল।” বলেন মি. হাসান।

তবে ব্যাংকের ওই শাখার তৎকালীন ম্যানেজার গ্রাহকদের শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কেউই সাংবাদিকদের তাৎক্ষণিকভাবে কোন তথ্য জানায়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লকারে চুরির বিষয়টি নিশ্চিত করে। মি. হাসান পুলিশের সঙ্গে ব্যাংকের লকার রুমে যান।

ব্যাংকের লকার রুমের ছাদে বিশাল গর্ত-

সেখানে তিনি দেখতে পান – ওই লকার রুমের ছাদে তিন ফুট বাই তিন ফুট মাপের এক বিশাল গর্ত কাটা এবং তার ওপর বরাবর দেখা যাচ্ছে হোটেলটির একটি কক্ষ। চুরি হয়েছিল হোটেলের সেই রুমটি থেকেই।

“লকার রুমটা বেশ ছোট। স্টিলের লকারগুলো দেয়ালের সাথে লাগানো ছিল, মাঝখানের অংশটা ফাঁকা। সেই মাঝ বরাবর ছাদে তারা বড় করে কেটেছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল খুবই পেশাদার চোরের কাজ এটা।”

পরে তিন তলায় হোটেলে উঠে জানতে পারেন, গর্তটি ছিল ১০৩ নম্বর কক্ষে খাটের নীচে। এ কারণে হোটেল কর্মীরাও বিষয়টি আঁচ করতে পারেননি। তারা প্রতিদিন একটু একটু করে কাটতো এবং কাটা টুকরোগুলো বাইরে নিয়ে ফেলে দিতো যেন কেউ টের না পায়। মেঝেটাও কার্পেট দিয়ে ঢাকা ছিল।-সে সময় সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানিয়েছিল পুলিশ।

পরে পরিকল্পনা-মাফিক শনিবার ব্যাংকের ছুটির দিন লকারের কক্ষে লুটপাট চালিয়ে রোববার ভোরে হোটেল ছেড়ে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। শনিবার রাতে ঠিক কয়টার সময় চুরির ঘটনাটি ঘটে তা জানা যায়নি।

ব্যাংক যেভাবে টের পেল-

ব্যাংকের কর্মকর্তারা বিষয়টি টের পান রোববার সকালে। বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোরের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রোববার সকালে রেজোয়ানা খুকু মনি নামে একজন গ্রাহক ব্যাংকে এসে তার লকারটি ব্যবহার করতে চান। তখন এক ব্যাংক কর্মকর্তা আগে লকার কক্ষে ঢোকেন তার পেছনেই ছিলেন ওই গ্রাহক।

ব্যাংক কর্মকর্তা ভেতরে ঢুকেই প্রথমবারের মতো ডাকাতির বিষয়টি আবিষ্কার করেন এবং সাথে সাথে গ্রাহককে ঢুকতে না দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। তৎক্ষণাৎ বিষয়টি ব্যাংক ম্যানেজারকে জানানো হলে, লকার কক্ষে গ্রাহকদের প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

বিষয়টি চেপে যাওয়ায় ওই গ্রাহকের সন্দেহ হয় এবং তিনি হইচই শুরু করেন যে কেন তাকে তার লকার দেখতে হবে না। “এখানে কি চুরি হয়েছে?” এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর তাকে কেউ দেয়নি।

বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোরকে দেয়া সাক্ষাতকারে গ্রাহক রেজোয়ানা খুকু মনি জানিয়েছিলেন, “রোববার সকালে ব্যাংকে আসার পর কাস্টমার সার্ভিস অফিসার চৌধুরী হাসান জামাল তাকে বলেন, নতুন লকারের কাজ চলছে। আপাতত সেখানে যাওয়া যাবে না। উনারা সেদিন পুরো বিষয়টি গোপন করে গেছেন। এজন্য আমার সন্দেহ, ব্যাংকের লোকজনই এই এর সঙ্গে জড়িত।”

ওই লকারে প্রায় ৮৫ ভরি অলঙ্কার ছিল বলে জানান তিনি। আরেক গ্রাহক আহসান উল্লাহ ভূঁইয়া দাবি করেছিলেন তার লকারে, ১০০ ভরিরও বেশি স্বর্ণালঙ্কার ছিল। ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী জানান, তার লকারে একটি সোনার রোলেক্স ঘড়িসহ প্রায় সাড়ে তিনশ ভরি অলঙ্কার ছিল। লকার গ্রাহক মামুন আলী অভিযোগ করেন, ব্যাংকে তিনি ফোন করলে তাকে জানানো হয় চুরির খবর সত্যি নয়।

কেউ কোন তথ্য দিচ্ছিলেন না-

সে সময় ভোরের কাগজের ব্যাংক বিটের প্রতিবেদক ছিলেন সুজয় মহাজন। তিনি ঘটনাস্থলে তার কিছু অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি জানান, গ্রাহকদের মূল অভিযোগ ছিল এটাই যে কেউ তাদের কোন পরিষ্কার তথ্য দিচ্ছিলেন না।

“গ্রাহকরা খুব ক্ষুব্ধ ছিলেন। তারা কোথায় প্রতিকার পাবেন, আইনগত সুরক্ষা পাবেন, সেটা বুঝে উঠতে পারছিলেন না। ব্যাংকাররাও কিছু বলছিলেন না।” তিনি বলেন।

কিছুক্ষণের মধ্যে অন্যান্য গ্রাহকরা ব্যাংকটিতে ভিড় করতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় ব্যাংকের ওই শাখায় সব ধরনের লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে তৎকালীন ব্র্যাক ব্যাংকের কর্মকর্তা আবেদুর রহমান জানিয়েছিলেন, “পুলিশের নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা বিষয়টি গ্রাহকদের জানাননি। পুলিশ বলেছে, তদন্তের স্বার্থে বুধবারের আগে লকার রুমে গ্রাহকদের যাওয়া চলবে না।

চুরির পরিমাণ কতো ছিল-

৬ই জানুয়ারী রাতেই ব্র্যাক ব্যাংকের ধানমণ্ডি শাখার ম্যানেজার মনিরুল ইসলাম মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তখনকার গণমাধ্যমের খবরে বলা হয় যে, সংঘবদ্ধ চোর ভুয়া নাম, ঠিকানা ব্যবহার করে ব্যাংকের ঠিক উপরের চারটি রুম ভাড়া নেয়৷

সেখানেই তারা একমাস ধরে অবস্থান করে চুরির নীল নকশা করে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সামনে ব্যাংক কর্মকর্তা জানান ডাকাতরা ব্যাংকের ১৩২টির মধ্যে ৭৫টি লকার ভেঙেছে। এর মধ্যে ৬০টি লকারে ভোক্তাদের মালামাল ছিল।

নিয়ম অনুযায়ী, গ্রাহকরা লকারে কি রাখবেন তা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানাতে বাধ্য নন। এ কারণে ঠিক কত টাকার মালামাল খোয়া গেছে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। কোনও কোনও ভাঙা লকারে পাসপোর্ট, জমির দলিল বা সঞ্চয়পত্র থাকলেও ডাকাতরা সেগুলো নেয়নি।

মূলত অলঙ্কারের মতো দামি জিনিস সরানোই তাদের লক্ষ্য ছিল। কামরুল হাসান জানান, চুরির ধরন দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে ছুটির দিনে চুরি করে পালানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। যেন খবর ছড়ানোর আগেই তারা গা ঢাকা দিতে পারে।

এক মাস হোটেলে অবস্থান, অতঃপর..

মামলা দায়ের পর পরই পুলিশ হোটেল নিদমহলের চার কর্মীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। হোটেল নিদমহলের তৎকালীন রিসেপশনিস্ট ওয়াসিম চৌধুরী সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোরকে জানিয়েছিলেন, ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে সালাম, আবদুল ও জালাল নামের তিন ব্যক্তি পহেলা ডিসেম্বর অর্থাৎ চুরির এক মাস আগে হোটেলের চার তলার একটি কক্ষ ভাড়া নেয়।

নিবন্ধন বইয়ে তারা চট্টগ্রামের হাটহাজারীর একটি ঠিকানা ব্যবহার করে। তাদের বয়স ৪০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে ছিল বলে ধারণা করা হয়। পরদিন অর্থাৎ ২রা ডিসেম্বর তারা তিনতলার ১০৩ ও ১০৪ নম্বর কক্ষে চলে আসে।

ভেতর দিয়ে চলাচলের জন্য পাশাপাশি ওই দুটি কক্ষের মাঝে একটি দরজা ছিল। একমাসের বেশি সময় তারা ওই দুটি কক্ষেই অবস্থান করে। এরপর রোববার ভোরে ওই তিনজন হোটেল ছেড়ে চলে যায়।

ব্যবসার প্রয়োজনে ও সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকেটের জন্য এতো দীর্ঘ সময় থাকার কথা তারা হোটেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। মি. ওয়াসিম জানিয়েছিলেন, “তারা বিভিন্ন অজুহাতে রুম বয়দের খাটের নিচের অংশ পরিষ্কার করতে বাধা দিতেন।”

পরবর্তীতে কী হয়?

ওই ঘটনার পরে ব্যাংকের শাখাটি তুলে দেয়া হলেও নিদমহল হোটেলটি এখনও আছে। জানা যায়, ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সে সময় বেশ কঠোর অবস্থানে যায় এবং তদন্ত করে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

অন্যদিকে ঘটনার পরপর গোয়েন্দা পুলিশ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অন্তত ২৩ জনকে গ্রেফতার করে বলে খবর প্রকাশ হয়েছে। সেইসাথে প্রায় আড়াইশ ভরি স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধারের দাবিও করে পুলিশ। ওই বছরে মার্চে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে চুরির মূল হোতা সন্দেহে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তৎকালীন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক একেএম নাসিরুল্লাহ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ডাকাতির পরিকল্পনা এবং তাতে অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করে।”

“তারা কয়েকজন মিলে হোটেলের তৃতীয় তলা প্রায় সবকয়টি কক্ষ ভাড়া নেয়। সুবিধাজনক সময়ে মেঝে কেটে রশি বেয়ে লকার কক্ষে ঢোকে। মালামাল লুট করে রশি বেয়ে আবার হোটেলের কক্ষে ওঠে। ওই কক্ষে বসেই লুণ্ঠিত মালামাল ১৯ ভাগ করা হয়।” তিনি বলেন।

আস্থার ঘাটতি-

ঢাকায় ১৫ বছরের আগের এই ঘটনা ব্যাপক চাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছিল। বিশেষ করে ব্যাংকের লকারের নিরাপত্তা নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে বড় ধরণের আস্থার ঘাটতি দেখা দেয়। ব্যাংকের গ্রাহকরা ভয়ে, আতঙ্কে লকার থেকে তাদের জিনিষপত্র সরিয়ে নিতে শুরু করেন।

কামরুল হাসান জানান “এটা আমার কেরিয়ারের খুবই এক্সক্লুসিভ ঘটনা ছিল। ছাদ কেটে ব্যাংকে চুরির কথা মানুষ ভাবতে পারেনি। মানুষ বাসায় নিরাপদ না বলেই ব্যাংকের লকার ভাড়া করে। সেখানেও চুরির ঘটনায় তারা একরকম অসহায় হয়ে পড়েন।?”

এদিকে যারা তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়েছেন বলে দাবি করেন তাদের বেশিরভাগই কিছু ফেরত পাননি বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ জানান। আবার এমনও অনেকে আছেন যারা মূল্যবান সম্পদ হারিয়েছে দাবি করলেও সেগুলো ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করেননি।

এ নিয়ে সুজয় মহাজন জানান, “লকার ভাড়া করলে সেটার ভেতরে কী থাকে তার কোন তথ্য ব্যাংককে দেয়ার নিয়ম নেই। একারণে লকার থেকে কিছু খোয়া গেলে সেটা দাবি করার মতো আইনি সুরক্ষা ছিল না। আবার অনেকে তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে ভয়ে তাদের জিনিস দাবিই করতে আসেনি।”

সব মিলিয়ে সে সময় লকারে মালামাল রাখা সংক্রান্ত নীতিমালা বেশ সমালোচনার মুখে পড়ে। ওই ঘটনার বিষয়ে জানতে ব্র‍্যাক ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোন সাড়া মেলেনি।

Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Highlights

হামলা ও লুটপাট, হেযবুত তওহীদের সদস্যদের জানমালের নিরাপত্তার দাবি

Published

on

By

নোয়াখালীতে অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদ সদস্যদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট, গাইবান্ধা, শেরপুর, জয়পুরহাট, পঞ্চগড়, পাবনা, সুনামগঞ্জসহ ৮টি কার্যালয়ে হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি। আজ শনিবার (১০ আগস্ট ২০২৪) আন্দোলনটির মুখপাত্র মো. মশিউর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল শুক্রবার রাতে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার পোড়করা গ্রামে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের ৩০ একর জমি থেকে সংগ্রহকৃত আটটি খড়ের গাদা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বলে উল্লেখ করা হয়। এর আগে গত ৫ আগস্ট আইনশৃঙ্খলার অবনতির সুযোগে একটি উগ্রবাদী গোষ্ঠী হেযবুত তওহীদ সদস্যদের বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ২ কোটি টাকার সম্পদ লুটপাটের ঘটনা উল্লেখ করে সোনাইমুড়ীতে হেযবুত তওহীদের বিভিন্ন প্রকল্পে হামলার পাঁয়তারা হচ্ছে জানিয়ে এর বিরুদ্ধে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে মশিউর রহমান বলেন, আন্দোলন প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে ধর্মের অপব্যবহারকারী উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো নানা মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়েছে। ফলে আমাদের কর্মীদেরকে অবর্ণনীয় নির্যাতন নিপীড়ন ও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। উগ্রবাদী গোষ্ঠী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতার পিতৃনিবাস করটিয়া জমিদার বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। মাদারীপুর, কুষ্টিয়া, নোয়াখালী, পাবনায় হমালা চালিয়ে নৃশংসভাবে সদস্যদের হত্যা করেছে। এখন পর্যন্ত আমাদের উপর সহস্রাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। আইন হাতে তুলে না নিয়ে আমরা আইনের দ্বারস্থ হয়েছি। কিন্তু হামলাকারীরা ধর্মের মুখোশ পরে পার পেয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সালে হেযবুত তওহীদের বর্তমান এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে অবস্থিত তাঁর নিজ বাড়ির আঙিনায় একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। স্থানীয় উগ্রগোষ্ঠী ‘মসজিদ নয়- গির্জা বানাচ্ছে’ গুজব তুলে দিয়ে তারা ধর্মান্ধ মানুষকে উস্কে দিয়ে সেদিন তাঁর বাড়িঘরসহ অন্যান্য সদস্যদের বাড়িঘরও জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। মসজিটি ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। এরপর মসজিদের নির্মাণকাজে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে আগত দুই তরুণ সদস্যকে প্রকাশ্য দিবালোক জবাই করে হত্যা করে। তাদের হাত পায়ের রগ কাটে, চোখ তুলে ফেলে এবং দেহ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

তিনি বলেন, ২০১৬ সালের হামলার পর হাল ছেড়ে না দিয়ে হেযবুত তওহীদের এমাম তাঁর গ্রামের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য অন্তত ৫০টির মতো উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। তার মধ্যে রয়েছে কয়েকটি গরুর খামার, মাছের ঘের, একটি বিদ্যালয়, চার তলা মসজিদ কমপ্লেক্স, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ইত্যাদি। সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রমিক কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় এক হাজারের মতো সদস্য তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে ওই গ্রামেই বসবাস করছেন। বর্তমানের অস্থিতিশীল পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে আবারো উগ্রবাদীরা ২০১৬ সালের মত একটি তাণ্ডব চালিয়ে গণহত্যার ষড়যন্ত্র করছে। হেযবুত তওহীদের এমামের গ্রাম চাষীরহাট থেকে এক বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে বিশেষ করে লাকসাম উপজেলার অন্তর্গত বিপুলাসার বাজারের নিকটে আমাদের গার্মেন্টস কারখানা, খামার ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত লোকজন বাসা ভাড়া করে থাকেন। অনেকে সেখানে মুদির দোকান করেন, রিকশা গ্যারেজ ইত্যাদিতে কাজ করেন। ৫ আগস্ট সরকারের পতনের দিন দুর্বৃত্তরা তাদের প্রত্যেকটি বাড়িতে লুটপাট চালিয়েছে, গ্যারেজ লুট করেছে, দোকান লুট করেছে, বাড়িতে আগুন দিয়েছে। পঞ্চাশটি পরিবারের প্রায় ২ কোটি টাকার সম্পদ তারা লুট করে পরিবারগুলোকে সর্বস্বান্ত করেছে।

এদিন হেযবুত তওহীদের শেরপুর, জয়পুরহাট, পাবনা, সুনামগঞ্জসহ মোট ৮টি কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের রাজনীতির সাথে কোন সম্পৃক্ততা অতীতেও ছিল না, এখনও নেই। আমাদের আইন ভঙ্গ করার কোন রেকর্ড নেই। আমরা উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কাজ করি তাই এই উগ্রবাদী গোষ্ঠীটি মাননীয় এমামের বাড়িসহ হেযবুত তওহীদের সদস্যদের বাড়িতে হামলা চালাতে ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলো লুণ্ঠন করার জন্য উসকানি দিয়ে যাচ্ছে। অনলাইনে তারা শত শত পোস্ট করেছে এ জাতীয় হুমকি দিয়ে। আমরা সেখানে ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে দিনানিপাত করছি।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট সোনাইমুড়ি থানায় হামলা করা হয়েছে এবং সেখানে চারজন পুলিশসহ সাত জন মানুষ নিহত হয়েছে। সেদিন বাজারে বাজারে হামলা ও লুটপাট হয়েছে। সেদিন এবং তার পরেরদিন এই উগ্রবাদী গোষ্ঠীটি বারবার চাষীরহাট বাজারে এসে হেযবুত তওহীদকে এলাকা থেকে উচ্ছেদ করার হুমকি দিয়ে গেছে। তবে এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। কিন্তু অনলাইনে ও অফলাইনে ষড়যন্ত্র এখনও অব্যাহত রয়েছে। আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, সোনাইমুড়ীতে হেযবুত তওহীদের এমামের বাসগৃহকে কেন্দ্র করে একটা ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে। সোনাইমুড়ীসহ সারাদেশে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

এমতাবস্থায় সরকারের নিকট হেযবুত তওহীদের পক্ষ থেকে ৪টি দাবি জানান মশিউর রহমান। দাবিগুলো হলো- ১. আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দ্রুত হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হোক। ২. স্থানীয় বাজারে সেনাবাহিনী মোতায়ন করা হোক। ৩. বিপুলাসারে ৫ তারিখে সংঘটিত লুটপাটে আমাদের অর্ধশত পরিবারের সদস্যরা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। বিনা কারণে যারা তাদের এই ক্ষতিসাধন করল তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। ৪. এখনও প্রতিমুহূর্তে গুজব সৃষ্টি করে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে সে বিষয়ে সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

উল্লেখ্য অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদ সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে মানবতার কল্যাণে নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করে যাবতীয় উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, নারী নির্যাতন ইত্যাদির বিরুদ্ধে ইসলামের প্রকৃত আদর্শ প্রচারের কাজ করছে। উপমহাদেশের প্রখ্যাত পন্নী পরিবারের সন্তান এমামমুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী ১৯৯৫ সালে হেযবুত তওহীদ প্রতিষ্ঠা করেন। ধর্মীয় সংস্কারপন্থী আন্দোলন হেযবুত তওহীদ একাগ্রভাবে ইসলামের সুমহান আদর্শকে জনগণের মধ্যে প্রচারের কাজ করে আসছে। আদর্শ প্রচারের লক্ষ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অন্তত দুই লক্ষাধিক জনসভা, সেমিনার, র‌্যালি, মানববন্ধন করে আন্দোলনটি।

Continue Reading

Highlights

রাজনীতি করতে না চাওয়া সাকিব কিনলেন আ.লীগের মনোনয়ন!

Published

on

খেলা ডেস্ক: আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী ডামাডোল শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে তিনটি আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। নির্বাচনে অংশগ্রহণে তার আগ্রহের বিষয়টি অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। যা মনোনয়ন ফরম নেওয়ার মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পেয়েছে। এরপরই একটি ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল হয়েছে সাকিবের। ২০১৩ সালে দেওয়া ওই পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘জীবনেও রাজনীতি করব না।’

গতকাল (শনিবার) সন্ধ্যায় এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের মনোনয়ন ফরম নেওয়ার খবর প্রকাশ হতেই সেই পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই শেয়ার করছেন। কেউবা সে পোস্টের কমেন্টবক্সে সাকিবের সমালোচনায় মেতেছেন। এর আগে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সাকিবের পক্ষে ফরমগুলো সংগ্রহ করা হয়। আসনগুলো হলো— ঢাকা-১০, মাগুরা-১ ও ২।

মূলত মনোনয়ন ফরম নেওয়ার মাধ্যমে সরাসরি রাজনীতিতে অংশগ্রহণের প্রক্রিয়ায় রয়েছেন সাকিব। যা তার আগের দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেই অনেকেই বিষয়টি নতুন করে সামনে নিয়ে আসছেন। ২০১৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০.১৪ মিনিটে ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে সাকিব লিখেন, ‘আমি রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছি না এবং আমার জীবনে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কোনো ইচ্ছাও নেই।’

ওই সময় সাকিব বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের অনুরোধে একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। এরপরই তার রাজনীতিতে যোগ দেওয়া নিয়ে আলোচনার ডালপালা মেলে। তখন নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে সাকিব ওই স্ট্যাটাস দেন। তবে এক দশকের বেশি সময় পর নিজের অবস্থান বদলাতে দেখা গেলো তাকে।

ফেসবুক পোস্টে সাকিব আরও লিখেন, ‘আমাকে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে দিন। আমি রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছি না এবং আমার জীবনে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কোনো ইচ্ছাও নেই। আমাকে বোর্ড সভাপতি (পাপন) অনুরোধ করায় আমি ক্রিকেট দলের পক্ষ থেকে ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম এবং সেখানে রাজনীতি নিয়ে একটি শব্দও বলিনি। তাই সবাইকে বলব যে– আমাদের মিডিয়াকে বিশ্বাস করবেন না। আশা করি নিজের বিষয়টা পরিষ্কার করতে পেরেছি।’

এর আগে গত একাদশ সংসদ নির্বাচনেও সাকিব নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন বলে গুঞ্জন শোনা যায়। ওই সময় সাকিব না পারলেও, নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য হন আরেক সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। এরপর থেকে সাকিবও নির্বাচনে যাবেন বলে অনেকদিন ধরেই জোর শোরগোল চলছিল। এশিয়া কাপ চলাকালে অনেকটা হুট করে সাকিব দল রেখে দেশে চলে আসেন। ওই সময় নির্বাচনী কাজেই সাকিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন বলে আলোচনা রয়েছে!

Continue Reading

Highlights

উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের মানুষকে অভিশাপমুক্ত করেছি : প্রধানমন্ত্রী

Published

on

এক্সপ্রেস ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করেছি। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। সেইসঙ্গে মানুষের গড় আয়ুও বেড়েছে আমাদের সরকারের আমলে। আমরা উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের মানুষকে অভিশাপমুক্ত করেছি।

আজ রোববার (২৯ আগস্ট) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক দক্ষিণ আফ্রিকা সফর সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ব্রিকস সম্মেলনে অংশ নেওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এ বিষয়গুলো আমি সম্মেলনে তুলে ধরেছি।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসার আমন্ত্রণে ২২ থেকে ২৪ আগস্ট জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলনে শেষে গত রোববার তিনি দেশে ফিরেছেন।

Continue Reading