নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনার কারণে বন্ধ থাকা স্কুল-কলেজ শিগগিরই খুলে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এসময় তিনি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে বাড়ির চারপাশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা খুব তাড়াতাড়ি স্কুল কলেজ খুলে দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছি। সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা কর্মরত আছেন তাদের পরিবারের সদস্যদেরও টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপনের মৃত্যুতে সংসদে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
এর আগে ভোরে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হাসিবুর রহমান স্বপন তুরস্কের ইস্তাম্বুলের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে করোনার টিকার কোনো সমস্যা নেই। আমরা যেখান থেকেই পারি কিনে আনছি।’
তিনি বলেন, বিভিন্ন সংস্থা ও স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে যারা কাজ করে যাচ্ছে শুধু তাদের না, তাদের বাড়ির কাজের লোকজন, তাদের পরিবারের ড্রাইভারসহ অন্য সবাই যেন টিকা পায়, সে ব্যবস্থাটাও আমরা নিচ্ছি। যাতে কোন ভাবেই আর সংক্রমণ হতে না পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লুউএইচও)-র নির্দেশনা মেনে স্কুলের ছেলেমেয়েদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যার জন্য কিছু ফাইজারের টিকা এরইমধ্যে দেশে এসে পৌঁছাচ্ছে। আরো পৌঁছাবে এবং মর্ডানার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। তাছাড়া, অন্যান্য টিকাও আসছে। ইতোমধ্যে টাকাও পাঠানো হয়েছে, প্রায় ৬ কোটি টিকার টাকা আমরা দিয়ে দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে এগুলো আসতে থাকবে।
তিনি বলেন, এগুলো রাখা, ব্যবহারের জন্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিকল্পনা আমাদের নিতে হচ্ছে। সেগুলো আমরা করে যাচ্ছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে টিকা দেওয়ার পরেও অনেকের করোনা হয়। যদিও সেটা সেরকম মারাত্মক হয় না। সেজন্যই সবাইকে সাবধানে থাকার অনুরোধ করেন তিনি। বিশেষ করে যাদের শ^াস কষ্ট বা হার্টের অসুখ বা ব্রংকাইটিস বা কিডনীর সমস্যা রয়েছে তাদেরকে বেশি সাবধানে থাকার অনুরোধ করেন। কেননা, এদের কারো করোনা হয়ে ভাল হয়ে গেলেও পরবর্তীতে জীবন শংকা দেখা দিতে পারে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ, হুইপ আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, শামসুল হক টুকু এবং আব্দুল আজিজ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এবং সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা এবং বিএনপি’র সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ ও আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনা পর্ব শেষে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
চলমান সংসদের কোনো আইনপ্রণেতা মারা গেলে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শেষে সংসদের বৈঠক মুলতবির রেওয়াজ থাকায় এর পরই স্পিকার সংসদের এদিনের অধিবেশন মুলতবি করেন। এই নিয়ে গতকালের পর আজও সংসদ মুলতবি হল। গতকাল সাবেক ডেপুটি স্পিকার, সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, কুমিল্লা-৭ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফের স্মরণে শোক প্রস্তাবের পরই অধিবেশন মুলতবি করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার প্রকোপ কিছু কমেছে। কিন্তু, ডেঙ্গুর প্রকোপ রয়েছে। ডেঙ্গুতেও মানুষ জন অসুস্থ হচ্ছে। সবাইকে নিজের আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কোথাও যেন পানি জমে না থাকে। শুধু ঘরবাড়ি নয় আশপাশের বাগান, বাড়ির ছাদ, ফুলের টব, এয়ার কমিন্ডশনের পানি জনে যেন মশা জন্ম নিতে না পারে। সবাইকে মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এই ডেঙ্গুর মশাটা কিন্তু ঘরেই বেশি হয়।
এখানে শুধু ওষুধ দিলেই হবে না নিজেদেরও উদ্যোগ নিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নিজেকে সজাগ রাখতে হবে। সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নিয়েছে এবং সরকারের পক্ষ থেকে যা যা উদ্য্যোগ নেয়ার আমরা তা নিচ্ছি, বলেন তিনি।
করোনার প্রকোপ কিছুটা কমলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে সকলকে সতর্ক করে তিনি বলেন, হয়তো লকডাউন এখন তুলে নেয়া হয়েছে কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে আমি সবাইকে অনুরোধ করবো। একসঙ্গে যেন বেশি মানুষের সমাবেশ না হয়, মাস্ক পড়ে থাকা, হাত ধোয়া, ভাপ নেয়া এবং গারগেল করার মত কাজগুলো মাঝে মাঝেই করতে হবে।
তিনি বলেন, সারা পথিবীতেই দেখা যাচ্ছে কখনও কমে যাচ্ছে আবার কখনও নতুন রূপে নতুন শক্তিতে এই ভাইরাসটা (করোনা) আসছে। যদিও, অনেকাংশেই আমরা এটা নিয়ন্ত্রন করতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শোকের মাস শেষ হতে না হতেই সেপ্টেম্বর মাসে সংসদ শুরু হল এবং শুরুই করতে হলো শোক প্রস্তাব নিয়ে। আজকে দ্বিতীয় দিন আবারো শোক প্রস্তাব নিতে হলো। একের পর এক দুঃসংবাদ নিয়েই আমাদের চলতে হচ্ছে সেটাই হচ্ছে খুব দুঃখজনক।
তিনি সকলের জন্য বিশেষ করে এই করোনার হাত থেকে দেশের মানুষ যেন রক্ষা পায় সেজন্য দোয়া কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কষ্টের ভেতর দিয়ে আমাদের সবাইকে যেতে হচ্ছে। এই পার্লামেন্টে আসার পর আমরা অনেককে হারিয়েছি। তিনি বলেন, হাসিবুর রহমান স্বপন ছিলেন অত্যন্ত জনবান্ধব। সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুরে আমরা তার সহযোগিতায় অনেক কাজ করেছি। গতকালই তার বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি, আজই চলে গেলেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার জন্য দোয়া চেয়ে বলেন, আমাদের ডেপুটি স্পিকার অসুস্থ। তিনি বিদেশে চিকিৎসায় আছেন। আমরা দোয়া করবো তিনি যেনো সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে পারেন। শেখ হাসিনা বলেন, এই করোনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে থেকে তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। স্বপন নিজের শারীরিক অবস্থার কথা চিন্তা না করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যারা জনগণের জন্য কাজ করে তাদের মৃত্যুটা দেশের জন্য, মানুষের জন্য বেশি ক্ষতির।