কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরকার ভয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে জেলে নেয়ার দিন সরকার যতটা ভয়ে ছিল এখন তার চেয়েও বেশি ভয়ে আছে। ভয়ের কারণ খালেদা জিয়া জামিনে মুক্ত হলে কী হবে? সেজন্য জামিনযোগ্য মামলায়ও তাকে জামিন দিচ্ছে না। অন্যায়ভাবে তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও আন্তর্জাতিক সমাজকর্মী বেগম মেহরুন্নেছাসহ সব রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে বৈঠকের আয়োজন করে দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন।
সংগঠনটির সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে এবং শিক্ষক নেতা সেলিম মিয়ার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, আব্দুল আউয়াল খান প্রমুখ।
নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের মধ্যে দুজন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য ব্যক্তি। একজন খালেদা জিয়া আর একজন শেখ হাসিনা। এখন এর মধ্যে একজন প্রধানমন্ত্রী থেকে নির্বাচন করবেন, আর একজন জেলে থেকে নির্বাচন করবেন এটাকে তো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলা যায় না। একজন এমপি থেকে নির্বাচন করবে আর আমরা এমপি না থেকে নির্বাচন করব সেটাও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নয়।
নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন চাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন করতে চাই। কিন্তু নির্বাচনের নামে কোনো খেলায় অংশ নিতে চাই না। আমরা সরকারের পতন চাই এটা কোনো গোপন কথা না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এই সরকারকে সরিয়ে আমরা দেশ শাসন করতে চাই এটাও গোপন কথা না। সুতরাং, আমরা কোনো ষড়যন্ত্রও করি না। ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে চাই। এর কোনো বিকল্প নেই। সেই আন্দোলন সফল হবে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনবে।
নজরুল ইসলাম বলেন, এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এত নোংরা অভিযোগ আছে যে অন্য কোনো সরকার হলে আগেই পদত্যাগ করত। কিছুদিন আগে জার্মানির একটি সংস্থা বলেছে স্বৈরাচারী দেশের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু সারা বিশ্বের সবাই বলে স্বৈরাচার।
তিনি বলেন, দেশে যদি আজ সত্যিকারে নির্বাচিত সরকার থাকত তাহলে জনগণের কাছে জবাবদিহি দিতে হতো। এই সরকারের জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা নেই। যা ইচ্ছা তাই করছে। তাদের জবাবদিহি করতে হয় না। কারণ বর্তমান সরকার এমন একটি সংসদ গঠন করেছে যে সংসদের বিরোধী দল প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত।
নজরুল ইসলাম বলেন, এমনকি সেই দলের তিনজন সরকারি দলের মন্ত্রী এরা সারা দিন অফিস করে সংসদে গিয়ে বিরোধীদলীয় আসনে বসে। বিরোধী দলের আসনে বসে সরকারি বিল পাস করে পৃথিবীর কোথাও এমন হাস্যকর সংসদ নেই যা বাংলাদেশের চলছে। পৃথিবীর কোথাও সংসদে গণতন্ত্র নিয়ে ইয়ার্কি ফাজলামি চলে না। কিন্তু বাংলাদেশে যেটা চলছে আমরা বলব এটা এক ধরনের ইয়ার্কি ফাজলামি।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিক্রম করছি। সুতরাং খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনারা ভ্যাটের আন্দোলন দেখেছেন। ওই আন্দোলনে সরকারকে নতিস্বীকার করতে বাধ্য করা হয়েছে। কোটা আন্দোলনেও সরকারকে ছাত্ররা ব্যস্ত করে ফেলেছিল।
তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করেছে, সেই আন্দোলনে সরকারের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু সবাই পারে, আমরা (বিএনপি) পারি না কেন? আমরা যদি আন্দোলন জোরদার করতে পারি তাহলে অনেক উপকরণ কাজে লাগবে। আর আমরা যদি আন্দোলন করতে না পারি তাহলে কেউ এসে আমাদের জন্য কিছু করবে না।