বরিশাল সংবাদদাতা:
বন্ধুর হবু স্ত্রীকে বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণ ও মোবাইলে ভিডিও ধারণের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় মসজিদের ইমাম, মাদরাসার শিক্ষক ও কলেজে পড়ুয়া এক ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার জাকির হোসেন ভূঁইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আসামিদের গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন জানান, ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর মামলা গ্রহণ করে রবিবার (২৭ নভেম্বর) দিনগত রাতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন, বরিশাল নগরের রূপাতলী উকিল বাড়ি সড়কের জামিয়া কাসিমিয়া মাদরাসার শিক্ষক আবিদ হাসান ওরফে রাজু, বাবুগঞ্জ উপজেলার গাঙ্গুলি বাড়ি মোড় এলাকার বাইতুল মামুর জামে মসজিদের ইমাম আবু সাইম হাওলাদার এবং সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের ছাত্র হৃদয় ফকির।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার করা তিন আসামি বর্তমানে তিন এলাকার বাসিন্দা হলেও তারা আগে একই বাসায় ভাড়া থাকতেন। সেই সূত্রে পরিচয় এবং ঘটনার সময়ে তারা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে একই বাসায় মিলিত হয়ে অপরাধ সংগঠিত করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ওই মেয়েটি এয়ারপোর্ট থানার পাংশা এলাকার একটি দাখিল মাদরাসা থেকে সদ্য সমাপ্ত এসএসসি পরীক্ষা দেন। তার সঙ্গে একই এলাকার এক ছেলের প্রেমের সর্ম্পক ও পারিবারিকভাবে বিয়ের কথা ঠিক হয়। বিষয়টি ছেলেটির বন্ধু আবিদ হাসান, সাইম এবং হৃদয় ফকির জানতেন। চলতি বছরের ২০ আগস্ট রাতে হৃদয় ফকির ওই ছাত্রীর মোবাইলে কল করে জানায়, ওই ছেলের সঙ্গে বিয়ের কথা ঠিক হলেও তিনি অন্য নারীদের সঙ্গে মেলামেশা করেন।
বিষয়টি প্রথমে বিশ্বাস করেনি ওই ছাত্রী। পরে অপর দুই বন্ধু বললে বিশ্বাস করেন এবং হবু স্বামীর বন্ধুরা জানায় ২৭ আগস্ট বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের শের-ই-বাংলা সড়ক ডা. হামিদ লেনের হৃদয় ফকিরের ভাড়া বাসায় তার হবু বর অন্য মেয়ে নিয়ে যাবেন। হাতেনাতে ধরার জন্য ওই ছাত্রীকে হবু স্বামীর বন্ধুর বাসায় যাওয়ার জন্য বলে। কথামত ওই ছাত্রী সকাল ১০টার দিকে গেলে সেখানে আটকে তাকে তিনজনেই পালাক্রমে ধর্ষণ করে মোবাইলে ভিডিও করে রাখেন।
এদিকে ধর্ষণের ঘটনার পর ওই ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পরলে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এতে বাধ্য হয়ে কোথাও চিকিৎসা না নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। এরপর ধর্ষণের ভিডিওর কথা বলে ওই ছাত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করে হবু স্বামীর বন্ধুরা ৫ বার সেই বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে টাকা দাবি করলে তা দিতে অসামর্থ জানান ওই ছাত্রী। একপর্যায়ে অভিযুক্তরা তাদের ধর্ষণের ভিডিও হবু বরের বাবাকে দেখায়। এরপরই বিষয়টি জানাজানি হলে হবু স্বামীর সহায়তায় গত রবিবার (২৭ নভেম্বর) থানায় অভিযোগ দেয় সেই ছাত্রী। এরপরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে।