Connect with us

দেশজুড়ে

অন্ধ পরিবারটির পাশে দাড়ালেন ভাষা সৈনিক দবিরুলের পুত্র

Published

on

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:
অন্ধ বাবা, আর প্রতিবন্ধী ভাইসহ পাঁচ পরিবারের সংসারে জন্ম নিয়ে সংসারের হাল টানছেন মেয়ে রিনা রানী। অভাবের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেবে প্রতিদিন শ্রম দিচ্ছেন অন্ধ বাবার সাথে। বাড়িতে মায়ের সাথে মাটির জিনিস তৈরির পর হাট-বাজার কিংবা গ্রাম-গঞ্জে ভাঙা সাইকেল যুগে অন্ধ বাবাকে নিয়ে ছুটেন রিনা।

বিক্রি সামান্য আয়ে নিত্যপূর্ণ ক্রয়ে বাড়ি ফেরা এখন তাদের নিত্যদিনের গল্প। বলছিলাম ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা আমজানখোর ইউনিয়নের উদয়পুর বালুবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা সুবেশ চন্দ্র পালের পরিবারের কথা। রিনা রানী ছাড়াও দুই ছেলে রয়েছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সুবেশের সংসারে। লক্ষ্মী চন্দ্র (১৪) ও প্রহ্লাদ চন্দ্র (১৭)। পরিবারের সামর্থ্য না থাকায় তারা অন্যের দোকানে কাজ করে।

কয়েক দিন আগে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বাবা সুবেশ চন্দ্র পালকে সঙ্গে নিয়ে বাইসাইকেলে করে মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করতে লাহিড়ী বাজারের পথে হেঁটে যাচ্ছিলেন বারো বছর বয়সী রিনা রানী। আর সাইকেলের একটি অংশ ধরে পেছন পেছন হাঁটছেন তার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বাবা।

তাদের এমন কস্টের হৃদয় বিদারক দৃশ্য চোখে পড়ে পার্শ্ববর্তী পাড়িয়া ইউনিয়নের বামুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, বাংলাদেশ আ.লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সসদ্য, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রথম সভাপতি ভাষা সৈনিক এ্যাডভোকেট মরহুম মুহম্মদ দরিরুল ইসলামের ছেলে আহসান উল্লাহ ফিলিপের।

পরে তিনি পরিবারটির বাড়িতে খোঁজখবর নেন। বাস্তবতা বিবেচনায় একটি গবাদিপশু (গরু) প্রদানের আশ্বস্ত করেন। বাস্তবায়নে শুক্রবার (১২ মে) বিকেলে গরুটি তুলে দেন ওই পরিবাটির হাতে। তবে হঠাৎ এমন উপহার পেয়ে অনেকটা খুশি অসহায় সুবাসের পরিবার ওই স্থানীয়রা।

মুনছুর আলী নামে এক শিক্ষক বলেন, জাতির পিতার ঘনিষ্ঠ সহচর ও ভাষা সৈনিক দবিরুল ইসলামের ছেলে আহসান উল্লাহ ফিলিপকে আমি ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু জানি ওনার মতো হ্নদয়বান মানুষ যদি এ এলাকায় আরো দশটা থাকতো। তাহলে এই এলাকায় এতো অসহায় মানুষ থাকতো না। আরো উন্নত হতো। তিনি এ পর্যন্ত বহু পরিবারকে সাহায্য করেছে। আজ অন্ধ পরিবারটির পাশে এসে দাড়ালেন।

প্রতিবেশীরা জানান, রিনার বয়স যখন সাত বছর তখন থেকে তার বাবা তাকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন হাট-বাজারে ভিক্ষা করতেন। একটি লাঠি নিয়ে রিনা সামনে হাঁটত, তার বাবা সেই লাঠি ধরে পেছনে হাঁটতেন। মেয়েটার বয়স ১১-১২ বছর হওয়ার পর বিভিন্ন লোকজন নানা কথা বলা শুরু করে। এরপর মেয়েটা আত্মসম্মানের কথা বিবেচনা করে মায়ের তৈরি করা মাটির জিনিসপত্র বাজারে বিক্রি শুরু করে। এভাবেই কোনোমতে তাদের সংসার চলছে। ফিলিপ দাদার অসংখ্য ধন্যবাদ যে অন্ধ পরিবারটি পাশে এসে দাড়ালো।

সুবেশ চন্দ্র পাল জানান, আমি অন্ধ মানুষ। মেয়ের সাহায্যে রাস্তা ঘাটে চলাফেরা করি। যে দুইটা বেটা (ছেলে) আছে একটা প্রতিবন্ধী আরেকটা সবল। মানুষের দোকানত কাজ করে। এলাও মাঝে-মধ্যে মাটির হাড়ি-পাতিল বিক্রি না হলে দোকানে দোকানে ভিক্ষা করিবা যাছু। কাজ তো করিবা পারুনা। হামার কথা শুনেহেনে ফিলিপ দাদা আইচ্চে দেখিবা। একটা গরু দিলে আর কোন সমস্যা হলে ফিলিপ দাদা কহিবা কহিচে।

রিনা রানী জানায়, সমাজের আর দশটা মেয়ের মতো তারও আমারো ইচ্ছে হয় স্কুলে যাওয়ার, পড়াশোনা করে মানুষ হওয়ার। কিন্তু বাবা আর পরিবারের কথা চিন্তা করে বাড়ির পাশে একটি স্কুলে ভর্তি হলেও তৃতীয় শ্রেণি থেকে পড়ালেখা বাদ দেয়। এখন বাবাকে সঙ্গে নিয়ে বাজারে মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি এবং বাড়ির যাবতীয় খরচ করতে দিন কেটে যায়। আমার বয়সী ছেলে-মেয়েরা যখন স্কুলে যায়, মাঠে ঘাটে খেলা করে তখন তাদের দেখে আমার খুবই কস্ট হয়। কান্না পায়। আমারো সহপাঠীদের সাথে স্কুলে যেতে মন চায়। কিন্তু কপাল খারাপ গোটা সংসারটা আমার উপর পড়েছে।

রিনা আরো বলেন, বাবার সাথে হাট-বাজারে ঘুরে ঘুরে মাটির জিনিস বিক্রি করি। বেচাকেনা যা হয় তা দিয়েই চলে সংসার। সেদিন ফিলিপ কাকা আসছিলেন আমাদের খোঁজখবর নিতে। বললেন কিছু একটা ব্যবস্থা করে দিবে। সত্যি সত্যি একটা আমাদের গরু দিলেন। এই কস্টের দিনে ফিলিপ কাকার উপকারের কথা কোন ভুলবো না।

এ বিষয়ে মো: আহসান উল্লাহ ফিলিপ বলেন, সুবেশ পাল তার কিশোরী মেয়ে নিয়ে ফেরি করে বেড়াচ্ছিলো এমন দৃশ্য দেখে আমার খুবই খারাপ লেগেছে। পরে আমি পরিবারটি খোঁজ নিয়ে জানি তারা খুবই অসহায়। বাস্তাবতা বিবেচনায় আমি তাদের একটি গরু কিনে দেয়। বিত্তবানদের উচিৎ এমন অসহায় পরিবার গুলোর পাশে এসে দাঁড়ানো। আমি দেশবাসীর কাছে আহব্বান করব তারা যেন অসহায়দের পাশে এসে দাড়ায়।

Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Highlights

ফেনী সদরে ব্যাংক ম্যানেজারকে হত্যার অভিযোগ, মরদেহে আঘাতের দাগ

Published

on

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফেনী পৌর এলাকায় এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে সেটা স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিহত ওই ব্যাংক কর্মকর্তার নাম আজম খান। তিনি ফেনী সদরের ব্যাংক এশিয়ার ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন। গত ৯ এপ্রিল পৌরসভার ১৬ নং ওয়ার্ডের জহির কোম্পানির ভাড়া বাড়ির ৫ম তলায় এ ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় নিহতের বোন নারগিছ আক্তার ছয় জনের নাম উল্লেখ করে ফেনী সদর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযুক্তরা হচ্ছেন নিহতের স্ত্রী কামরুন নাহার(৩৬) ও তার তিন ভাই-বোন গোলাম রব্বানী(৪৫), লুৎফুর নাহার(৩৯), মো: রুবেল(৩৮) ও তাদের দুই ছেলে তানভীর(৩০) এবং মুনতাহীর(২৫)।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নিহত ওই ব্যাংক কর্মকর্তা চাকরির সুবাদে দীর্ঘদিন থেকে ফেনী সদরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। সম্পদের লোভে চলতি মাসের ৭ তারিখ আসামিরা স্টাম্পের মাধ্যমে সকল সম্পত্তি লিখে নিতে আজম খানকে মারধোর করে। মারধোর করেও পরিকল্পনায় সফল হতে না পেরে গত ৯ এপ্রিল হত্যা করে ফেনী কার্ডিয়াক হসপিটালে নিয়ে যায়। পরে সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক ব্যাংক কর্মকর্তাকে মৃত ঘোষণা করে। লাশ বাড়িতে আনার পরে স্বজনেরা মৃতদেহের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিন্হ দেখতে পান। তবে সেই অভিযুক্তরা কৌশলে লাশের কোন ময়নাতদন্ত না করেই দাফন করে।

নিহতের বোন নারগিছ আক্তার পুলিশ প্রশাসনের কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে খুনিদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

Continue Reading

দেশজুড়ে

নোয়াখালীতে দেশ রূপান্তরের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

Published

on

By

নোয়াখালী প্রতিনিধি:
দেশ রূপান্তরের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নোয়াখালীতে কেক কাটা ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্যদিয়ে উদযাপিত হয়েছে। সোমবার বিকেল ৪টায় নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সহিদ উদ্দিন এস্কান্দার কচি মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে কেক কাটেন নোয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু বলেন, দেশ রূপান্তর দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা। এ পত্রিকা মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় এগিয়ে নিচ্ছে দেশ। ‘দায়িত্বশীলদের দৈনিক’ হিসেবে দেশ রূপান্তর দেশের জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশ করছে।

দেশ রূপান্তরের নোয়াখালী প্রতিনিধি জামাল হোসেন বিষাদের সঞ্চালনায় নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি বখতিয়ার শিকদারের সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আলমগীর ইউসুফ, বীর মুক্তিযোদ্ধা তারকেশ্বর নান্টু, নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের মঞ্জু, সহ-সভাপতি শাহ এমরান মো. ওসমান সুজন, যুগ্ম সম্পাদক এ আর আজাদ সোহেল, নাগরিক অধিকার আন্দোলনের আহবায়ক অ্যাডভোকেট কাওসার নিয়াজী, দৈনিক মানবজমিনের স্টাফ রিপোর্টার নাসির উদ্দিন বাদল, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহবুবুর রহমান, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের স্টাফ রিপোর্টার সুমন ভৌমিক প্রমুখ।

বক্তাগণ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছায় দেশ রূপান্তরের এগিয়ে চলায় শুভকামনা জানান।

Continue Reading

Highlights

রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হলো “রায়হান ক্লাসিক বডি বিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৪”

Published

on

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল রায়হান ক্লাসিক বডি বিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৪। রায়হান ফিটনেসের প্রতিষ্ঠাতা রায়হান রহমানের আয়োজিত এই প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার(১ মার্চ) দিনভর মুখরিত ছিল ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিল অডিটোরিয়াম।

বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দেশ সেরা ১০০ জন প্রতিযোগী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে শাওন সাকির, তূর্য ও সুমন মাতবর যথাক্রমে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ৭ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ সোলায়মান সেলিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শরীর গঠন ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডাঃ জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ।

Continue Reading