‘জনগণ যদি বাংলাদেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে না চায় তাহলে নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে, আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে। ‘, বলেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা । গতকাল বুধবার বিকালে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে অবশ্যই সবসময় নির্বাচনে জয়ী হবো এটা আমরা আশা করি। এতো উন্নয়ন করার পরও দেশের জনগণ যদি ভোট না দেয়, ক্ষমতায় যদি আসতে না পারি- এটা জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে…তবে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন করবে কি না সেটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। একজনের দলীয় সিদ্ধান্ত তো আমরা চাপিয়ে দিতে পারি না। বলতে পারি না নির্বাচন করতেই হবে, না করলে জেলে ধরে নিয়ে যাব।
প্রধানমন্ত্রী এই সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের জবাব দেন।
সাম্প্রতিক সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সফর নিয়ে এ সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রশ্নোত্তর পর্বে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী নির্বাচনের বিষয়টি ঘুরে ফিরেই উঠে আসে।আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি বলছে তাদের নেত্রী (খালেদা জিয়া) মুক্ত না হলে তারা নির্বাচন করবে না। তাদের নেত্রীকে তো আমি জেলে পাঠাইনি। রাজনৈতিক কারণে যদি আমি তাকে জেলে পাঠাতাম তাহলে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত যখন তারা পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছিল, গুলশানের নিজ অফিসে ৬৮ জন লোক নিয়ে অবস্থান করে হুকুম দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছিল, তখনই তো খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করতে পারতাম; কিন্তু রাজনৈতিকভাবে আমি তা করতে চাইনি। তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ হচ্ছে গণতন্ত্রের অংশ। কোন পার্টি নির্বাচন করবে, কোন পার্টি করবে না- এটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত।
আগামী নির্বাচন নিয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাবে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে আমরা না আসলে দেশের উন্নয়নের যে ধারাবাহিকতা তা যে নষ্ট হয়ে যায়, সেটা তো আপনারা নিজেরাই প্রত্যক্ষ করেছেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আমরা যে উন্নয়ন করেছিলাম, সেটা নষ্ট করে দিয়েছিল। লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তার সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুইটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আমরা বৃটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি।
কোটা পদ্ধতি বাতিল প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে কোটা পদ্ধতি প্রবর্তন করেছিলেন। এই কোটা পদ্ধতি থাকবে কি থাকবে না তা ছাত্রদের বিষয় নয়। এটা সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের বিষয়। হঠাত্ কোনো কথাবার্তা নেই, কোটা চাই না বলে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনকারীদের মধ্যে অনেকেই ছিল তারা কারা? কিন্তু আমরা বসে থাকিনি, চেষ্টা করেছি তাদের বোঝাতে। কোটা পদ্ধতির গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, কোটা পদ্ধতি নিয়ে যারা আন্দোলন করেছে, তারা তো কোটা চায় না। তাই তাদের দাবি মেনে নিয়েছি। আর কোটার দরকার নেই, বাতিল করে দিয়েছি। এখন আর আলোচনার কী আছে? তিনি বলেন, এখন জেলা কোটা না থাকলে আন্দোলনকারীদের কেউ পরে যদি চাকরি না পায়, তবে চাইলেও পাবে না। আন্দোলনে যারা ছিল তাদের ছবি সংরক্ষণ করা আছে। পরে যদি কান্নাকাটি করে তখন দেখা যাবে।
খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে আমি একটি অন্যায় কাজ করেছি। একজন নিরপরাধ মানুষ, ফাতেমা বেগম। খালেদা জিয়ার এখন মেইড সারভেন্ট লাগবে। আপনারাই বলেন, সাজাপ্রাপ্ত কোনো আসামিকে কবে, কে কোনো দেশে মেইড সারভেন্ট সাল্পাই দিয়েছে? তার (খালেদা জিয়া) সেই দাবিও আমরা মেনে নিয়ে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দয়াবশত হয়ে তার মেইড সারভেন্ট পর্যন্ত সঙ্গে দিয়ে দিয়েছে। এ সময় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, মানবাধিকার সংস্থাগুলো এতো সোচ্চার, তবে তারা কেন সোচ্চার হননি যে, একজন নিরপরাধ মানুষ কেন খামোখা জেল খাটবে? তারপরও যদি একটা ভালো বেতন দিত? তাও না। কত বেতন দেয় সেটা জিজ্ঞেস করে দেখেন, আমি আর বলতে চাই না। তিনি বলেন, একটা নিরপরাধ মানুষকেও কিন্তু জেল খাটতে হচ্ছে খালেদা জিয়ার কারণে। যদিও আমাদের কোনো মানবাধিকার সংস্থা এটা নিয়ে একটা টু শব্দও করে না। বিনা বিচারে বিনা সাজায় বিনা কারণে কেন একজন মহিলা জেল খাটবেন, এটা আমাকে বলেন। তাও খাটছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়ার ওষুধ রাখার জন্য ফ্রিজ লাগবে। সেই ফ্রিজের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। তারা নির্বাচন ঠেকাতে চেষ্টা করেছে। আর কে নির্বাচনে আসবে, কে আসবে না এটা সম্পূর্ণ সেই দলটির ওপর নির্ভর করে। আর নির্বাচনে জেতাটা আমি জনগণের ওপর ছেড়ে দিচ্ছি।
সড়ক দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রধানমন্ত্রী দুর্ঘটনার জন্য শুধু গাড়ি চালকদের দোষ না দিয়ে পথচারীদেরও সড়কের নিয়মগুলো মানার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পথচারীরা যেন নিয়ম জানে ও মানে সেজন্য জনসচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যমের সহায়তা চাওয়ার পাশাপাশি দুর্ঘটনার পরপরই গাড়ি চালককে না পিটিয়ে আইনের হাতে সোপর্দ করারও অনুরোধ জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ সময় মঞ্চে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম মাহমুদ আলী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিদেশে নালিশ করে লাভ হবে না
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিক নেতা সেজে যারা বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নালিশ করেন তাদের উদ্দেশে হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘কিছু ব্যক্তি নেতা সেজে বসে আছেন, শ্রমিকদের ওপর খবরদারি করেন। একটি টিকিটের জন্য কোনো কিছু হলেই তারা বিদেশিদের কাছে নালিশ করেন। দেশের বদনামটা তুলে ধরেন। আর এই বদনাম করতে গিয়ে হয়তো একখানা টিকিট বিনা পয়সায় পান। বিদেশে থাকার একটু সুযোগ পান। একটু যেতে পারেন। সামান্য সুযোগের জন্য দেশের বদনামটা বাইরে গিয়ে করাটা নিজের দেশের জন্য যে কত ক্ষতিকর, সেটা তাদের অনেকেই বুঝতে পারেন না। এটাই হচ্ছে আমাদের সব থেকে দুর্ভাগ্যের বিষয়। তবে তাদের বলছি, আমি যতদিন ক্ষমতায় আছি, বাইরে নালিশ করে বেশি সুবিধা হবে না। তাই কারো উস্কানিতে কারখানায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন না।’
মহান মে দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শ্রমিক নেতাদের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এই দেশটা আমাদের। আমাদেরই দেশকে গড়ে তুলতে হবে। দেশটি যতই উন্নয়ন হবে, ততই আমাদের কল্যাণ হবে। এই কথাটি বুঝতে হবে। দেশপ্রেম থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশকে গড়ে তুলতে চাই। দেশের মেহনতি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা আমাদের সরকারের লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধু দেশের সব শিল্পকারখানা জাতীয়করণ করেছিলেন।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার রাজনীতি হলো, এদেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের জন্য।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নিহত শ্রমিকদের পরিবার, আহত শ্রমিকদের মেধাবী সন্তানদের মাঝে চেক বিতরণ করেন। শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ানও বক্তব্য রাখেন।