বিডিপি ডেস্ক:
গাঁজা, মদ, ফেনসিডিলকে পেছনে ফেলে সারা দেশ ইয়াবায় ছেয়ে গেছে। সেইসঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বে পরিচিত ভয়াবহ আইস মাদক ও ডি-লাইসার্জিক অ্যাসিড ডায়েথিলামাইড বা এলএসডি মাদকের বাজার তৈরিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এক শ্রেণির কারবারি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে প্রায় প্রতিদিনই মাদকসহ শতাধিক আসামি গ্রেফতার হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে ইয়াবা, আইসের মতো ভায়নক মাদক জব্দ করা হচ্ছে। তবুও মাদক কারবারিরা থেমে নেই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ও তৎপরতার মধ্যে কারবার চালিয়ে যাচ্ছে।
নতুন নতুন কৌশল খাটিয়ে প্রাইভেটকারে, সবজিবাহী ট্রাকে, ফলের ঝুড়িতে, ট্রাকের পাটাতনের নিচে বিশেষ কায়দায়, এমনকি পেটের মধ্যে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাদক পাচার করছে।
গত ২১ আগস্ট রাজধানীর বনানী ও উত্তরা অভিযান চালিয়ে ৫০০ গ্রাম আইসসহ ১০ মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২৩ সেপ্টেম্বর গুলশান, ভাটারা, কুড়িল ও রমনা এলাকায় পরিচালিত এক অভিযানে চক্রের আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫৬০ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস ও এক হাজার ২০০ ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়।
এদিকে গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ৩টা পর্যন্ত রাজধানীর শাহবাগ থানার নবাব হাবীবুল্লাহ রোডে অবস্থিত হোটেল পিকক লিমিটেডের (বার) চতুর্থ তলা ও আন্ডারগ্রাউন্ডে সুরঙ্গ রুম থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি অবৈধ মদ ও বিয়ার জব্দ করে র্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। অভিযানে কোটি টাকা মূল্যের অবৈধ মদ ও বিয়ারসহ চার মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বলছে, শুধু ঢাকা বিভাগেই সাড়ে তিন হাজার মাদক কারবারি রয়েছে। সম্প্রতি সংস্থাটি মাদকের সঙ্গে জড়িত কারবারিদের একটি তালিকা তৈরি করেছে। ওই তালিকায় মাদক কারবারি, কারবারে অর্থ যোগানদাতা ও দূর থেকে এ কারবারের পৃষ্ঠপোষকতাকারীদের নাম রয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফরের ঢাকা মেট্রো উত্তর বিভাগের প্রধান ও অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, যারা ইয়াবা কারবারের সঙ্গে যুক্ত তারাই নতুন করে মিয়ানমার থেকে আসা আইস মাদকের কারবারে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন অভিযানে গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, বর্তমানে আইস মাদকে যুক্ত হচ্ছে বিত্তশালীরা। কারণ আইস মাদকের দাম অনেক বেশি। তাই যারা সেবন করছে তারা ধনী ঘরের সন্তান। ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানরা রাজধানীর অভিজাত এলাকায় করছেন মাদকের কারবার। তারা সেবনের পাশাপাশি ভয়ানক মাদক আইস কারবারের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। এসব মাদকের উৎস মিয়ানমার। নাফ নদী পথে গভীর সমুদ্র হয়ে মাদকের এসব চালান দেশে আসছে।
র্যাবের দেওয়া তথ্য মতে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে মাদক সংক্রান্ত আসামি গ্রেফতার হয়েছে ২২ হাজার ২৪৮ জন। এর মধ্যে ২০২০ সালে মাদকসহ ১২ হাজার ৩৯ জন ও চলতি বছরের (২০২১ সাল) আগস্ট পর্যন্ত ১০ হাজার ২০৯ জন আসামি গ্রেফতার হয়।
গত ২০ মাসে (২০২০-২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত) সারাদেশে র্যাবের বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে ২০৯ দশমিক ২৬ কেজি হেরোইন, তিন লাখ ১৮ হাজার ৮৮০ বোতল ফেনসিডিল, এক কেটি ৮৬ লাখ ৫৭ হাজার ৩৩০ পিস ইয়াবা, ৩৭ হাজার ৬৬১ দশমিক ৩২৪ কেজি গাঁজা, ২১ হাজার ৬৯৮ বোতল বিদেশি মদ, তিন লাখ ৬৬ হাজার ৬৪৯ দশমিক ৯৫ লিটার দেশি মদ, তিন দশমিক ৪৭২ কেজি কোকেন, ৭১ দশমিক ২৭৬ কেজি আফিম, ৩৪ হাজার ৫৫৯ পিস নেশা জাতীয় ইনজেকশন ও তিন লাখ ৬৩ হাজার ৮৫৬ পিস নেশা জাতীয় ট্যাবলেট জব্দ করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত (৭ দিনে) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে ৩৮৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গড়ে প্রতিদিন ৫৫ জন করে আসামি গ্রেফতার হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ২৮৩টি মামলা দায়ের হয়।
অভিযানে গ্রেফতার আসামিদের কাছ থেকে ৭৯ হাজার ৭৬৪ পিস ইয়াবা, দুই কেজি ৭৫২ গ্রাম হেরোইন, ২৩২ কেজি ৫১৯ গ্রাম গাঁজা, ১০৩ বোতাল ফেনসিডিল, ১৭৫ ক্যান বিয়ার, ৫০ বোতল এস্কাফ, তিন বোতল বিদেশি মদ. ৬০টি ইনজেকশন ও এক গ্রাম আইস মাদক জব্দ করা হয়।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি। বিভিন্ন অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধারসহ আসামিও গ্রেফতার করা হচ্ছে। আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছি। -বাংলানিউজ।