নবী আলম,(চারঘাট প্রতিনিধি) রাজশাহী: চারঘাট ও বাঘা উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত রাজশাহী-৬ সংসদীয় আসনে ‘বাটি চালান’ দিয়েও এক কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাওয়া যাবে না। মসজিদ-মন্দির, স্কুল-কলেজ, গির্জা, পার্ক-বিনোদনকেন্দ্র, হাসপাতাল-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ সব জায়গায় লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। যেখানে আগে কাঁচা রাস্তা পর্যন্ত ছিল না, সেখানে এখন ইউরোপ আমেরিকার আদলে হয়েছে পাকা সড়ক। ভাঙা-চোড়া রাস্তার বদলে কার্পেটিং রাস্তা। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। অবসান ঘটেছে ‘চরমপন্থার’। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গেও নেই দাঙ্গা-ফাসাদ, হানা-হানি!
চারঘাট ও বাঘা’র এই আমূল পরিবর্তনের ‘নায়ক’ হচ্ছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। সঙ্গত কারণেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলহাজ¦ শাহরিয়ার আলম এমপিই আওয়ামী লীগের নিশ্চত প্রার্থী। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্নেহভাজন শাহরিয়ার আলমের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে কোনো সংশয় না থাকলেও মনোনয়ন প্রত্যশায় চারঘাট-বাঘায় নিজ দলের তিনজন মনোনয়ন প্রত্যাশি রয়েছেন যারা জোরোসরেই জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন মাঠ-ঘাট পথে প্রান্তরে। তার পরেও আবারো শাহরিয়ার আলম হচ্ছেন আওয়ামীলীগের একক প্রার্থী এমনটাই বলছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সংশ্লিস্ট সুত্রে জানাগেছে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব শাহরিয়ার আলম এমপি শিক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে আধুনিক ও যুগোপযোগী বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছেন। এরমধ্যে দুটি উপজেলার শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে উপবৃত্তি প্রদান, মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার, ৯৮% শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। শুধু চারঘাট উপজেলায় ২৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকার সংস্কার করা হয়। উপজেলার ১৭টি উচ্চ বিদ্যালয়, ৮টি কলেজ, ৮টি মাদ্রাসা ও ২টি টেকনিক্যাল কলেজসহ সর্বমোট ৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওয়াসব্লক, টুইন ল্যাট্রিন স্থাপন করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিভাবক সমাবেশের ব্যবস্থা , ব্যল্যবিবাহ রোধে শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ, কোমলমতী শিক্ষার্থীরা যেন মাদকে আসক্ত না হয় সেজন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে মাদক বিরোধী সভা ও আলোচনার ব্যাবস্থা করেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব শাহরিয়ার আলম এমপি নতুন শিক্ষা ভবন স্থাপনে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তিনি চারঘাট উপজেলার ১৭ টি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা, ৮ টি কলেজে ১০ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা,৪ টি মাদ্রাসায় ৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা এবং ২ টি টেকনিক্যাল কলেজে ৩৭ কোটি ৯ লক্ষ্য টাকাসহ সর্বমোট ৩১ টি প্রতিষ্ঠানে ৬২ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকার নতুন ভবন স্থাপন করেন। তিনি শিক্ষা ব্যবস্থা ডিজিটাল করার লক্ষ্যে উপজেলার ৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ও ৭ টি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করেছেন। এছাড়ার প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনি নিজ উদ্যোগে ল্যাপটপ প্রদান করেছেন। এছাড়াও সরকারী করেছেন সরদহ মহাবিদ্যালয়কে।
এ বিষয়ে জানতে চারঘাট উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল-মামুন তুষার জানান,চারঘাট-বাঘা আসনটি বরাবরই ছিল বিএনপির দখলে। ধানের শীষের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি এ আসনে ২০০৮ সালে বিএনপির ঘাটিতে হানা দিয়ে তরুন রাজনীতিবিদ সৎ চরিত্রের অধিকারী শাহরিয়ার আলম ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করে আসনটি আওয়ামীলীগকে উপহার দেন। এরপর দলীয় নেতাকর্মীসহ কেন্দ্রের নিকট জনপ্রিয় ব্যাক্তি হিসেবে নিজের জায়গায় তৈরী করতে সক্ষম হন শাহরিয়ার আলম। দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ফিরে আসে উৎসবের আমেজ।
অপর দিকে চারঘাট উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহানুল হক রানা বলেন, শাহরিয়ার আলম এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে চারঘাট-বাঘায় উন্নয়ন ঘটিয়ে এলাকার আওয়ামীলীগসহ দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের হৃদয়ে একটি শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। দলের নেতাকর্মীদের মাঝে বিভেদ মিটিয়ে দলকে করেছেন আরো সুসংগঠিত। ফলে দলীয় নেতাকর্মীরা ছাড়াও সাধারন ভোটারদের নিকট শাহরিয়ার আলম হয়ে উঠেছেন সৎ,নির্ভিক, পরোপকারী। সর্বপরী হয়ে উঠেছেন উন্নয়নের অগ্রদুত।
এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আবারো ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রায়হানুল হককে পরাজিত করে দ্বিতীয় বারের মত এমপি নির্বাচিত হোন। এরপর সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হোন শাহরিয়ার আলম। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের পর দিনে দিনে বদলাতে থাকে চারঘাট-বাঘার চিত্র। কৃষি,স্বাস্থ্য,শিক্ষা,বিদ্যূত, অবকাঠামো সব খানেই শুরু হয় উন্নয়নের যাত্রা। গত নয়ঁ বছরে এসব বিষয়ে উন্নয়ন ঘটিয়ে চারঘাট-বাঘাকে আধুনিক এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হোন শাহরিয়ার আলম এমপি। রাস্তাঘাট,মসাজদ,মাদ্রাসা, স্কুল কলেজ এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে শাহরিয়ার আলমের উন্নয়ন হয়নি। সবখানে উন্নয়ন ঘটিয়ে বদলে দিয়েছেন চারঘাট-বাঘার জীবনমান। সুশিক্ষার ব্যবস্থা করে দুর করেছেন বেকারত্বের অভিশাপ। এখন চারঘাট-বাঘায় অধিকাংশ পরিবারের ছেলে মেয়েরা বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান করছেন চাকুরী। আর এটা সম্ভব হয়েছে এক মাত্র শাহরিয়ার আলমের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারনেই।
তিনি বলেন, এক সময় বিদ্যুত পাওয়াটা ছিল সোনার হরিণের মতো। কিন্তু আজ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত চারঘাট-বাঘার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল। দুটি উপজেলার কোথাও খুজে পাওয়া যাবে না মাটির রাস্তা। সবখানেই এখন পিচ ঢালা রাস্তা।
আর এসব কারনেই শাহরিয়ার আলম আবারো একা¦দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হচ্ছেন এটা অনেকটা নিশ্চিত। তবে শাহরিয়ার আলম ছাড়াও দলের অপর তিনজন প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাশায় জনসংযোগ প্রসঙ্গে ফকরূল ইসলাম বলেন, দলের ভিতরে মনোনয়ন প্রত্যাশায় অনেকেই গনসংযোগ করবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে সব শেষে শাহরিয়ার আলমের পক্ষেই সকলেই কাজ করবেন এমনটাই দাবি করলেন আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ সহ সকল সিনিয়র নেতা।
এ দিকে শাহরিয়ার আলম ছাড়াও আওয়ামীলীগের নিজ দলের যারা মনোনয়ন প্রত্যাশায় গনসংযোগ করছেন তারা হলেন, সাবেক সংসদ সদস্য চারঘাট উপজেলা আওয়ামীলীগে সাবেক সাধারন সম্পাদক আলহাজ¦ রায়হানুল হক, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলু ও বাঘা পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্কাছ আলী। এদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য রায়হানুল হক রায়হান গন সংযোগ করছেন ব্যাপক ভাবে।
তবে স্থানীয়দের ভাষ্যমতে শাহলিয়ার আলম ছাড়া যারা মাঠে জনসংযোগ করছেন তারা এক সময়ে ঠিকই এককাতারে হয়ে শাহরিয়ার আলমের পক্ষেই কাজ করবেন। বিএনপির ঘাটিতে বার বার হানা দিয়ে আসনটি ধরে রাখতে শাহরিয়ার আলমের বিকল্প নেই বলে দাবি আওয়ামীলীগের তৃনমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের।