বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. চিশতি জানান, ২৩ জুলাই থেকে জারি করা লকডাউন খুব কার্যকর ছিল। সংক্রমণ কমেও আসছিল। হঠাৎ পোশাক কারখানা খোলার সিদ্ধান্তে রাতারাতি যেভাবে মানুষের ঢল ঢাকার দিকে এসেছে, তাতে ঢাকায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। এই আগস্টেই ভয়াবহ হতে পারে ঢাকার পরিস্থিতি।
আরেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আইইডিসিআর-এর সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘কোরবানির ঈদের আগে যে লকডাউনের যে শিথিলতা ছিল, তার প্রভাব আগস্ট মাসের প্রথম ১৫ তারিখের মধ্যে দেখা যাবে। পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার কারণে গত কয়েক দিনে যে পরিমাণ জনসমাগম হয়েছে, বাইরে থেকে গাদাগাদি করে মানুষজন ঢাকায় ফিরেছে, এর কারণেও করোনার সংক্রমণ বাড়বে।’
ডা. মুশতাক আরও বলেন, ‘জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে পশুর হাট বসানো হলো। লোকজন বিভিন্নভাবে দলে দলে ঢাকা ছাড়লো। ঈদের জামাত হলো। আবার লাখ লাখ মানুষ গাদাগাদি করে ঢাকায় ফিরল। এসব কারণে মূলত সংক্রমণ বেড়েছে। এছাড়াও আমাদের চিন্তার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি না মানা। সেখানে অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। ঘন হয়ে বসছেন। বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য আমাদের আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এটি আমরা বাড়িতে বসেই করতে পারি।’
দেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১.৬৬ শতাংশ। প্রতিদিন ১০ হাজার লোক আক্রান্ত হলে তাদের মধ্যে ১৬৬ জন মারা যাচ্ছেন। বর্তমানে দৈনিক ২৩৫ থেকে ২৬০ জন মারা যাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঈদুল আজহায় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বাড়ি ফেরা, হঠাৎ পোশাক কারখানাগুলো খোলার সংবাদে যেভাবে জনসমাগম হয়েছে- তাতে সংক্রমণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সংক্রমণ বাড়লে সেই অনুপাতে বাড়বে মৃত্যুর সংখ্যাও।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১ আগস্ট ২৩১ মৃত্যু ও আক্রান্ত ১৪ হাজার ৮৪৪ জন, ২ আগস্ট মৃত্যু ২৪৬ ও আক্রান্ত ১৫ হাজার ৯৮৯ জন, ৩ আগস্ট মৃত্যু ২৩৫ ও আক্রান্ত ১৫ হাজার ৭৭৬ জন, ৪ আগস্ট মৃত্যু ২৪১ ও আক্রান্ত ১৩ হাজার ৮১৭ জন, ৫ আগস্ট মৃত্যু ২৬৪ ও আক্রান্ত ১২ হাজার ৭৪৪ জন, ৬ আগস্ট মৃত্যু ২৪৮ ও আক্রান্ত ১২ হাজার ৬০৬ জন এবং ৭ আগস্ট মৃত্যু ২৬১ ও আক্রান্ত ৮ হাজার ১৩৬ জন।
আগস্ট ১ থেকে ৭ তারিখ, এক সপ্তাহে করোনায় মারা গেছেন ১ হাজার ৭২৬ জন এবং সংক্রমমিত হয়েছেন ৯৩ হাজার ৯১২ জন। গড়ে প্রতিদিন মারা গেছেন ২৪৭ জন এবং সংক্রমিত হয়েছেন ১৩ হাজার ৪১৬ জন করে। গত ৭ জুলাই প্রথমবারের মতো দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়ায়। এদিন মৃত্যু হয় ২০১ জনের। এরপর থেকে এ সংখ্যা ক্রমে বাড়ছেই।