Highlights

আত্রাইয়ের সমসপাড়া-ভাঙ্গাজাঙ্গাল পাড়ঘাটে সেতু নির্মাণের দাবি

Published

on

নওগাঁর আত্রাই নদীর আত্রাই উপজেলার সমসপাড়া-ভাঙ্গাজাঙ্গাল পারঘাটে নির্মাণ হয়নি স্বপ্নের সেতু। হচ্ছে-হবে এই করেই দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন নদীর দুই পারের অর্ধশত গ্রামের বাসিন্দারা।

স্থানীয়দের মতে, সেতু নির্মাণ হলে একদিকে যেমন জেলা সদরের সাথে রাস্তার দূরত্ব কমবে প্রায় ১৫কিলোমিটার। অন্যদিকে ব্যবসা বানিজ্যসহ জীবন-মান উন্নয়নে ব্যপক প্রসার ঘটবে।জানাগেছে,আত্রাই সদর উপজেলা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পূর্ব দিকে বিশা ইউনিয়নে অবস্থিত সমসপাড়া-ভাঙ্গাজাঙ্গাল পারঘাট। মাঝ বরাবর নদী প্রবাহিত হওয়ায় ইউনিয়নটি দুই ভাগে বিভক্ত করেছে আত্রাই নদী। পারঘাটের উত্তরে ঘাটের উপরে রয়েছে ঐতিহ্যবাহি সমসপাড়া হাট ও বাজার। এছাড়া এই হাটেই অবস্থিত বিশা ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি অফিস, সমস পাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। নদীর দক্ষিণ পাশ দিয়ে আত্রাই থেকে নাটোরের সিংড়া উপজেলার ঢাকা মহাসড়কের সাথে পাকা
সড়ক মিলিত হয়েছে। নদীর উত্তরে পারঘাট থেকেই পাকা সড়ক কবী গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাচারী বাড়ি পতিসর হয়ে আত্রাই উপজেলা ও নওগাঁ জেলা সদরের সড়কের সাথে মিলিত হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, একটি মাত্র সেতুর অভাবে নদীর এপারের যানবাহন ওপারে যেতে পারছেনা। ওপারের যান বাহন এপারে আসতে পারেনা। ফলে প্রায় ৩০কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে মালামাল নিয়ে সিংড়া যেতে হয়। এছাড়া নওগাঁ জেলার শেষ সিমানা দক্ষিন-পূর্ব দিকের ভাঙ্গাজাঙ্গাল, হরিপুর, বিশা, ভাটোপাড়া, মোহনঘোষ, উদয়পুরসহ প্রায় ২০/২৫টি গ্রামের লোকজনকে প্রায় ১৫কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে জেলা সদরে যেতে হয়। এছাড়া প্রতি বছর দুই পারের বাসিন্দাদের নদী পারা-পারে হাজার হাজার টাকা টোল দিতে হচ্ছে পারঘাটের ইজারাদারকে। এতে একদিকে যেমন সময় অপচয় হচ্ছে,অন্যদিকে আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির মূখে পরেছেন এলাকার জনসাধারণ।

ভাঙ্গাজাঙ্গাল গ্রামের প্রায় ৭০ বয়সি বৃদ্ধ আজিম উদ্দীন বলেন, বুদ্ধির পর থেকেই শুনে আসছি সমসপাড়া-ভাঙ্গাজাঙ্গাল পারঘাটে নদীর উপর সেতু নির্মাণ হবে,কিন্তু আজও হয়নি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন এলেই সব দলের প্রার্থীরাই প্রতিশ্রুতি দেন সেতু নির্মাণের। নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে সেতু নির্মাণের আর কোন গন্ধও পাওয়া যায়না।

বিশা উত্তর পাড়া গ্রামের জামাল উদ্দীন শেখ বলেন, আমাদের এলাকায় ধান, গম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয়। এসব পণ্য বিক্রি করতে সমসপাড়া হাটে নৌকাযোগে পরিবহন করতে একদিকে যেমন চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়,অন্যদিকে সেতু না থাকার কারনে পারঘাটে অতিরিক্ত নৌকা ভাড়া দিতে হয়। এতে চরম ভাবে লোকসান গুনতে হয়। সমসপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন.বিদ্যালয়ে মোট ৭১৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে নদীর দক্ষিন পারের প্রায় ১০টি গ্রামের প্রায় ৩০০জন শিক্ষার্থী এই বিদ্যালয়ে পড়া-লেখা করে। সেতু নাথাকায় একদিকে যেমন সময় মতো পারঘাটে নৌকা না পাওয়ার কারনে শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারেনা,অন্যদিকে নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রীর কারনে কিম্বা বাতাসের কারনে নদীতে নৌকা ডুবে শিক্ষার্থীদের বই-খাতা ভিজে নষ্ট হয়ে যায়।

বিশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন খান তোফা বলেন, আত্রাই থেকে সিংড়া পর্যন্ত প্রায় ২৬ কিলোমিটার নদীপথে কোন সেতু নেই। জনদূর্ভোগ নিরসনে এবং ব্যবসা বানিজ্যে প্রসার ঘটাতে এলাকাবাসির প্রানের দাবি সমসপাড়া-ভাঙ্গাজাঙ্গাল পারঘাটে দ্রুত সেতু নির্মাণ করা হউক।

আত্রাই উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী জোনায়েদ আলম বলেন, সেতু নির্মাণের জন্য বছরখানেক আগে একটি প্রকল্পের লোকজন এসে সয়েল টেস্ট এবং মাপযোগ করে গেছেন। যদিও এখন পর্যন্ত এর কোন সুরাহা হয়নি। ইতি মধ্যে এমপি মহোদয় প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। আসা করছি দ্রুত সেতু নির্মাণ হবে।

স্থানীয় এমপি আলহাজ আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, নির্বাচতি হবার পর সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রনালয়ে ওই স্থানে সেতু নির্মাণের জন্য লিখিতভাবে আবেদন করেছি। এছাড়া জাতীয় সংসদেও সেতু নির্মাণের দাবি তুলে ধরেছি।

তিনি আরও বলেন, সমসপাড়া-ভাঙ্গাজাঙ্গাল পারঘাটে সেতু নির্মাণ হলে এলাকার জনমানুষের জীবন-মান উন্নয়নে এবং ব্যবসা বানিজ্যে ব্যাপক প্রসার ঘটবে এবং দীর্ঘ দিনের অসহনীয় দূর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে এলাকাবাসী। আসা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনা পূর্বক খুব দ্রুত সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version