আন্তর্জাতিক

ইরানকে ধ্বংসের লক্ষ্যে নতুন পরিকল্পনা সামনে আনছে যুক্তরাষ্ট্র

Published

on

ইরান পরমাণু চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে ৩০ মিনিটের ওই ভাষণে ‘প্লান সি’র কথা বলেন মাইক পম্পেও। প্লান সি’র আওতায় রয়েছে, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ইরানের অর্থনীতি পঙ্গু করা এবং পরিশেষে ইরানে সরকার পরিবর্তন করা।

পম্পেও বলেন, এই নিষেধাজ্ঞার পর নিজেদের অর্থনীতি বাঁচিয়ে রাখতে হিমশিম খাবে ইরান। পম্পেও শর্তগুলোকে ‘খুবই মৌলিক দাবি’ ও ‘যৌক্তিক’ বলে বর্ণনা করেছেন। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানকে ধ্বংসের লক্ষ্যেই নতুন নতুন পরিকল্পনা সামনে আনছে যুক্তরাষ্ট্র।

ইরানের সঙ্গে নতুন চুক্তির জন্য মাইক পম্পেও যেসব শর্ত দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন।

সোমবার বুয়েন্স আয়ার্সে জি২০’ভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের ফাঁকে বলেন, পম্পেওর দেয়া শর্তগুলো একটি চুক্তির মধ্যে নিয়ে আসা অসম্ভব ব্যাপার। পম্পেওর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকো মোঘেরিনি তার আগের অবস্থান তুলে ধরে বলেছেন, ইরান পরমাণু চুক্তির কোনো বিকল্প নেই।

তবে ইরান বিষয়ে পম্পেওর এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। সোমবার এক বিবৃতিতে ইরানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতি অনুসরণে বিশ্বের অন্য দেশগুলোকেও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

২০১৫ সালের জুনে তেহরানের সঙ্গে পরমাণু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৬ জাতিগোষ্ঠীর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ৮ মে ইরানের বিরুদ্ধে সমঝোতা ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগ তুলে পরমাণু সমঝোতা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সোমবার ইরানকে রুখতে মার্কিন পরিকল্পনা ঘোষণার সময়ে পম্পেও বলেন, ইরানের ‘আগ্রাসন’ রুখতে পেন্টাগন ও আঞ্চলিক মিত্রদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করবে। এ সময় তিনি ইরানকে ১২টি শর্ত বেঁধে দেন।

প্রথমত, সিরিয়া থেকে সব সেনা প্রত্যাহার। দ্বিতীয়ত, ইয়েমেনের বিদ্রোহীদের অর্থায়ন বন্ধ করা। তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক আণবিক বিদ্যুৎ সংস্থাকে তাদের পরমাণু পরীক্ষার বিস্তারিত জানানো ও এই পরীক্ষা বন্ধ করা। চতুর্থত, প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি হুমকিস্বরূপ আচরণ বন্ধ করতে হবে। পঞ্চমত, ইসরাইলকে ধ্বংস করা, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি বন্ধ করা। ষষ্ঠত, আটক মার্কিন নাগরিকদের মুক্তি দেয়া।

পম্পেও বলেন, ইরান যেন কখনই পরমাণু অস্ত্র প্রস্তুত না করতে পারে তা নিশ্চিত করবে যুক্তরাষ্ট্র। পম্পেও জানান, সব শর্ত মেনে নিয়ে যদি ইরান আলোচনার টেবিলে ফিরে শর্তগুলো পূরণ করে তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। বহাল করা হবে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক। এমনকি ইরানের আধুনিকায়নেও পূর্ণ সহায়তা দেয়া হবে।

পম্পেওর এই প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেছেন, ইরানসহ বিশ্বের স্বাধীনচেতা দেশগুলোর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তেহরানে এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের প্রতিটি দেশ নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা সংরক্ষণ করে। যুক্তরাষ্ট্র চাপ সৃষ্টি করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে। কিন্তু তারা বিশ্বের সব দেশের জন্য সিদ্ধান্ত নেবে এটা যুক্তি ও ন্যায়শাস্ত্র মেনে নিতে পারে না।’

আমিরাতকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি বন্ধ করা। ষষ্ঠত, আটক মার্কিন নাগরিকদের মুক্তি দেয়া। ইরানি জনগণ পম্পেওর মুখে ঘুষি মারবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির জ্যেষ্ঠ সেনা কমান্ডার। সেনা কমান্ডার ইসমাইল কাওসারি বলেছেন, ‘ইরানের জনগণের উচিত এর মুখোমুখি কঠোরভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানো এবং তারা আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও তাকে সমর্থনকারীদের মুখে শক্ত ঘুষি মারবে।’

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি সীমিত করার কথা বলার আপনি ও আমেরিকা কে? ইতিহাস রয়েছে, হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ক্ষেপাণাস্ত্র ইস্যুতে আমেরিকাই সবচেয়ে বড় অপরাধী।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version