নিউজ ডেস্ক:
করোনা প্রাদুর্ভাবে দেশের সড়ক উন্নয়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ে বিপুলসংখ্যক প্রকল্পই বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে সড়কের ৭১টি উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ওসব প্রকল্পের মেয়াদ গত জুন মাসেই শেষ হয়ে গেছে। নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যেই প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন শেষ হয়ে যাওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু মার্চ মাসের শেষ থেকে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে প্রকল্পের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ওসব প্রকল্পের কাজ ২০১৯-২০ অর্থবছরের গুরুত্বপূর্ণ তিন মাসই স্থবির থাকে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রকল্পগুলোর মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা করোনার অজুহাতে ঢালাওভাবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সূত্রমতে, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের চিঠির প্রেক্ষিতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে এবং পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৭১টি প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই বাস্তবায়ন মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর প্রকল্পগুলো চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সূত্র জানায়, গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টটি (বিআরটি, গাজীপুর-এয়ারপোর্ট) যানজট নিরসনে হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পটি ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর শুরু হয়েছিল এবং সর্বশেষ গত ৩০ জুন সমাপ্ত হওয়ার কথা। কিন্তু এর মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাছাড়া সাসেক রোড কানেক্টিভিটি : ইমপ্রুভমেন্ট অব জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা রোড টু ফোর লেন হাইওয়ে শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল শুরু হয়েছিল। সেটিও গত জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা না হওয়ায় এখন আরো এক বছর মেয়াদ বেড়েছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক থেকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ও ঢাকা- মাওয়া মহাসড়ক থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংযোগ স্থাপনকল্পে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ১ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু তা না হওয়ায় তা বাড়িয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে মাওয়া পর্যন্ত এবং পাচ্চর-ভাঙ্গা অংশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ ৪ লেন প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২০২০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু তা না হওয়ায় এখন ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার অজুহাত ঢালাওভাবে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির ফলে যেসব প্রকল্প প্রকৃত অর্থেই করোনার ক্ষতিকর প্রভাবের শিকার, সেগুলোও বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। ওসব প্রকল্পের মেয়াদ ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই এক বছর বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু গাড়ি চলাচল, অফিস পরিচালনা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, বিদ্যুৎ বিল, আপ্যায়নসহ এমন অনেক খরচ আছে সেগুলো করতেই হবে। ফলে বর্ধিত ওই এক বছরের খরচ কোথা থেকে আসবে? নিশ্চয়ই ওই প্রকল্পগুলোর অন্য কোনো কম্পোনেন্ট কমিয়ে বা যে কোনোভাবেই হোক খরচ মেটানো হবে। তাতে প্রকল্পের মান কমে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। তাছাড়া মেয়াদ বাড়ার কারণে সরকারের যে বিপুল বিনিয়োগ তা থেকে সময়মতো সুফল পাওয়া গেল না। তার একটি অর্থনৈতিক ক্ষতি তো অবশ্যই আছে। পরবর্তীকালে আবার মেয়াদ ও ব্যয় বাড়বে কিনা তারও কোনো গ্যারান্টি নেই। সেজন্য যে কোনো অজুহাতেই প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের সাবেক প্রধান (এনইসি বৈঠকের সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. খলিলুর রহমান জানান, ওসব প্রকল্প জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু পরে করোনা ভাইরাসের কারণে কাজ শেষ করা যায়নি। আবার মেয়াদ বৃদ্ধিরও উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আবার কিছু প্রকল্প কাগজে-কলমে মেয়াদ শেষ হলেও বাস্তব কাজ অনেক বাকি ছিল। তাই বাস্তবতা বিবেচনায় এবং প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের গতি অব্যাহত রাখতে এনইসি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন।