কাউনিয়া(রংপুর)প্রতিনিধিঃ অভাব ওদের নিত্য সঙ্গী। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। জীবনের শুরুতেই দরিদ্রতা আর নানা অসঙ্গতির সঙ্গে নিত্যলড়াই যেনো ওদের নিয়তি। তবুও নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রাম করে জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে ওরা। ফল বিপর্যয়ের মাঝে এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলে উচ্ছ্বাস থাকলেও উচ্চশিক্ষার ব্যয় কিভাবে মিটাবে সে দুচিন্তা তাড়াকরে ফিরছে তাদের। এঅবস্থায় তাকিয়ে আছে সমাজের বিত্তবানদের দিকে। তাদের একটু সহানুভুতি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার চার অদম্য মেধাবীর আলোকিত হওয়ার স্বপ্ন পূরন করতে পারে।
মোছাঃ তানিয়া আক্তারঃ পেটে ভাত জোটে না, পরনে চাহিদা মতো কাপড় থাকেনা। দরিদ্রতা আর নানা প্রতিকুলতার সাথে নিরন্তর লড়াই করে সাফল্যের চুড়ায় পৌঁছেছে। এবারে টেপামধুপুর গালর্স স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে তানিয়া। পিএসসি পরীক্ষাতেও গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছিল সে। উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের পূর্ব রাজীব গ্রামের দিনমজুর মোঃ তৌহিদূল ইসলাম ও গৃহিনী মোছাঃ মর্জিনা বেগমের কন্যা তানিয়া। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে বড় সে। বর্তমানে দরিদ্রতার আধিপত্যে তানিয়ার শিক্ষার প্রদীপ নিভে যেতে বসেছে। তার স্বপ্ন পূরনে এখন বড়বাঁধা দারিদ্রতা। বাঁধা ডিঙ্গিয়ে সেই স্বপ্ন পূরন হবে কিনা সে চিন্তাই এখন তার নিত্যসঙ্গী। সে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়, কিন্তু তার লেখাপড়ার খরচ জোগাবে কে?
মোছাঃ রোকসানা আক্তার পপিঃ হাট-বাজারে টোল আদায়কারী মজুর মোঃ রহমত আলীর কন্যা রোকসানা পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার ন্যায় চলতি বছর টেপামধুপুর গালর্স স্কুল এন্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষার জিপি এ-৫ পেয়েছে। তিন বোন ও পিতা-মাতাকে নিয়ে তাদের সংসার। ওরা তিন বোনই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। তিন বোনের মধ্যে রোকসানা মেঝো। বড়বোন এমএ পাশ করে বেকার বসে আছে আর্থিক সংকট ও যোগ্য বর না পাওয়ায় মেয়েকে বিয়ে দিতে পারছেনা হতদরিদ্র পিতা। রোকসানা অভাবের কারণে প্রাইভেট পড়িয়ে বই, খাতা-কলম কিনে চালাতো তার লেখাপড়া। ভিটেমাটি ছাড়া তাদের আর নেই কিছুই। পিতার আয় দিয়ে তাদের পড়ালেখার খরচ ও সংসার চলতো কোনো রকমে। এঅবস্থায় হতদারিদ্র পিতার পক্ষে রোকসানার উচ্চশিক্ষার খরচ দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। রোকসানার স্বপ্ন সে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা শেষ করে বিসিএস কর্মকর্তা হবে। এবং মানুষের মত মানুষ হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার। কিন্তু হতদারিদ্র পিতার অভাবের সংসারে এপথ পাড়ি দেওয়া কি সম্ভব?
মোছাঃ আয়শা আক্তারঃ দরিদ্রতা ও অর্থ সংকট দমিয়ে রাখতে পারেনি উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের রাজীব গ্রামের আয়শা আক্তারকে। চরম অর্থ সংকট বাবার আদর-সোহাগ বঞ্চিত হয়েও আয়শা এবার এসএসসি পরীক্ষায় টেপামধুপুর বালিকা বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। দরিদ্রতার সাথে লড়াই করে এসএসসি পাশ করলেও উচ্চশিক্ষা গ্রহন নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছে আয়শা। মা নাছিমা জানায়, বাড়ীভিটা ছাড়া কোন জমিজিরাত নেই তাদের। আয়শারা দুই বোন এক ভাই সবাই পড়ালেখা করে । অভাবের মাঝেও সব প্রতিবন্ধকতাকে পদদলিত করে ভালো কলেজে পড়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আয়শা। মা তার মেয়ের সাফল্যে খুশি হলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। আয়শা চায় ডাক্তার হতে, কিন্তু দরিদ্র মাতার পক্ষে কিভাবে তা সম্ভব?
মোছাঃ সুমাইয়া আক্তারঃ গরীব শ্রমিক পিতার সন্তান প্রমাণ করেছে ইচ্ছা থাকলে সফলতা অর্জন করা সম্ভব। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় টেপামধুপুর বালিকা বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সুমাইয়া। হরিচরন শর্মা গ্রামের দিনমজুর মোঃ শহিদুল ইসলাম ও মোছাঃ মাজেদা বেগমের কন্যা সে। সাত শতাংশ জমিতে নিজস্ব বসতভিটা ছাড়া আর কিছু নেই তাদের। সুমাইয়া জানায়, দিনমজুর পিতার আয়ে তাদের সংসার চলেনা তার উপর তিন বোনের পড়ালেখার খরচ যোগান দেয়া অসম্ভব। ফলে অভাবেব সংসারে অর্থ জোগান ও পড়ালেখার খরচ জোগাতে সে প্রাইভেট পড়ানোর কাজ করতো। সুমাইয়ার মা মাজেদা জানায়, তার মেয়ের স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু দিনমজুর পিতার পক্ষে মেয়ের স্বপ্ন পুরন সম্ভব কি?
আলোকিত প্রতিভা বিকশিত করতে তারা সমাজের বিত্ত্ববান সকলের দোয়া ও সহযোগিতা চেয়েছেন।