বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই বিএনপি দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে। খালেদা জিয়া বিহীন কোন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি যাবে না, যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এই মূহুর্তে বিএনপি’র ইশতেহার হচ্ছে- বেগম জিয়ার মুক্তি, জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেয়া এবং দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। গতকাল নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, আইন আদালতসহ সবকিছু কব্জা করে বেগম খালেদা জিয়াকে জোর করে সাজা দিয়ে আপনাদের ক্ষমতার ঝাঁড়বাতির রোসনাই আর বেশি দিন থাকবে না। এবারে আপনাদের পতনের বিন্নন রাগিনী বাজতে শুরু করেছে। আর বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।
‘বিএনপি আগামী নির্বাচনে না আসলে কিছু যায় আসে না;- বলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা গভীর ষড়যন্ত্র। এই বক্তব্য জবরদস্তিমূলক একতরফা নির্বাচনেরই ইঙ্গিতবহ। বেগম খালেদা জিয়া যে ক’টি আসনে দাঁড়িয়েছেন তিনি কখনোই সেই নির্বাচনে পরাজিত হননি। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পরাজিত হয়েছেন। এজন্যই বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে সরাতে এতো ষড়যন্ত্র। আমি ওবায়দুল কাদের সাহেবের উদ্দেশে বলতে চাই- বিএনপি চেয়ারপার্সন মানেই জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতীক, বেগম খালেদা জিয়া মানেই বিএনপি, বেগম খালেদা জিয়া মানেই গণতন্ত্র। বেগম খালেদা জিয়া জনগণের সাথে কখনো প্রতারণা করেননি। জনগণের প্রতি যখন যে ওয়াদা করেছেন সেটি পালন করেছেন নির্দ্বিধায়। প্রদত্ত অঙ্গীকারের কখনো বরখেলাপ করেননি, কিন্তু পদে পদে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করে চলেছে বর্তমান সরকার।
রিজভী বলেন, রোজায় দেশজুড়ে লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি গ্যাস ও পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাস সংকটে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষের চুলা জ্বলছে না, ফলে সেহরি ও ইফতার তৈরি করতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পানি সংকট। আর এ কারণে মানুষ রান্নাবান্না থেকে শুরু করে ওজু কিংবা গোসলের পানিও পাচ্ছে না। বিভিন্ন এলাকায় পানির জন্য হাহাকার চলছে, হাড়ি পাতিল নিয়ে মানুষ রাস্তায় বিক্ষোভ করছে। গ্রামে গ্রামে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয় চলছে। সেখানে এখন বিদ্যুৎ যায় না, মাঝে মধ্যে আসে। ইফতার, সেহরি ও তারাবির নামাজের সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার সরকারি ঘোষণা জনগণের সঙ্গে খাঁটি প্রহসন। সরকারের মুখে তুবড়ি ছোটানো উন্নয়ন সড়ক-মহাসড়কের খানাখন্দে লুটোপুটি খাচ্ছে। ঈদের আগেই সারাদেশের সড়ক সংস্কারে সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঘোষণারও সমালোচনা করেন রিজভী।
তিনি বলেন, মূলত ঈদের আগে ক্ষমতাসীন লোকজনের পকেট ভারী করতেই এই সংস্কার প্রকল্প। যারা সারা বছর মানুষকে দুর্ভোগের মধ্যে রাখে তারা কোন আরব্য রজনীর দৈত্যকে দিয়ে ঈদের কয়েকদিন আগে সব রাস্তাঘাট মেরামত করে ফেলবেন সেটি কারও উপলব্ধিতে আসে না। এটি যোগাযোগ মন্ত্রীর বাকোয়াস ছাড়া কিছুই নয়।
র্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’র নামে মারণযজ্ঞ চলছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, গত তিন দিনে চার জেলায় বিচারবহির্ভূত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে সাত জন। এই মাসে যেন পোকামাকড়ের মতো বিচারবহির্ভূত মানুষ হত্যার হিড়িক চলছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- বর্তমানে দেশে যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিচার বহির্ভূত হত্যার নামে কিলিং প্র্যাকটিস করছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে হাবিবুর রহমান হাবিব, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মুনির হোসেন, আসাদুল করিম শাহীন, শামসুজ্জামান সুরুজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।