দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন ও নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে তিনি এ উদ্বোধন কার্যক্রম সম্পন্ন করেন । প্রাথমিকভাবে-গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঝালকাঠি, খুলনা, বগুড়া, নোয়াখালী এবং রংপুরে এই মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার নির্মাণ করা হবে। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী গতকাল গণভবনে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সদ্য সমাপ্তকৃত কোম্পানীগঞ্জ-মুরাদনগর-হোমনা মহাসড়ক ও গৌরীপুর-হোমনা সেতু, কুমিল্লার শাসনগাছা রেলওয়ে ওভারপাস এবং কুমিল্লার পদুয়াবাজার রেলওয়ে ওভারপাস-এর উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা মানুষের কাছে তুলে ধরতেই তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। দেশের জনগণ যাতে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও সংস্কৃতি ভালোভাবে রপ্ত করতে পারে সেজন্য সরকার প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।
ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই শান্তি যেন বজায় থাকে সেই দিকে আমরা লক্ষ্য রাখছি। তিনি বলেন, এদেশে সকল ধর্মের মানুষ বসবাস করে। প্রত্যেক ধর্মের মানুষই এদেশে স্বাধীনভাবে তার নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে। এটাই ছিল জাতির পিতার চেতনা এবং চিন্তা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম প্রচার ও প্রসারের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ২২ মার্চ ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলামের নাম নিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে ধর্মের মূল শিক্ষা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেয়া এবং নিরীহ মানুষ হত্যা করে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের এই পবিত্র ধর্মের সুনাম নষ্ট করা হচ্ছে। আমরা চাই- ধর্মের মর্যাদা সমুন্নত থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাটা যেন মানুষ পায় এবং ইসলামী সংস্কৃৃতিটা মানুষ যেন ভালোভাবে রপ্ত করতে পারে, চর্চা করতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। প্রতিটি জেলায়-উপজেলায় আমরা ৫৬০টি মডেল মসজিদ তৈরি করে দেব। যেখানে সত্যিকারভাবে ইসলাম ধর্মের চর্চা হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি রাজস্ব খাতে নিয়ে আসাতেও তার সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করেন।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে জাতির উদ্দেশে বেতারে বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইনসাফের ইসলামে বিশ্বাসী। আমাদের ইসলাম হযরত নবী করিম (সা:) ইসলাম। যে ইসলাম জগত্বাসীকে শিক্ষা দিয়েছে- ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র।’ আমরা সেটাই বিশ্বাস করি এবং আমাদের ধর্মের সেই মর্যাদাটা সমুন্নত থাকুক, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার সরকারের উদ্যোগে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, আগে তাঁদের জন্য (ইমাম-মুয়াজ্জিনদের) কোন ব্যবস্থা ছিল না। আমি প্রথমবার যখন প্রধানমন্ত্রী হই সেই সময় এই ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট ফান্ড করে দেই। প্রধানমন্ত্রী লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত এই বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে সকলকে একযোগে কাজ করারও আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব আনিসুর রহমান প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ ময়মনসিংহ প্রান্ত থেকে এবং বাংলাদেশ ইমাম সমিতির সভাপতি কাজী শাকের আহমেদ চট্টগ্রাম প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তৃতা করেন। ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঝালকাঠি, খুলনা, বগুড়া এবং নোয়াখালীর সকল শ্রেণি-পেশার জনগণের সঙ্গে মত বিনিময় করেন।
আমাদের রাজাপুর (ঝালকাঠী) সংবাদদাতা মো. মনিরুজ্জামান খান জানান, ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা পরিষদ চত্বর সংলগ্ন মাঠে ভিডিও কনফারেন্সিং অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব বজলুল হক হারুন এমপি, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুজ্জামান, বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আজাদ মিয়া, জেলা পুলিশ সুপার জোবায়েদুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক অ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির, রাজাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মনিরউজ্জামান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজা বেগম পারুলসহ জেলা ও উপজেলার সরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষ।