বাসের চাকায় পা হারানো রোজিনার চিকিৎসারা দায়িত্ব নিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি)। শুক্রবার রাত ৯টায় বনানীর সৈনিক ক্লাব থেকে মহাখালীর মাঝামাঝি স্থানে বিআরটিসির বাসের চাপায় রোজিনার ডান পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
শনিবার দুপুরে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোজিনাকে দেখতে যান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম এবং বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া।
এ সময় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব রোজিনার পরিবারের সদস্যদের কাছে চিকিৎসার জন্য নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা তুলে দেন বিআরটিসির পক্ষ থেকে।
তিনি জানান, প্রয়োজনে ভবিষ্যতে আরও সহায়তা করা হবে। রোজিনার পরিবারের সদস্যদের প্রতি বিআরটিসির চেয়ারম্যান জানান, বাসের চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি এ সময় বিআরটিসির পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেন।
শঙ্কামুক্ত নন রোজিনা : গৃহকর্মীর কাজ করে গোটা পরিবারের খরচের একটা বড় অংশের জোগান দিত তরুণী রোজিনা। বনানীতে বেপরোয়া বাসের চাপায় চুরমার হয়ে গেল তার জীবনের চাকা।
তার ডান পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। চিকিৎসক বলছেন. এখনও শঙ্কামুক্ত নন রোজিনা। ৭২ ঘণ্টা পার হওয়ার পরই বোঝা যাবে তার সার্বিক কন্ডিশন।
রোজিনারা ছয় বোন, এক ভাই। সঙ্গে বৃদ্ধ বাবা-মা। সংসারের খরচের একটি বড় অংশ জোগান দিত এই তরুণী। তার এমন দুর্ঘটনায় এখন অনিশ্চয়তায় পুরো পরিবার।
তার চিকিৎসার পাশাপাশি আর্থিকভাবে পুনর্বাসনও জরুরি। শুক্রবার রাত ৯টায় বনানীর সৈনিক ক্লাব থেকে মহাখালীর মাঝামাঝি স্থানে বিআরটিসির বাসের চাপায় রোজিনার ডান পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে ভর্তি করান। রাতেই তার পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়।
বেসরকারি টেলিভিশন জিটিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার বাড়িতে আট বছর ধরে গৃহকর্মীর কাজ করেন রোজিনা। হাসপাতালে নেয়ার পর থেকে তার চিকিৎসার ব্যয় বহন করছেন এই সিনিয়র সাংবাদিক। পরে সরকার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে।
খবর পেয়ে পঙ্গু হাসপাতালে ছুটে যান রোজিনার মামি মাজেদা খাতুন। তিনি জানান, রোজিনারা ছয় বোন ও এক ভাই। ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থানায় তাদের বাড়ি।
তার বাবার নাম রসূল মিয়া। তিনি একজন কৃষক। বড় বোন ও রোজিনা মিলে তার পরিবারের খরচ বহন করতেন। এখন মেয়েটির মতো তার পরিবারও অনিশ্চিতার মধ্যে পড়ে গেছে।
রোজিনার বাবা রসূল মিয়াও মেয়ের দুর্ঘটনার খবর শুনে ঢাকায় এসেছেন। তিনি বলেন, ‘সংসার চলবে কিবা (কেমন করে) এইডা আমি ভাবতাছি। আমার মাইয়াডার ভবিষ্যৎ কী অইব? কে কী কইরা খাইব? আমার তো সামর্থ্য নাই।’
রোজিনা জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় তার বান্ধবীর বাসা থেকে নিকেতনের উদ্দেশে ফিরছিল। সৈনিক ক্লাব থেকে কোনো বাস না পেয়ে সে হেঁটে মহাখালীর দিকে যাচ্ছিল।
এ সময় সেসহ কয়েকজন রাস্তা পার হচ্ছিল। দূর থেকে বিআরটিসির একটি দোতলা বাসকে সে ইশারা দিলে বাসটির গতি ধীর হয়ে আসে। কিন্তু হঠাৎই চালক তার সামনে এসে বাসের গতি বাড়িয়ে দেন। এ সময় তার পায়ের ওপর দিয়ে একটি চাকা উঠে যায়।
পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসক মিরাজ উদ্দিন মোল্লা জানান, রাতে যখন রোজিনাকে হাসপাতালে আনা হয় তখন তার পা দেহ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল। রক্তনালী, হাড়, মাংস সবই আলাদা ছিল। তার পায়ের অধিকাংশ মাংসপেশি বাসের চাকায় থেঁতলে গেছে।
বিআরটিসি বাসের চালক রিমান্ডে : রাজধানীর বনানীতে বাস চাপায় রোজিনা আক্তারের পা হারানোর মামলায় বিআরটিসি বাসের চালক শফিকুল ইসলাম মুন্নার একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শনিবার শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. গোলাম নবী রিমান্ডের এ আদেশ দেন। আসামিকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
অপর দিকে আসামিপক্ষে জামিন আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নাকচ করে আদালত রিমান্ডের ওই আদেশ দেন।