সরকারি চাকুরির প্রক্সি পরীক্ষা ও নিয়োগ জালিয়াতির চক্রের অন্যতম হোতা শেরপুর শ্রীবরদীর স্কুল শিক্ষক মাহবুবকে গ্রেফতার করেছে ময়মনসিংহ মডেল থানা পুলিশ। গত ৬ আগষ্ট বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারি ষ্টেশন মাষ্টার নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি দেয়ার সময় ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্র থেকে মাহবুবকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে মাহবুব ধরা পরার পর তার গ্রামে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে ঘাটাইল সেনানিবাসে কর্মরত বেসাময়িক অডিট কর্মকর্তা (এফপিও) মনিরুজ্জামান মনিরকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন বলে মনিরের পরিবার ও স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানিয়েছে।
জানা গেছে, গত ৬ আগষ্ট ময়মনসিংহে রেলওয়ের সহকারী স্টেশন মাস্টার পরীক্ষা কেন্দ্র জনৈক প্রার্থী আহসান উল্লাহর (রোল নং-২৬০৮৯৪২৭) পরীক্ষায় প্রক্সি দিচ্ছিলেন মাহবুব নামে এক ব্যক্তি। এ অভিযোগের ভিত্তিতে পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমতিয়াজ মোরশেদ মাহবুব নামে এক স্কুল শিক্ষককে হাতে নাতে আটক করে ২০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। মাহবুব শ্রীবরদী উপজেলার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
পরে এ বিষয়ে ৬ আগষ্ট ওই পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ মো. মেস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে মূল পরীক্ষার্থী আহসান উল্লাহ এবং প্রক্সি পরীক্ষার্থী স্কুল শিক্ষক মাহবুবুর রহমানকে বিবাদী করে ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন। ওই মামলায় মনির বা অন্য কাউকে জড়িত করা হয়নি। তবুও ময়মনসিংহের একটি অনলাইনে মাহবুবের সাথে প্রক্সি পরীক্ষায় ওই অডিট কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান মনিরের নাম জড়ানো হয়েছে। মূলত মনিরের সাথে মাহবুবের কোন সম্পর্ক নেই। শ্রীবরদী উপজেলার বালিয়াচন্ডি গ্রামের বাড়িতে মনিরের সাথে স্থানীয় এক প্রভাবশালীর সাথে দ্বন্দ্বের জের ধরে ওই নিউজে মনিরের নাম জড়িয়ে দেয়া হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার মো. আনোয়ার হোসেন জানায়, সোমবার পর্যন্ত এলাকায় মনিরের বিরুদ্ধে কোন অনিয়ম বা দুর্নীতির কথা শুনিনি। স্থানীয় একটি কুচক্রি মহল তাদের পারিবারিক দ্বন্দ্বকে পুঁজি করে মনিরকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ জানান, মনির ভাই আমাদের প্রাইভেট পড়াতো। সে খুবই মেধাবী ছাত্র ছিলেন। এখন কে বা কারা তার বিরুদ্ধে মিধ্যে অভিযোগে ফাঁসাতে চেষ্টা করছে। আসলে তার মত ভদ্র ও সৎ ছেলে এ গ্রামে আর নেই।
এ বিষয়ে সরেজমিনে বালিয়াচন্ডি গ্রামে গেলে মনিরের বাবা আবুল কাশেম জানায়, আমার ছেলে খুবই মেধাবী ছাত্র ছিলো। বিসিএসএ ভাইবা পর্যন্ত পরীক্ষা দিয়েছিলো কিন্তু ওই সময় তার ক্যাডারে চাকুরি না হলেও পরবর্তীতে সে প্রথমে গাজিপুরের রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে এবং সর্বশেষ ঘাটাইল সেনানিবাসে অডিট অফিসার পদে চাকুরি করছে। সে প্রতি সপ্তাহে ছুটিতে বাড়িতে এসে এখনও প্রাইভেট পড়ায়। সে খুবই সৎ এবং নম্র ভদ্র এবং পরিশ্রমী। এলাকার কেউ তাকে ওই প্রক্সি পরীক্ষার সাথে জড়িত রয়েছে তা বলতে পারবে না। এলাকার একটি কুচক্রি মহল তার চাকুরিতে ইর্ষাণি¦ত হয়ে তাকে মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে ফাঁসাতে চাইছে।
এ বিষয়ে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজাহান ইসলাম আশিক জানায়, মনিরুজ্জামান একজন সরকারী চাকুরিজীবী। তাকে জড়িয়ে সে কথা প্রচার হচ্ছে তা সত্য নয়। মনির একজন সৎ ছেলে হিসেবেই আমি চিনি। সে কোন প্রক্সি পরীক্ষার সাথে জড়িত নয়।
এ ব্যপারে মনিরুজ্জামান মনির জানায়, আমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিনে চাকুরী করি। তাই এহেন হীন কাজে আমার জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। আমার বিরুদ্ধে স্থানীয় একটি কুচক্রি মহল সমাজে আমাকে হেয় করার জন্য মিথ্যে পায়তারা করছে।
এ বিষয়ে শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার বিশ্বাস জানায়, মনিরুজ্জমান মনিরের বিরুদ্ধে অনলাইন নিউজে আনিত অভিযোগ সত্য নয়। অদ্যাবধি থানায় বা এলাকায় তার বিরুদ্ধে কোন মন্দ অভিযোগ নেই। এলাকায় তাকে মেধাবী ছাত্র হিসেবে সবাই এক নামেই চিনে।