নিজস্ব প্রতিনিধি: ৩২ বছর বয়সী যুবক সুমন। শিশুকাল থেকে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলো স্বাভাবিক ভাবে বাড়লেও সাথ দেয়নি তার পা জোড়া। চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বশান্ত হয়েছে পরিবার। নিরুপায় হয়ে জীর্ণ-শীর্ণ পা নিয়েই টেনে যাচ্ছেন সংসারের বোঝা। দীর্ঘ পঁচিশ বছর অপুষ্ট পায়েই প্যাডেল ঘুরিয়েছেন ত্রিচক্রযানের। তবুও কখনো ভিক্ষার উদ্দেশ্যে হাত পাতেননি। বৃষ্টিস্নাত বিকেলে চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ নিয়ে বসে ছিলেন এক চায়ের দোকানে। সেখানেই এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় তার।
কথা বলে জানা যায়, নোয়াখালী সোনাইমুড়ীর বারগাঁও এলাকার রাজিবপুরের বড় পুকুরপাড়ে বেড়েওঠা সুমনের। চলতি মাসে সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে নাটেস্বরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর দিয়েছেন। তবে সেখান থেকে সোনাইমুড়ীর রিক্সা গ্যারেজে যাতায়াতে তার খরচ হয়ে যায় প্রায় দেড়’শ টাকা। দিন শেষে রিকসার ভাড়া গুনতে হয় চার শো টাকা। সব মিলিয়ে সারা দিনের আয় হয় খুব সামান্য। যা দিয়ে কোনরকমে চলছে সংসারের খরচ।
সুমন জানান, বাবা-মা, স্ত্রী ও একটি শিশু সন্তান নিয়ে তার পরিবার। পাঁচ ভাই-বোন থাকলেও তারা খোঁজ নেয়না। বৃদ্ধ বাবা আর সে রিক্সা চালিয়ে দুর্মূল্যের বাজারে সংসারটাকে কোনরকমে চালিয়ে নিচ্ছিলেন। তবে গত বিশ দিন থেকে তার ভাড়ায় চালিত রিক্সাটা নষ্ট হয়ে গেছে। মহাজন নতুন কোন রিক্সা ভাড়া দিচ্ছেনা তাকে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় অন্য মহাজনেরাও দিচ্ছেনা রিক্সা। তাই গত বিশ দিন থেকে তার কোন আয়-রোজগার নেই। খোঁড়া পা নিয়ে আজকেও বের হয়েছিলেন রিক্সা ভাড়ার সন্ধানে। আজও মেলেনি, বেলা শেষে তাই ব্যর্থ হয়ে তাই বসে আছেন চায়ের দোকানে।
একদিকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা অন্যদিকে উপার্জনের একমাত্র মাধ্যমটি হাতছাড়া হওয়ায় দুশ্চিন্তার পাহাড় অসহায় সুমনের মাথায়। এখন কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।
সুমন জানায়, শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী হলেও আত্মমর্যাদায় বলিয়ান হওয়ায় ভিক্ষাবৃত্তি তার অপছন্দের। এমতাবস্থায় একটি ব্যাটারি চালিত রিক্সা ফিরিয়ে দিতে পারে তার আত্মমর্যাদা। বিত্তবানদের সহায়তায় পারে অসহায় সুমনকে শারিরীক প্রতিবন্ধকতা জয় করে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে।