বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাট মারফত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিঠি পেয়েছেন । চিঠিতে ট্রাম্প শেখ হাসিনাকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি তৈরির জন্য যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের প্রতি চাপ অব্যাহত রাখবে।’
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাট বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এই চিঠি হস্তান্তর করেন। বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন- এ ব্যাপারে কোন প্রশ্ন নেই যে, এই সংকট সৃষ্টির জন্য দায়ী মিয়ানমারকে অবশ্যই জবাবদিহিতা করতে হবে। ট্রাম্প রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক নেতৃত্বদানে অবদানের জন্য তার ভূয়সী প্রশংসা করেন উল্লেখ করে প্রেস সচিব জানান, ট্রাম্প বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে উদার মানবিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া একটি বিরাট বোঝা, তবে বিশ্ববাসী জানে বাংলাদেশের পদক্ষেপে হাজার হাজার জীবন রক্ষা পেয়েছে। ট্রাম্প চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আপনার পদক্ষেপে বাংলাদেশের জনগণের চরিত্র ও দৃঢ়তা প্রতিফলিত হয়েছে। এটি তারা অর্জন করেছে ১৯৭১ এর কঠোর সংগ্রামের মাধ্যমে। নিজ দেশকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সহায়তাকারী দাতাদেশ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের সহযোগিতায় পাশে থাকবে।’
ট্রাম্প বলেন, আমি আশা করি বাংলাদেশ এই নেতৃত্ব অব্যাহত রাখবে বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমের প্রাক্কালে ভূমিকা পালন করবে। যা গোটা বিশ্ব থেকে বাংলাদেশের জন্য সম্মান বয়ে আনবে। প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাকে পত্র দেয়ার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ অব্যাহত রাখতে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি পুনরায় আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণে ভাসানচর নামের একটি দ্বীপ উন্নয়ন করছে। তিনি বলেন, কক্সবাজারে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়ায় স্থানীয় জনগণের জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং সেখানকার পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ইউএসএইড বিশ্বব্যাপী শরণার্থীদের সহায়তার জন্য কর্মসূচি নিয়ে থাকে। কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সমস্যা লাঘবে ইউএন সিস্টেমের অধীনে ইউএসএইড কাজ করে যাচ্ছে। বার্নিকাট বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে জানান, ইউএসএইড প্রেসিডেন্ট মার্ক গ্রীন এবং কার্টার সেন্টারের সিইও ও সাবেক রাষ্ট্রদূত ম্যারী এ্যান পিটার্স বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে খুব শিগগির বাংলাদেশ সফর করবেন।
মার্কিন দূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং গ্লোবাল ওমেন লিডারশীপ দেয়ায় তাকে অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং তাদের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।