রাজনীতি

বিশাল বাজেট জনগণের কল্যাণে আসবে না – বিএনপি

Published

on

২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেছে । বিএনপির বিভিন্ন নেতাকর্মীরা বলেছে, এই বিশাল বাজেট জনগণের কোনো কল্যাণে আসবে না। এটি বাস্তবায়ন অসম্ভব। বরং প্রস্তাবিত বাজেট গরিবকে আরও গরিব করবে, ধনীদের আরো ধনী করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে লুটপাটের জন্যই এ বিশাল বাজেট। এক কথায় বলা যায় প্রস্তাবিত বাজেট জনগণের রক্ত চোষার লুটের বাজেট।

গতকাল বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে বাজেট প্রসঙ্গে এই প্রতিক্রিয়া জানান।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার বিশাল ঘাটতির ঋণনির্ভর ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছে। প্রস্তাবিত বাজেট জনকল্যাণমূলক না হওয়ায় জনগণ হতাশ হয়েছে। তারা জনগণের সরকার নয়, আর এই সংসদ সদস্যরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন, তাই তাদের কাছ থেকে জনকল্যাণমুখী বাজেট আশা করা যায় না। প্রস্তাবিত বাজেট মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না।

রিজভী বলেন, ‘মূলত, নির্বাচনকে সামনে রেখে সর্বশেষ লুটপাটের জন্যই এ বিশাল বাজেট পেশ করা হয়েছে। ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বাজেট বড় করা হয়েছে। বাজেটের আকার বড় করে জনগণের সঙ্গে ধাপ্পাবাজি করা হয়েছে। এ বাজেট বাস্তবায়ন অসম্ভব। এটা মানুষকে বোকা বানানোর বাজেট, এটা প্রতারণার বাজেট।

গত বছরের বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন গত অর্থবছরেও ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট দেয়া হয়েছিল। কি দেখলাম লুটপাট আর হরিলুট। সারা দেশের রাস্তা ঘাটের দিকে তাকান। দেশের ৮৫ হাজার কিলোমিটার সড়ক বর্তমানে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। অথচ মেগা প্রকল্পের নামে তারা বাঘা দুর্নীতি করেছে। গতবার এত বিগ বাজেট দেয়ার পরও বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে। আর দেশের উত্তরাঞ্চলের হতদরিদ্রের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবারো অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে শুধু লুটপাটের জন্য। প্রস্তাবিত বাজেটেও মেগা দুর্নীতির জন্য সকল পথ খোলা রাখা হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোর অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা বিদ্যমান।

তিনি বলেন, বাজেটে যে বড় ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ করা অসম্ভব। সেজন্য ঋণ ও সঞ্চয়পত্রের ওপর ঝুঁকতে হবে সরকারকে। প্রস্তাবিত বাজেট কর, ঋণ আর বিদেশি অনুদান নির্ভর। বাজেটে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা, এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা আদায় করা হবে। যা জনগণের রক্ত চুষে আদায় করতে হবে। তাই এক কথায় বলা যায় প্রস্তাবিত বাজেট জনগণের রক্ত চোষার লুটের বাজেট। চলতি আয়-ব্যয়ে বিশাল ঘাটতি থাকবে, কারণ আমদানি ব্যয় বাড়ছে, রফতানি আয় কমছে। রফতানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মুল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।

রিজভী বলেন, এ বাজেট জনকল্যাণে কোনো কাজে আসবে না। প্রস্তাবিত বাজেট গরিবকে আরো গরিব করবে, বাজেটে ধনীদেরকে আরো ধনী করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এমনিতে দারিদ্র কমার হার কমে যাচ্ছে, এ বাজেটে দারিদ্র কমার হার আরো কমে যাবে। কারণ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না, অর্থনীতির নতুন খাত তৈরি হচ্ছে না। প্রচলিত রফতানিযোগ্য খাতগুলোর বহুমুখীকরণে কোনো নীতিমালা নেই এই সরকারের বাজেটগুলোতে। বাজেটে ব্যাংক লুটপাটকারীদের আরো সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। ব্যাংকের কর্পোরেট কর কমিয়ে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোরও কর কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যাংক মালিকরা যা চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী তাই করেছেন। ব্যাংক মালিকদের আরো বেশি লুটপাটের সুযোগ করে দেয়ার বাজেট এটি। প্রস্তাবিত বাজেটে জনকল্যাণমূলক কাজে যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক খাতে বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল। ফলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে কোনো উন্নয়ন হবে না। পোশাক খাতসহ করপোরেট খাতে কর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পোশাক খাতে বর্তমানে যে দুরাবস্থা চলছে তাতে সে খাতে দুরাবস্থা আরো বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, বাজটে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোনো সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা নেই। দেশে সুশাসন না থাকায় বর্তমানে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নেই। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বন্ধ রয়েছে। শেয়ার মার্কেট থেকে বিদেশি বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছে। বর্তমানে দেশে কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি। বাজেটে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা তেমনভাবে না রাখায় বেকার সমস্যা আরো বেড়ে যাবে। প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে সকল জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। বাড়ি-ঘরের ট্যাক্স বাড়বে, বাসাভাড়া বাড়বে, ফলে সামগ্রিকভাবে নিম্ম মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা বিপাকে পড়বে। কারণ মূল্য সংযোজন করের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। ভ্যাটের ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পেলে মধ্য বিত্ত ও নিম্ন মধ্য বিত্তরাই কষ্ট পাবে বেশি। প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা অগ্রাহ্যই থেকেছে। এর আগেও সার্বজনীন পেনশনের কথা বলা হলেও বাস্তবায়ন হয়নি, এবারো তাই।’

সরকারের সমালোচনা করে রিজভী আরো বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তির প্রশস্ত মহাসড়কে মানবজাতির বিচরণ, অথচ এই অবৈধ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে, কিন্তু বাজেটে ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল ব্যবহারের ওপর কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।’

জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭.৮। বিশ্বব্যাংকসহ বিশেষজ্ঞরাও বলছেন যে, প্রবৃদ্ধি ৭ এর নিচে থাকবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ৭.৮ প্রবৃদ্ধি অসম্ভব। কারণ দেশে সুশাসন নেই, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নেই, কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই, বিদেশি রেমিটেন্স দিন দিন নিম্নগামী হচ্ছে। সুতরাং প্রবৃদ্ধির এই মাত্রা অর্জন করা কখনোই সম্ভব নয়। সুতরাং প্রস্তাবিত ৭.৮ প্রবৃদ্ধি ডাহা মিথ্যাচার। ’

নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করতে বিএনপি না চাইলেও ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। আসলে সিইসি সরকারের সঙ্গে এক অলিখিত বশ্যতার আবদ্ধ। আগামী নির্বাচনের ফল ক্ষমতাসীনদের পক্ষে নিতে নানা কারসাজি ও নতুন নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে সিইসি। ’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version