বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

মানুষের মস্তিষ্ক হ্যাক হতে পারে

Published

on

২০২০ সালের শুরুর দিকের ঘটনা। দক্ষিণ কোরিয়ার তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের প্রচেষ্টায় মৃত মেয়ে না-ইয়নের সঙ্গে মা ঝাং জি-এর দেখা হয়। মা তার মৃত মেয়েকে চোখের সামনে দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। একসঙ্গে সুন্দর কিছু সময় কাটান তারা।

ভাবছেন, এটি কীভাব সম্ভব হলো? ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অর্থাৎ ‘ভিআর’ টেকনোলজির মাধ্যমে এটি সম্ভব হয়েছে, যা কিনা মেটাভার্স দুনিয়ারই একটি অংশ। মা-মেয়ের সেই আবেগঘন দৃশ্য বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি টেলিভিশন। এই ডকুমেন্টারি অনলাইনে এক সপ্তাহে রেকর্ড ১৩ মিলিয়ন মানুষ দেখেছে।

প্রথমেই আসি মেটাভার্স কী সে বিষয়ে। ‘মেটা’ একটি গ্রিক শব্দ, যার অর্থ ওপর বা পরে। মেটা এবং ইউনিভার্স নিয়ে মেটাভার্স। সে হিসেবে মেটাভার্স অর্থ- পৃথিবীর বাইরের জগৎ। এটি এমন এক অন্তহীন ভার্চুয়াল জগত যেটি মূলত ভিআর প্রযুক্তি নির্ভর। এর প্রধান উপকরণ হবে অগমেন্টেড রিয়েলিটি গ্লাস। সেই সঙ্গে স্মার্টফোন অ্যাপ, হাই স্পিড নেটওয়ার্ক, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ও মেশিন লার্নিং, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেটসহ অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি।

এতে চোখ দুটি আর চারকোণা ফোনের ডিসপ্লেতে সীমাবদ্ধ না থেকে বরং চশমা পরে চোখের সামনেই দেখা যাবে থ্রি-ডাইমেনশনাল ওয়ার্ল্ড। সশরীরে উপস্থিত না থেকেও বাস্তবের মতোই সব উপভোগ করা যাবে। অর্থাৎ কথা বলা, মিটিং সবই মনে হবে সামনা-সামনি হচ্ছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট পরলেই ব্যবহারকারী চলে যাবেন ভার্চুয়াল জগতে।

বিজ্ঞানীদের মতে, বর্তমান সময়ের আলোচিত এই প্রযুক্তির ওপরেই দাঁড়াবে সমগ্র বিশ্বের নেটওয়ার্ক। সহজ কথায়, মেটাভার্স হবে ইন্টারনেট জগতের ভবিষ্যৎ। ভাবছেন এ আবার কিভাবে সম্ভব হবে। একটু পেছনে ফিরে তাকালেই দেখবেন, অনেক আগে ওয়ান-জি নেটওয়ার্কের যুগ ছিল, আর এখন বাংলাদেশে ফাইভ-জি’র যুগ। এর অর্থ হচ্ছে সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির হিউজ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বিশ্ব যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে এটা বলা যায় যে, মেটাভার্স কিংবা ‘ভিআর’ টেকনোলজি ডিজিটাল ও ফিজিক্যাল ওয়ার্ল্ডকে মার্জ করে আরো এক্সপ্যান্ড করবে। মার্ক জাকারবার্গ নিজেই বলেছেন, মেটাভার্স শুধু ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নয়, এর চেয়েও বেশিকিছু। মেটাভার্সে এমন সব কাজ করা যাবে, যা এখনও মনে হবে অবিশ্বাস্য কিংবা কাল্পনিক। এই প্রযুক্তির সাহায্যে ভার্চুয়ারি অংশ নিতে পারবেন কনসার্টে। এমনকি ঘুরতে যাওয়া, ভার্চুয়াল জামা-কাপড় কেনাও যাবে। সবই হবে ভার্চুয়াল জগতে। অর্থাৎ, এত কিছু করতে কোথাও যেতে হবে না আপনাকে।

আবার ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ক্ষেত্রেও মেটাভার্স দারুণ কাজ করবে। কর্মীরা ভিডিও কলের পরিবর্তে একে-অন্যকে ভার্চুয়াল জগতে সরাসরি দেখতে পাবেন থ্রি-ডাইমেনশনাল একটি অফিসের ভেতর। বর্তমানে ফেসবুক, মাইক্রোসফট, এনভিডিয়া, অ্যাপল, গুগল এবং গেমস নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান রোব্লক্স, এপিক গেমস কাজ করছে নিজেদের মেটাভার্স তৈরিতে। এই ভার্চুয়াল জগত নিয়ে ইতোমধ্যে ফেসবুক তাদের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। সেই অনুযায়ী পরীক্ষামূলক কার্যক্রমও এগিয়ে চলছে সমান তালে। তাদের হরাইজন ওয়ার্ল্ডস, হরাইজন ওয়ার্করুমস, ফিটনেস অ্যান্ড ওয়েলনেস সার্ভিস, গেমিং -এধরণের ফিচারগুলো খুব শিগগিরই আলোড়ন সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করছেন প্রযুক্তিবিদরা।

হরাইজন ওয়ার্ল্ডস-
এটি হবে যে কারও ঘরের ভার্চুয়াল পরিবেশের মতোই। যেখানে ভার্চুয়ালি আমন্ত্রণ জানানো যাবে বন্ধু-সহকর্মীদের, একসঙ্গে আড্ডা দেয়া, খেলাধুলা করা, ভিডিও স্ট্রিমিংসহ সবই করা যাবে। যার পুরোটাই ঘটবে বাস্তব জগতের মতোই।

হরাইজন ওয়ার্করুমস-
কোভিড-১৯ সময় ওয়ার্ক ফ্রম হোমের থিম অনুসারেই ফেসবুক হরাইজন ওয়ার্করুমস প্ল্যান করেছে। যেখানে ব্যবহৃত হয়েছে মিক্সড-রিয়েলিটি ডেস্ক ও কী-বোর্ড ট্র্যাকিং, হ্যান্ড ট্র্যাকিং, ভিডিও কনফারেন্সিং ইন্টিগ্রেশন, ওকুলাস এভাটারসেরমতো বিভিন্ন ফিচার। যার ফলে মিটিং, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামসহ সব কাজ করা সম্ভব সহকর্মীদের পাশাপাশি বসেই।

ফিটনেস অ্যান্ড ওয়েলনেস সার্ভিস-
সম্প্রতি মেটার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘উইদিন’ ও ‘সুপারন্যাচারাল’ নামের ভিআর টেকনোলজির ভার্চুয়াল ওয়ার্কআউট অ্যাপ্লিকেশন। এতে করে ঘরের মধ্যেই জিমনেশিয়াম আর প্রশিক্ষকের সাহায্য ছাড়াই সেরে নিতে পারবেন রেগুলার এক্সার্সাইজ। শুধু প্রয়োজন ওকুলাসের হেডসেট আর বক্সিং গ্লাভস।

গেমিং-
ভার্চুয়াল জগতের আরেকটি জনপ্রিয় ক্ষেত্র হতে যাচ্ছে গেমিং। বিশ্লেষকরা বলছেন, এখানে থ্রি-ডি গেমিংয়ের একটা ফিলিং পাওয়া যাবে। মেটাভার্সে তথ্যের গোপনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি ফেসবুক। তবে অতীতে ফেসবুক যেভাবে ব্যবহারকারীদের প্রাইভেসি বা ইনফরমেশন ম্যানেজম্যান্ট করেছে তাতে টেনশন তো থেকেই যায়। মেটাভার্সে ব্যবহারকারীদের আরও বেশি তথ্য থাকবে। এর সুরক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version