মার্কিন প্রভাবশালী পত্রিকা নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আচরণ যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক কঠিন করে তুলছে। বিশেষ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ইংরেজিতে কথা বলা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হাসি-ঠাট্টা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটাচ্ছে।
নয়াদিল্লিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এই ভিডিওতে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রতিপক্ষের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর ইংরেজিতে কথা বলা নিয়ে বিদ্রূপ করছেন। অভ্যন্তরীণ আলোচনায়ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ নিয়ে উপহাস করেন। ভারতের পত্রিকা ‘দ্য হিন্দু’র পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক সম্পাদক সুহাসিনি হায়দার বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজেও নিশ্চিত নন যে তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবেন।
ভারত এখন মনে করছে যে, আগের মার্কিন প্রেসিডেন্টরা যেভাবে ভারতকে উদারভাবে দেখতেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেভাবে দেখছেন না। এটা এখন কূটনীতির মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ কাল বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পিও যখন নয়াদিল্লিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিসকে নিয়ে আসবেন তখন বিষয়টি তাকে (পম্পিও) সামলাতে হবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, হঠাৎ করেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হঠকারী আচরণ সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইরানের কাছ থেকে তেল কেনায় বাধা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আবার রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র না কিনতেও নিষেধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিনলে নিষেধাজ্ঞা দেয়ারও হুমকি দিয়েছে। ২০১৪ সালে মোদী ক্ষমতায় আসার পর প্রথমেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা চালান। কিন্তু ওয়াশিংটনের মনোভাব সম্পর্কে অনিশ্চিত ভারত। তাই প্রধানমন্ত্রী মোদী রাশিয়া এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায় চীনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভারতকে পাশে রাখতে চাইছে।
গত অক্টোবরে ট্রাম্পের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনও নয়াদিল্লি সফরে সেই আকাঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিসের নেতৃত্বে পেন্টাগনও ভারতের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এজন্য হাওয়াই ভিত্তিক আমেরিকান কমান্ডের নাম পরিবর্তন করে ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড রাখা হয়। এটা করা হয় ভারতকে খুশি করতে যাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। অতীতের মার্কিন প্রেসিডেন্টরা ভারতকে বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা দিতেন। ভারত রাশিয়া
থেকে সামরিক অস্ত্র কিনলে তারা মনে করতেন এর মাধ্যমে চীনের বিপরীতে ভারত শক্তিশালী হবে। তাই রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনায় বিরোধিতা করতো না যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বর্তমান কংগ্রেস রাশিয়াকে শাস্তি দিতে গিয়ে ভারতকে অস্ত্র কেনায় বাধা দিচ্ছে যা হিতে বিপরীত হতে পারে।