বিডিপত্র ডেস্ক: গ্রীষ্মকাল শুরু হতে আর বেশি দিন বাকি নেই। প্রকৃতির ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা ভালো মতোই টের পাচ্ছেন রাজধানীবাসী। এ মৌসুমের চান্দি-ফাটানো-রোদে শহরের রাস্তা-ঘাটে চলাফেরা করাটা বেশ কষ্টকর। তাই শরীরকে ঠাণ্ডা করতে শীতল জাতীয় পানীয়, বিশেষ করে জ্যুস বা শরবতের প্রতি রাজধানীবাসীর ঝোক বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিনিয়ত রাজধানীর কোলাহলে প্রবেশ করেন অনেক মানুষ। কেউ আসেন ব্যবসার কাজে, কেউ আসেন চাকরির খোঁজে, কেউ আসেন উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায়, কেউ আবার আসেন শুধুই ঘুরতে। তাছাড়া এ শহরের বাসিন্দাদের প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততা তো আছেই।
প্রচণ্ড গরমে রাজধানীর যানবাহন ও পথচারীদের ঠেলাঠেলি সামলাতে গিয়ে গলা শুকিয়ে আসাটা স্বাভাবিক। এমন পরিস্থিতিতে এসব তৃষ্ণার্ত মানুষ ছুটে যান রাস্তায় বিক্রি হওয়া ঠাণ্ডা সরবতের অস্থায়ী দোকানগুলোতে। প্রকৃতির গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা পানীয়ের চাহিদা বাড়তে থাকায় ঢাকার রাস্তা-ঘাটে সহজেই দেখা মেলে আখের রস, তরমুজের-আনারসের শরবতসহ বিভিন্ন ধরনের ঠাণ্ডা জ্যুসের দোকান। হাতের কাছে কাক্সিক্ষত পণ্য পাওয়ায় এসব দোকানে ক্রেতার ভিড় লেগে থাকতে দেখা যায় সারাক্ষণ। কিন্তু এই ক্রেতাদের অনেকেই জানেন না, কী দিয়ে এই শরবত বা পানীয় তৈরি?
রাজধানীতে শরবতের সবচেয়ে বেশি রমরমা ব্যবসা লক্ষ্য করা যায় গুলিস্তান, মতিঝিল, শাহবাগ, ফার্মগেট, মিরপুর, পল্টন ও এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে। আর এসব শরবত তৈরির প্রক্রিয়া যে সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর ও মানবদেহের জন্য প্রচণ্ড ক্ষতিকর, তার প্রমাণ মিলল গুলিস্তান গিয়ে। গুলিস্তান বাসস্টপের কাছে শরবতকে সুস্বাদু করার জন্য নোংরা পানির সঙ্গে কনডেন্সড মিল্ক মেশাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। শরবতের চেহারা দেখতে সুন্দর করার জন্য যোগ করা হাচ্ছে অস্বাস্থ্যকর রং এবং স্বাদে মিষ্টি করার জন্য ঢালা হচ্ছে সেকারিন, টেস্টিং সল্ট ইত্যাদি।
যেসব ফল থেকে এসব পানীয় তৈরি হচ্ছে, তা বেশিরভাগ সময়ই খোলাভাবে রেখে দেওয়া হয়। এগুলোর ওপর অনবরত পড়তে থাকে ধুলো-বালি, চলতে থাকে মশা-মাছির উড়া-উড়ি। অনেক সময় তা ধোয়া হয় নোংরা পানিতে। আর বিক্রতেরা পরিবেশন করেন নোংরা হাতে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে জানা গেছে, গরমের মৌসুমে এসব শীতল খাবার মানুষের শরীর ঠাণ্ডা রাখরতে সাহায্য করে। এছাড়া যানজটের এই শহরে গরমে মানুষ হাফিয়ে উঠেন। ফলে এসব খাবার তাদেরকে কিছুটা সময়ের জন্যে হলেও শীতল রাখে।
কিন্তু এ বিষয়ে একেবারেই ভিন্ন মতামত পোষণ করেন ডা. রাশিদা কেয়া। তিনি বলেন, এসব খাবার কখনই শরীরকে শীতল করে না। বরং আমাদের শরীরের তাপমাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। কারণ, এগুলোতে রাস্তার ধুলাবালিসহ বিভিন্নরকম জীবাণু যুক্ত থাকে। এসব জীবাণু আমাদের দেহে প্রবেশ করলে প্রয়োজনীয় লবণ শরীর থেকে বের করে দেয়। এতে গরম বেশি লাগতে থাকে এবং অতিরিক্ত ঘাম হয়। ফলে আবার এসব পানীয় পান করার ইচ্ছা জাগে মনে।
ঠাণ্ডা শরবতের জন্য হয়তো সাময়িকভাবে মনে হতে পারে শরীরও ঠাণ্ডা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টা পুরোটাই মানসিক। আবার গরমে হুটকরে ঠাণ্ডা পানি পান করায় শরীরের তাপমাত্রারও হেরফের হয়। ফলে ডাইরিয়ার মতো রোগ-ব্যধি দেখা দিতে পারে বলে জানান উত্তরা নিবাসী ডা. রাশিদা কেয়া। অনেকেই বলেন, রাস্তার এই ঠাণ্ডা পানীয়তে বরফ দেওয়া হয়, তা মাছ সংরক্ষণে ব্যবহৃত বরফ। এ বরফ মিশ্রিত পানি খেলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক রোগ দেখা দিতে পারে বলেও মতামত প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা।
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের নিউট্রিশনিস্ট খাদিজা খাতুন জানান, ফল খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। আর গরমে তা খাওয়াও প্রয়োজন। কিন্তু রাস্তার শরবত শরীরের জন্য সম্পূর্ণ বিপরীত কাজ করে। নিয়মিত পেটে পীড়া, গ্যাসটিকসহ বিভিন্ন ছোট-বড় রোগের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। তাই এসব খাবার বর্জন করা উচিৎ। আর বাচ্চাদের
জন্য এ ধরনের খাবার একদমই খাওয়া ঠিক হবে না। তিনি বলেন, ফল কিনে বাসায় নিয়ে পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে খাওয়া উচিৎ। এমনিতেই বাজারের ফলে কেমিক্যাল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপর ওপর যদি তা অস্বাস্থ্যকর ফলের দোকান থেকে কিনে খাওয়া হয়, তবে সমস্যা বিকট আকার ধারণ করতে পারে।