মিজান,কাউনিয়া প্রতিনিধিঃ আমরা তিস্তা চরের মানুষ, ৩০ কিঃমিঃ দূরে রংপুর গিয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করা আমাদের দুরূহ ব্যাপার। ভাগ্গিস কাউনিয়ার গুরুজনেরা এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাই আমরা ডিগ্রী পাস করার স্বপন দেখি আর তা সত্যিও হবে ইন-শা-আল্লাহ। কারণ আমাদের বাড়ীর কাছেই এখন উচ্চ শিক্ষার কলেজ। কথা গুলো আবেগে উদ্বেলিত হয়ে বললেন কাউনিয়া মহিলা ডিগ্রী কলেজের বিএসএস ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী তহুরা বেগম ও তানজিলা আক্তার। তাদের স্বপ্ন পূরণে মাইলফলকের কাজ করছে কাউনিয়া মহিলা ডিগ্রী কলেজ।
উত্তরের জনপদ রংপুরের তিস্তা নদী বেষ্টিত কাউনিয়া উপজেলার অবহেলিত নারীদের একটা বড় অংশের লেখাপড়ার সাধ ছিলো কিন্ত সাধ্য ছিলো না। তাই তাদের উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজনে উপজেলার কেন্দ্রস্থলে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে উপজেলার বীর মূক্তিযোদ্ধা, শিক্ষানুরাগী ও বিশিষ্ঠজনের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় কাউনিয়া মহিলা কলেজটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শুরুতেই কাউনিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কলেজটির ক্লাস শুরু করা হলেও এলাকাবাসীর সফল প্রচেষ্টায় ১৯৯৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী কাউনিয়া থানার সামনে নিজস্ব জমিতে কলেজটির স্থায়ী ভবন তৈরী করা হয়। হাতে গোনা মাত্র সাত জন শিক্ষার্থী নিয়ে পথচলা শুরু। সেই থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এগিয়ে চলছে মহিলাদের উচ্চ শিক্ষার কার্যক্রম। বর্তমানে কলেজটিতে সরকারী ভাবে চারতলা ভবনসহ বেশ কয়েকটি বিল্ডিং রয়েছে। ৯৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী ও প্রায় ১২’শ শিক্ষার্থী নিয়ে পাঠদান চলছে কলেজটিতে। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেনী ছাড়াও বিএ, বিএসসি, বিবিএ, বিকম ও কারিগরি ও কয়েকটি বিষয়ে সম্মান (প্রস্তাবিত) শাখায় নিয়মিত পাঠদান অব্যাহত আছে। প্রতিষ্ঠালগ্নে এলাকাবাসী অবকাঠামো নির্মানের জন্য বাঁশ, ধান ও নানা রকম সাহায্য সহযোগিতা করে কলেজটি স্থাপনে অগ্রনি ভূমিকা রাখেন। তাই বর্তমানে কলেজটি উপজেলার শ্রেষ্ঠ মহিলা কলেজ হিসেবে পরিচিত।
এব্যাপারে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাবেক সভাপতি ও বীর মূক্তিযোদ্ধা কোম্পানী কমান্ডার সরদার আব্দুল হাকিম জানান, কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠির লেখাপড়ায় বিশেষ ভুমিকা রেখে আসছে। তাছাড়া কাউনিয়া মহিলা কলেজটির সাফল্যে মহিলাদের উচ্চ শিক্ষার এক মাইলফলক। বর্তমান শিক্ষা বান্ধব সরকারের কাছে আমাদের দাবী যেহেতু কাউনিয়ায় কোনো সরকারী মহিলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই, তাই নারীদের উচ্চ শিক্ষা আরো সহজ করতে কলেজটিকে সরকারীকরণ করা হোক।
অপরদিকে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হেমন্ত কুমার জানান, রংপুরের এ উপজেলাটির মানুষের অধিকাংশই চরাঞ্চলের বাসিন্দা তাই এক সময় নারীদের উচ্চ শিক্ষা দুরূহ বিষয় ছিলো কিন্ত এ কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর সেটি আর নেই। এছাড়াও এই কলেজ থেকে পাস করা অনেক ছাত্রী এখন বিদেশেও উচ্চ ডিগ্রী লাভ করা ছাড়াও দেশের উচ্চ পদে কাজ করে আসছে। বর্তমানে কলেজটিতে এইচএসসি, স্নাতক, কারিগরি কেন্দ্র ছাড়াও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালযের এইচএসসি ও ডিগ্রী প্রোগ্রামের টিউটোরিয়ার সেন্টার রয়েছে। তাই নারী উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজনে কলেজটি সরকারীকরণ এখন সময়ের দাবী।