নিউজ ডেস্ক:
পাঁচজন নারীকে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদকের’ জন্য চূড়ান্ত করেছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সম্মেলনকক্ষে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন’ ও ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক’ প্রদানের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। তিনি বলেন, দেশপ্রেম, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, সাহসিকতা, ত্যাগ ও অনুপ্রেরণার উৎস বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিবসকে (৮ আগস্ট) ‘ক’ শ্রেণির জাতীয় দিবস ঘোষণা করেছে সরকার। বঙ্গমাতার অবদানকে চিরস্মরণীয় করার লক্ষ্যে এ বছর থেকে নারীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত সর্বোচ্চ জাতীয় পদক ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ পদক প্রদান করা হবে। এ অনুষ্ঠানে এ বছরই প্রথম স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ, শিক্ষা, গবেষণা, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন এবং রাজনীতি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পাঁচজন বিশিষ্ট নারীকে এই পদক প্রদান করা হবে। এ বছর যারা পদক পাচ্ছেন-
‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ’ ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মমতাজ বেগম (মরণোত্তর), শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াক্ষেত্রে টাঙ্গাইলের জয়া পতি (মরণোত্তর), ‘কৃষি ও পল্লীউন্নয়ন’ ক্ষেত্রে পাবনার কৃষি উদ্যোক্তা মোছা. নুরুন্নাহার বেগম, ‘রাজনীতি’ ক্ষেত্রে কুমিল্লার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ জোবেদা খাতুন পারুল এবং ‘গবেষণা’ ক্ষেত্রে নেত্রকোনার লেখক ও গবেষক নাদিরা জাহান (সুরমা জাহিদ)। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী পদকপ্রাপ্তদের ১৮ ক্যারেট মানের ৪০ গ্রাম স্বর্ণদ্বারা নির্মিত পদক, পদকের রেপ্লিকা, চার লাখ টাকার চেক ও সম্মাননাপত্র তুলে দেবেন।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ একইসূত্রে গাঁথা। বঙ্গবন্ধু ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর থেকেই স্বাধীনতার লক্ষ্যে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে ধাপে ধাপে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেন। জাতির পিতার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তানি শাসন ও শোষণ থেকে মুক্ত করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রতিটি পদক্ষেপ ও কার্যক্রম বাস্তবায়নে জাতির পিতার নেপথ্য শক্তি, সাহস ও বিচক্ষণ পরামর্শক হয়ে আছেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। প্রতিমন্ত্রী এ সময় সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৮ আগস্ট বেলা সাড়ে ১০টায় গণভবন থেকে অনলাইনে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন’ ও ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক প্রদান’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করবেন। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন থেকে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। অনলাইনে আরও সংযুক্ত থাকবে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নারীদের আর্থিক সাহায্য ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বঙ্গমাতার ৯১তম জন্মবার্ষিকীতে ৬৪ জেলায় চার হাজার অসচ্ছল নারীকে সেলাই মেশিন ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দুই হাজার নারীকে দুই হাজার টাকা করে মোট ৪০ লাখ নগদ অর্থ প্রদান করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদিন অনলাইনে বঙ্গমাতার জন্মস্থান গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নগদ অর্থ ও সেলাই মেশিন বিতরণ কার্যক্রম শুভ উদ্বোধন করবেন।
সংবাদ সম্মেলন প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গমাতা, সংকটে সংগ্রামে নির্ভীক সহযাত্রী’। ঢাকায় জাতীয়ভাবে আয়োজনস্থলে অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। সারাদেশে জেলা প্রশাসকদের সাথে সমন্বয় করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর-সংস্থা বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উদযাপনে আলোচনা সভার আয়োজন করবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহ বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদযাপন করবে। এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম বঙ্গমাতার সংগ্রামী জীবন, আত্মত্যাগ, সাহসিকতা, দেশপ্রেম, মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অপরিসীম অবদান এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের অজানা তথ্য জানতে পারবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দিবসটি উপলক্ষে জাতীয়ভাবে ক্রোড়পত্র ও পোস্টার প্রকাশ করা হবে। মহীয়সী নারী বঙ্গমাতার গৌরবময় কর্মজীবনের ওপর প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার সরাসরি সম্প্রচার করবে। বিটিভির মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলসমূহ সরাসরি সম্প্রচার করবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও বেতারকেন্দ্র দিবসটির তাৎপর্য তুলে বঙ্গমাতার কর্মময় ও বর্ণাঢ্য জীবনের বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিত করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রামচন্দ্র দাস, অতিরিক্ত সচিব ফরিদা পারভীন, জাতীয় মহিলা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক বেগম মাকসুরা নূর ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।