ছয় বার উৎক্ষেপণের তারিখ পরিবর্তনের পর আগামী ১০ মে কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের নতুন তারিখ ঘোষণা করেছে বিটিআরসি । নতুন তারিখ ঘোষণা হলেও উৎক্ষেপণের ব্যাপারে এখনো শতভাগ নিশ্চিত নয় বিটিআরসি। শুধুমাত্র উৎক্ষেপণের দিন সকালে এ বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে থাকে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) মিডিয়া উইং জানিয়েছে, আগামী ১০ মে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ হবে। এ ব্যাপারে বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সোমবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ১০ মে চূড়ান্ত তারিখ তা এই মুহূর্তে বলা যাবে না। সাধারণত যেদিন উৎক্ষেপণ হয় সেদিন সকাল বেলা বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশ সময় সোমবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় যাচ্ছেন বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।
এদিকে উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রায় ৩০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী এবং বর্তমান তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ব্যাপারে নিউইয়র্ক থেকে টেলিফোনে জানতে চাইলে তারানা হালিম ইত্তেফাককে জানান, আগামী ১০ মে সম্ভাব্য তারিখ রয়েছে উৎক্ষেপণের। বিটিআরসি এ ব্যাপারে তাকে অবহিত করেছে এবং সে অনুযায়ী বাংলাদেশ সময় সোমবার সন্ধ্যায় তিনি এবং প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রওনা হবেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও এ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে জানান তারানা হালিম।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান।
এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, বিভিন্ন রাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে গেলে নিজস্ব স্যাটেলাইটের অধিকারী বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসাবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। এছাড়া এই স্যাটেলাইট স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের যেমন নির্ভরতা কমবে অন্য দেশের ওপর, তেমনি দেশের অভ্যন্তরীণ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে।
স্পেস এক্স-এর উৎক্ষেপণযান বা রকেট ফ্যালকন-৯ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে মহাকাশে ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত অরবিট প্লটে স্থাপন করবে। ফ্রান্সের কান টুলুজ ফ্যাসিলিটিতে নির্মিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ইতিমধ্যে ফ্রান্স থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় কার্গো বিমানে করে উৎক্ষেপণস্থল ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোর ক্যাপ ক্যানাভেরালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম খ্যাতনামা স্যাটেলাইট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থেলেস এলেনিয়া স্পেস বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি নির্মাণ করেছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। সরকারের নিজ¯^ তহবিল থেকে এক হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা এবং অবশিষ্ট এক হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা বিডার্স ফাইনান্সিং-এর মাধ্যমে ব্যয় সংকুলান হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে প্রাথমিক এবং রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র দ্বিতীয় গ্রাউন্ড স্টেশনের নির্মাণ কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মহাকাশে উৎক্ষেপণের পর এটি পরিচালনা, সফল ব্যবহার ও বাণিজ্যিক কার্যত্রম সম্পাদনের জন্য ইতিমধ্যে সরকারি মালিকানাধীন বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। নতুন এই কোম্পানিতে কারিগরী লোকবল নিয়োগ এবং তাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে দেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ভি-স্যাট সংস্থা বিদেশি স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ খাতে ব্যয় করছে বছরে ১৪ মিলিয়ন ডলার। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট যাত্রা শুরু করলে এই বিপুল অর্থ দেশেই থেকে যাবে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এরমধ্যে ২০টি দেশে ব্যবহারের জন্য এবং ২০টি ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মূদ্রা আয় সম্ভব। এছাড়া নিজস্ব স্যাটেলাইট থাকায় বৈশ্বিক টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে পরনির্ভরশীলতার অবসান হবে। টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং, ই-গবেষণা, ভিডিও কনফারেন্স, প্রতিরক্ষা ও দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় জরুরি যোগাযোগের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট।