বিডিপি ডেস্ক:
বেড়ে যাচ্ছে দেশের বৈদেশিক ঋণের বোঝা। আর ওই বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে হবে চাপে পড়বে দেশ। মূলত ডলারের বিপরীতে সম্প্রতি টাকার উল্লেখযোগ্য অবমূল্যায়ন, আন্তর্জাতিক বাজারে বৈদেশিক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি, বৈশ্বিকভাবে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সংকোচনমুখী নীতি অনুসরণে স্থানীয় মুদ্রায় বৈদেশিক ঋণ বাড়ছে। যদিও ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যেই বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। তার মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে অপ্রয়োজনীয় আমদানি। আশা করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওসব পদক্ষেপের ফলে আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রার আয়-ব্যয়ের চলতি হিসাবে ঘাটতি কমে আসবে। একইসঙ্গে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারেও স্থিতিশীলতা আসবে। কিন্তু বৈশ্বিক ও দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার মানে আরো অবনতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাতে পণ্যের দাম আরো বেড়ে মূল্যস্ফীতির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। ফলে আরো বেড়ে যাবে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের মোট বৈদেশিক ঋণ জুন পর্যন্ত ছিল ৯ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। কিন্তু ডিসেম্বর শেষে তা বেড়ে ১১ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। কারণ গত এক বছরের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে ডলারের টাকা বেড়েছে ২১ টাকা। অর্থাৎ ২৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। কিন্তু বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর হিসাবে অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। ফলে বাড়তি দরে ডলার কিনে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তাতে টাকার হিসাবে ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে। তাছাড়া আগে আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার ছিল গড়ে ৩ থেকে ৪ শতাংশ। তার সঙ্গে লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেট (লাইবর) যোগ করে সুদের হার নির্ধারিত হয়। আগে লাইবর রেট ছিল ১ শতাংশের নিচে। ওই হিসাবে সুদের হার পড়ত ৪ থেকে ৫ শতাংশ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো সুদের হার বাড়ানোর ফলে বর্তমানে লাইবর রেট বেড়ে গেছে। ওই রেট এখন সাড়ে ৩ শতাংশের উপরে রয়েছে। ফলে এখন সুদের হারও প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া ডলার সংকটে বর্তমানে অনেক ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে না। অনেক ক্ষেত্রে ঋণের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। তাতে আরো বাড়ছে ঋণের বোঝা।
সূত্র জানায়, বর্তমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। তা অর্জিত নাও হতে পারে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতিকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্টদের সব ধরনের নীতি সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, বিদ্যমান দেশীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশিত হারে হবে না। চলমান অনিশ্চয়তার কারণে সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব আরো ঘনীভূত হবে। পণ্যের দাম বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ আরো বাড়বে। তাতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরো বেড়ে যাবে। বিদ্যমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। তাছাড়া চলমান অনিশ্চয়তার কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দাম বেড়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কিছুটা নিম্নমুখী হলেও সার্বিকভাবে অনিশ্চয়তা কাটেনি। তাছাড়া যুদ্ধের কারণে একদিকে করোনাপরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আর অর্থনীতিতে আরো আঘাত করেছে যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট নতুন অনিশ্চয়তা।