দেশজুড়ে

ঈদ আনন্দে পর্যটকের ঢল লালমনিরহাটের তিস্তা সেতুতে

Published

on

জেসমুল হোসেইন শুভ, কালিগঞ্জ: দ্বিতীয় তিস্তা সেতু খুলে দেওয়ার পর থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অধিকতর উন্নয়ন ঘটে। বুড়িমারী স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা ও বিভাগীয় শহর রংপুরের দূরত্ব কমিয়ে আনার জন্যই তিস্তা নদীর উপর ‘কাকিনা-মহিপুর’ ঘাটে দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর নির্মাণ করছে সরকার। কিন্তু এবার দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র ।
ঈদের ছুটিতে মানুষজন বেড়াতে আসছেন ‘কাকিনা-মহিপুর’ ঘাটে দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুতে। উত্তর অঞ্চলের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় থাকলেও এবার নতুন মাত্রায় যোগ নিয়েছে লালমনিরহাটের কাকিনা-মহিপুরের দ্বিতীয় তিস্তা সেতু । তাই এবার রংপুর বিভাগের বিনোদন কেন্দ্র গুলো ভিড় না থাকলেও সমুদ্র সৈকতে
পরিণত হয়েছে দ্বিতীয় তিস্তা সেতু ।
সেখানে গিয়ে অনেকই যেন ফিরে যান তাদের ফেলে আসা সোনালি দিন।
ঈদের পরের দিন রোববার(১৭ জুন) লালমনিরহাটের কাকিনা-মহিপুর ঘাটের নির্মাণাধীন দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুতে সকাল থেকে এলাকায় হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। লোকজনের সমাগমে আনন্দের জোয়ার বইছে।
রংপুর বিভাগের ভিন্ন জগত, আনন্দনগর, তাজহাট জমিদারবাড়ি, চিড়িয়াখানা, সুরভি উদ্যান, চিকলি পার্ক, ঘাঘট নদীর প্রয়াস সেনা পার্ক, পীরগঞ্জের আনন্দনগরসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলোকে পাশ কাটিয়ে হাজারো মানুষের পদচারণায় । বিনোদন প্রেমীরা বলেছেন, সরকার ইচ্ছে করলে নবরূপে সাজিয়ে এখান থেকে বিপুল পরিমাণের একটি অর্থ আয় করতে পারে। পাবে বিপুল পরিমাণের রাজস্ব।
ঈদের দিন শনিবার বিকেলে সব বয়সী মানুষের ভিড় জমলেও সিংহভাগ দখল করে রাখে তরুণ-তরুণীরা । তিস্তার ধাপে মা-বাবার হাত ধরে, কেউবা ভাই-বোন, আতীয় স্বজনের হাত ধরে ঘুরছে। শুধু তরুণরা নয়, শিশুদের সঙ্গে অভিভাবকরাও কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যাচ্ছেন আনন্দের রাজ্য দ্বিতীয় তিস্তা সেতুতে।
দ্বিতীয় তিস্তা সেতু নদী অববাহিকার পা ফেলার স্থান নেই। দুর দূরান্ত এলাকা থেকে গাড়ীতে করে এলাকা দেখতে এসেছেন মানুষজন। কাকিনা-মহিপুর অবস্থিত মধ্যস্থানে অনুযায়ী রংপুর শহর ১৩ কিলো ও লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক ১২ কিলোমিটার। তাই সহজে শহরের মানুষজন চলে আসছেন বেড়াতে।
শহরের শিশু ও তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চল এবং বাইরে থেকে ঈদের ছুটিতে বেড়াতে আসা শিশুদের কারণে ভিড় অনেকটাই বেশি । বিশেষ করেই রাস্তার দুপাশে বিশাল দীঘির চারদিকে রয়েছে নানা প্রজাতির গাছ- গাছালির সমাহার। পানি আর সবুজ মিলে সে এক অপরূপ দৃশ্য। মনে হয় যেন এ এক সমুদ্র সৈকত। পরিবার পরিজন নিয়ে ছোট-বড় বাস, মাইক্রোবাস বা মোটরসাইকেলে হাজার হাজার মানুষ আসছেন ।
এনেছেন পরিবার-বন্ধু-স্বজন বা শুভাকাক্সক্ষীদের। অনেকে আবার এখানে এসে মেতে উঠেছেন পিকনিকে। বিনোদনপ্রেমী মানুষগুলোকে বহনকারী বিভিন্ন সাজে সজ্জিত গাড়িগুলোতে শোভা পাচ্ছিলো জরি লাগানো নানা রঙ্গের বর্ণিল কাগজ ও ‘চল না ঘুরে আসি কোথাও থেকে’ ঈদ আনন্দে মেতে উঠি লেখা ব্যানার। সেতুতে আসা জেলা-উপজেলা শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের নামে লেখা ব্যানার সংবলিত গাড়িগুলোতে বিনোদন প্রেমীদের মাইক বাজিয়ে ও নেচে গেয়ে আনন্দ করতে দেখা গেছে।
তিস্তা জুড়ে বসেছে অস্থায়ী হাট। নানা রকম পণ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে দোকানগুলো। বিভিন্ন খেলনা, বাঁশি, বেলুন, মাটির গাড়ি, খাবারের দোকান রয়েছে এখানে। এ ছাড়া নদীর বুকে ভাসমান বিলুপ্ত আশির দশকের বেশ কিছু পাল তোলা নৌকা নজর কাড়ছে দর্শনার্থীদের। অনেকেই ক্যামেরা ও মোবাইল ফোনে বন্দি করছেন প্রিয় মুহূর্তগুলো।
এদিকে ঈদে পর্যটন কেন্দ্রগুলোর কোথাও যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সর্তক অবস্থায় রয়েছেন।

বরিশাল থেকে আসা একজন বলেন, দ্বিতীয় তিস্তা সেতু উদ্বোধনের আগেই এক জনপ্রিয় হয়েছে যা বলার ভাষা নেই। এত গরমে ঠাণ্ডা হাওয়া কোথায় নেই। আমি নিজে বেড়াতে এসে খুব খুশি।

দিনাজপুর থেকে আসা মাহিসা নাজনিন বলেন, জীবনে একবার গিয়েছি পদ্মার পাড় সেটিও এত ভালো লাগেনি। দ্বিতীয় তিস্তা সেতু এত সন্দুর জায়গা হবে আমার জানান ছিল না। প্রতি বছরেই একবার করে আসবো।

দেশ-বিদেশে আলোচিত লালমনিরহাট জেলায় অবস্থিত দুটি স্থাপনা নিয়ে মূলত দর্শনার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন এখানে। এর একটি দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প ‘তিস্তা ব্যারাজ’ এবং অপরটি তিনবিঘা করিডোর ও দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহল।

পাশাপাশি তারা ঘুরে যাচ্ছেন দেশের তৃতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর বুড়িমারী। কাকিনা-মহিপুর ঘাটে দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর নির্মাণের পর থেকে এ অঞ্চলে মানুষের বড় চাওয়া প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন নিজে এসেই। এদিকে এলাকাবাসীর দাবী ভারী যানবহন যেন না চলাচল করে। ভারী যানবাহন চলাচল করলে বেশিদিন সেতুটিতে ফাটল ও রাস্তা ঘাট ভালো থাকবে না।

২০১২ সালের ১২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কালেক্টরেট মাঠে জনসভায় সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। সেতুটি উদ্বোধনের পর রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বুড়িমারী স্থলবন্দরের সড়কপথের দূরত্ব কমে যাবে প্রায় ৫০ কিলোমিটার। কমে আসবে সময় ও জ্বালানি খরচ।
লালমনিরহাট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) জানায়, ১২১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ফুটপাথসহ ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থের দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুতে ১৬টি পিলার, ২টি অ্যাপার্টমেন্ট, ১৭টি স্প্যানে ৮৫টি গার্ডারের ওপর সেতুটি নির্মিত।

সেতু বাস্তবায়নকারী লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ জানান, মূল সেতুর কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। সংযোগ সড়কের মহিপুর অংশের সামান্য কাজ বাকি রয়েছে। সেতুটি উদ্বোধন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানোর হবে । পর্যটকদের বিষয়ে জানানো হবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version