Highlights

‘কাজী ইব্রাহীম স্বপ্ন দেখেছেন, তিনি মন্ত্রী হবেন’

Published

on

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় ইসলাম ধর্মীয় বক্তা মুফতি কাজী ইব্রাহীম রিমান্ডে রয়েছেন। তাকে গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে উদ্ভট, বিভ্রান্তির কিছু তথ্য। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (উত্তর) যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বেসরকারি একটি টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, কাজী ইব্রাহীম যা যা বলেছেন, সবই নাকি তিনি স্বপ্নে দেখেন। স্বপ্ন দেখেছেন, তিনি মন্ত্রী হবেন।

যুগ্ম কমিশনার হারুন-অর-রশীদ আরও বলেন, ‘গোয়েন্দা পুলিশের একটি সাইবার ইউনিট রয়েছে। আমরা প্রতিদিনই কিন্তু কারা কী বলছে সবকিছুর খেয়াল রাখছি। কাজী ইব্রাহিম প্রায়ই বিভিন্ন ধরেনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কোনো বিষয়েই তার কোনো গভীরতা নেই। কোনো জ্ঞান না থাকার কারণে উনি যেখান থেকে যেটা পাচ্ছেন সেটার ওপরই কথা বলছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘কাজী ইব্রাহীম বলেছেন উনি নাকি স্বপ্নে দেখেছেন তালেবানরা ক্ষমতায় আসবে। উনি নাকি স্বপ্নে দেখেছেন করোনা টিকা নিলে ছেলে মেয়ে হয়ে যাবে, মেয়ে ছেলে হয়ে যাবে। ইদানিং যেটা বললেন, যারাই কোরআন হাদিসের আলোকে কথা না বলে তারাই হয়ে যাবে হিন্দুস্তানি দালাল, তারা হয়ে যাবে র-এর দালাল। বিভিন্ন উদ্ভট, বিভ্রান্তিকর তথ্য সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে, মসজিদে, বিভিন্ন জায়গায় মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।’

ইব্রাহীম দাবি করেন, স্বপ্নে দেখেন তিনি মন্ত্রী হবেন- এ কথা উল্লেখ করে হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘ইব্রাহীম দাবি করেন, উনি যা বলেন সব কোরআন-হাদিসের আলোকে বলেন। উনি কথা যেগুলো বলেন, এ বিষয়ে আমরা যখন ধরলাম উনি বলেন যে উনি স্বপ্ন দেখেছেন। উনি নাকি স্বপ্ন দেখেছেন উনি মন্ত্রী হবেন। উনি স্বপ্ন কীভাবে দেখেন? আসলে এইগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করার জন্য উনাকে নিয়ে আসছিলাম। যখন আমরা কথা বললাম, উনি কোনো কথারই সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। উনার কথাগুলো এখনো এলোমেলো মনে হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যখন তাকে আমরা লালমাটিয়ার বাসা থেকে আনতে গেলাম তখনো তিনি লাইভে গিয়ে বলছিলেন যে আমরা যারা গিয়েছি আমরা নাকি হিন্দুস্তানি দালাল, আমরা নাকি র-এর এজেন্ট। এই ধরনের বিভ্রান্তিকর কথা তিনি প্রতিনিয়ত বলে যাচ্ছেন। এ কারণে আমরা তাকে নিয়ে আসছি এবং দুই দিনের রিমান্ড হয়েছে। কী কারণে উনি কথাগুলো বলেন, কী বিষয়ে উনার জ্ঞান রয়েছে- আমরা তার কাছে বারবার জিজ্ঞাসা করছি। উনি এখন বলছেন উনি বুঝতে পারেননি, উনি স্বপ্নে দেখেছেন।’

ডিবির এই যুগ্ম কমিশনার আরও বলেন, ‘আমরা তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করবো যে উনি কার প্ররোচনায় কার ইন্ধনে এসব বলছেন। উনার কথাগুলো শুনে মনে হচ্ছে জামাতের কাছ থেকে বিষয়গুলো নিয়ে উনি মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।’

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এমন অনেকেই নজরদারীতে আছে জানিয়ে হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘আমরা গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ইউনিট প্রতি মুহূর্তেই ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে যারা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে বিভ্রান্ত করছে এগুলো আমরা যাচাইবাছাই করছি। অনেককে আমরা ডেকেছি, যারা সন্তোষজনক জবাব দিতে পেরেছে তাদেরকে আমরা ছেড়ে দিয়েছি, যারা সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে। আগামী দিনগুলোতে যারা ইসলাম, হাদিসের নাম ব্যবহার করে, কোরআনের নাম ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। এরকম অনেককেই আমরা নজরদারীতে রেখেছি।’

এর আগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডের বাসা থেকে ইব্রাহিমকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তার বিরুদ্ধে ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে নানান বক্তব্য দেওয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করে ডিবি।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার পর গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে জেড এম রানা নামে একজন একটি স্কুলের টাকা আত্মসাৎ, চাঁদা দাবি এবং প্রতারণার অভিযোগে ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর পুলিশ তার বাসা ঘেরাও করলে তিনি ফেসবুক লাইভে এসে হিন্দুস্থানের দালাল ও র-এর এজেন্ট বাড়ি ঘিরে ফেলেছেন মর্মে প্রচার করেন।

সম্প্রতি ওয়াজ মাহফিল, ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে মুফতি কাজী ইব্রাহিম নানান বক্তব্য দিয়ে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। তার সমালোচিত মতবাদের মধ্যে একটি হলো- করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার কারণে নারীর দাড়ি গজাচ্ছে, পুরুষের কণ্ঠ পাল্টে নারীকণ্ঠ হচ্ছে।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের বরাত দিয়ে এ বক্তব্যে তিনি বলেন, করোনা ভ্যাকসিন নিয়েও বিতর্ক আছে। তিনি আরেক বক্তৃতায় করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের গাণিতিক ‘সূত্র’ও দিয়েছিলেন! এক প্রবাসী ‘স্বপ্নে’ ওই সূত্র পেয়েছেন, তিনিই তাকে বিষয়টি বলেছেন বলে জানান। তার এমন বক্তব্য নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বহু হাস্যরস তৈরি হয়। এ ছাড়াও তিনি জুমার খুতবায় বিভিন্ন সময় করোনার চিকিৎসা, করোনায় মুসলিমরা আক্রান্ত হবে না, পৃথিবীর সৃষ্টি ও ভৌগোলিক বিভিন্ন বিষয়ে মতবাদ দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ট্রল হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version