Highlights

কুমিল্লার ঘটনার জেরে ১৩ জেলায় হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, নিহত ৪

Published

on

বিডিপি ডেস্ক:
কুমিল্লার ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ১৩ জেলায় হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছেন শতাধিক অভিযুক্ত। গত বুধবার সকালে কুমিল্লায় ‘কোরআন অবমাননার’ খবর স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন জেলায় উত্তেজনা ছড়ায় ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এ ঘটনার জেরে ওইদিন রাতে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ৪ জন মারা যায়।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনার পর সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ওই সংঘর্ষে নিহত ৪ জনের মরদেহ বৃহস্পতিবার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। কুমিল্লায়ও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত৪ জন হল- হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল ইউনিয়নের রায়চোঁ গ্রামের আল আমিন (১৮), রান্ধুনীমুড়া এলাকার ফজলুল হকের ছেলে ইয়াছিন হোসেন (১৫), একই এলাকার আব্বাস উদ্দিনের ছেলে শামীম (১৯) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাবলু (৩০)।

এই পরিস্থিতির মধ্যেই শুক্রবার শারদীয় দুর্গোৎসবের বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন দেবেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। পূজামণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি ২২ জেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের মোতায়েন কররেছে সরকার। এছাড়া কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, কক্সবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রাজশাহীতে দ্রুতগতির মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

কুমিল্লার ঘটনায় এই জেলায় বৃহস্পতিবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪ টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কুমিল্লার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এদিন বিকেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিভিন্ন জেলায় হামলা-সংঘর্ষ-প্রতিমা ভাঙচুর:

গত বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কুমিল্লা ও চাঁদপুর বাদে অন্তত ১২ জেলায় মন্দিরে হামলা, সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া খুলনায় একটি মন্দিরের প্রবেশপথ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১৮টি বোমাসদৃশ বস্তু।

মাদারীপুর: মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ভূরঘাটা এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশের সঙ্গে মুসল্লিদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন দুই পুলিশসহ পাঁচজন। কালকিনি থানার ওসি ইসতিয়াক আশফাক বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সংঘর্ষের সময় বেশ কয়েকটি দোকানপাটে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।

গাজীপুর: মহানগরের কাশিমপুর বাজার এলাকায় বৃহস্পতিবার সকালে দুর্বৃত্তরা তিনটি মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর করেছে। ঘটনার প্রতিবাদে গাজীপুর জেলার হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে আশপাশের এলাকা থেকে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানতে পেরেছি, ৪০০ থেকে ৫০০ লোক ওই মন্দিরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে।’

সিলেট: সিলেটের জকিগঞ্জের কালীগঞ্জ বাজারে বুধবার রাতে খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করা হয়। খবর পেয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমী আক্তার, জকিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) জাকির হোসেন, উপজেলা চেয়ারম্যান লোকমান উদ্দিন চৌধুরী ও জকিগঞ্জ থানার ওসি আবুল কাসেম ঘটনাস্থলে যান। পরে তাঁরা কালীগঞ্জ বাজারের অদূরে মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে ইউপি কার্যালয়ের সামনে থাকা ইউএনও, এএসপি, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ওসির গাড়িতে হামলা হয়। এএসপির গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) লুৎফর রহমান বলেন, পুলিশ অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে। ঘটনাস্থল থেকে আটক তিনজনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

বাগেরহাট: বুধবার রাত ১০টার দিকে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের মালিয়া গ্রামে মিছিল বের করেন কিছু লোক। এ সময় মিছিল থেকে উত্তেজনা ছড়ানোর দায়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের উলিপুরে বুধবার সন্ধ্যায় দুই দফায় শহরের প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। রাত ১০টার দিকে এই উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ৮টি মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। উলিপুর থানার থানার ওসি ইমতিয়াজ কবির বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ মামলা করেছে। ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পশ্চিম চাম্বল বাংলাবাজার জলদাসপাড়ায় ও কর্ণফুলী উপজেলার জুলধা ও বড়উঠান ইউনিয়নের মাঝামাঝি শাহমীরপুর সনাতনপাড়ায় বুধবার সন্ধ্যায় হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় কয়েকটি মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা হয়। কর্ণফুলী থানার ওসি দুলাল মাহমুদ বলেন, কর্ণফুলীর ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা এলাকায় দুটি পূজামণ্ডপে হামলার অভিযোগে মামলা হয়েছে। শিবগঞ্জ থানার ওসি ফরিদ হোসেন বলেন, মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জেও বুধবার রাতে দুটি পূজামণ্ডপে হামলা ও প্রতিম ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় কমলগঞ্জ থানায় দুটি মামলা হয়েছে বলে জানান কমলগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা।

কক্সবাজার: কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় বুধবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ৪টি এলাকায় অন্তত ৭টি মন্দির ও বেশ কিছু বসতবাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা সামাল দিতে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা ও একজন জনপ্রতিনিধি আহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় পেকুয়া থানায় তিনটি মামলা হয়েছে বলে জানান পেকুয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী।

খুলনা: নগরের রূপসা মহাশ্মশানঘাট মন্দিরের প্রবেশপথের পাশ থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ১৮টি বোমাসদৃশ বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে। খুলনায় র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব–৬) উপপরিদর্শক আবদুল খালেক বলেন, মন্দিরের মূল ফটকসংলগ্ন এলাকা থেকে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট গিয়ে প্যাকেটে মোড়ানো অবস্থায় ১৬টি এবং মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় দুটি বোমা উদ্ধার করে। এগুলো রাতেই নিষ্ক্রিয় করার ব্যবস্থা করা হয়। র‍্যাব-৬ -এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোসতাক আহমেদ বলেন, কোনো কুচক্রী মহল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতেই ঘটনাটি ঘটিয়ে থাকতে পারে।

বান্দরবান: মানবন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশেকে কেন্দ্র করে ত্রিমুখী সংঘর্ষে লামা থানার অফিসার ইনচার্জসহ উভয়পক্ষের শতাধিক লোক আহত হয়েছে। এ সময় উত্তেজিত জনতা লামা কেন্দ্রীয় হরিমন্দিরের সামনে রাস্তায় নির্মিত দূর্গাপূজার প্যাণ্ডেল, দোকান ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ অন্তত ২০ রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ঘটনাস্থলে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আনসার মোতায়েন করা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের ইছাপুর ইউনিয়নে ৫টি মন্দিরে হামলা হয়েছে। এসময় ১৬ প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. আনোয়ার খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। রামগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে, তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিকে একই সময় রামগতি পৌরসভার জমিদারহাট বাজার সংলগ্ন শ্রী শ্রী রামঠাকুরাঙ্গন মন্দির ও পূজামণ্ডপে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ, শটগানের ৫৪ রাউন্ড গুলি ও তিন রাউন্ড টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনায় পুলিশের চার সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। পুলিশ বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা ২৫০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছে বলে জানিয়েছেন রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান।

আরও পড়ুন:

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে যা ঘটেছিল

কি ঘটেছিলো কুমিল্লার পূজামণ্ডপে?

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version