সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে বেতনভাতা দেওয়া শুরুর পর কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে শিক্ষকদের বেতনভাতা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা নেই। গত ফেব্রুয়ারি থেকে ইএফটিতে বেতন দেওয়া শুরু হয়। যদি কোনোভাবে আইবাস প্লাস প্লাস সফটওয়ারে তথ্য এন্ট্রি সম্পন্ন হয়, তাহলে তারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অবশ্যই বেতন পাবেন। বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম গতকাল সোমবার (২২ মার্চ) রাতে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘কিছু শিক্ষকের তথ্য আইবাসে নেই। সে বিষয়টি নিয়ে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলছি। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন। সেই সময়ের গেজেট পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু তারা বেতনভাতা পাচ্ছেন, অবসর ভাতাও নিয়ে যাচ্ছেন। ওই সময়ের গেজেটের কিছু কিছু শিক্ষকের বেতনভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। সে কারণে তারা আইবাসে বেতন পাচ্ছেন না। কিন্তু বেতন বন্ধ হয়নি। সেই বিষয়টি নিয়ে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলছি।’
তবে এ কারণে বেতন বন্ধ হবে না বলে জানান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘কোনো শিক্ষকের বেতনই আটকে থাকবে না। নিয়মিত যেমন বেতন পেয়েছেন, এখনও পাবেন।’
সূত্র জানায়, জানুয়ারি থেকে ইএফটির মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দিতে কর্মপরিকল্পনা শুরু করে সরকার। এ লক্ষ্যে গত বছর ৭ ডিসেম্বর উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারদের তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেয়। এরপর গত ৭ জানুয়ারি অধিদফতরের সকল পরিচালক, সকল আঞ্চলিক পরিচালক, উপপরিচালক, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, সকল অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকদের কাছে শিক্ষকদের যাবতীয় তথ্য চায় চাওয়া হয়।
চার দফায় ইএফটির মাধ্যমে বেতন দেওয়া শুরু হয় ফেব্রুয়ারি মাস থেকে। চলমান কার্যক্রমের আওতায় সব শিক্ষককে ইএফটির আওতায় আনতে নামের বানান, এনআইডির সঙ্গে নামের মিল না থাকা এবং আগে ১৯৭৩ সালে জাতীয়করণ করা বিদ্যালয়ের গেজেট/প্রজ্ঞাপন খুঁজে না পাওয়ায় আইবাস প্লাস প্লাসে শিক্ষকদের তথ্য এন্ট্রিতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ পর্যন্ত তিন দফায় আইবাসে তথ্য এন্ট্রি করা হয়েছে।
ইএফটির মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন পাওয়া নিশ্চিত করতে গত ১৬ মার্চের অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠিতে বলা হয়, গত ১৫ মার্চের আইবাস প্লাস প্লাস থেকে পাওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষক সংখ্যা ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৬৫ জন। এর মধ্যে ৮১ হাজার ৯৪৬ জন শিক্ষক নির্দিষ্ট বিদ্যালয়ের বিপরীতে বেতন নির্ধারণ না করায় সংশ্লিষ্ট হিসাবরক্ষণ অফিসারের সহায়তায় তাদের তথ্য সংশোধনের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। অর্থ বিভাগের গত ৭ মার্চ পত্রের হিসাব মহা-নিয়ন্ত্রককে সহায়তার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
বাকি তিন লাখ ৬২ হাজার ৪১৮ জন শিক্ষকের মধ্যে আইবাসে এমপ্লয়ি ডাটাবেজে তিন লাখ ৫৩ হাজার ৯৯৭ জন শিক্ষকের তথ্য এন্ট্রি হয়েছে। এদের মধ্যে দুই লাখ ৮৬ হাজার ৪১৯ জন শিক্ষকের তথ্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার অনুমোদন করেছেন এবং এন্ট্রি করা ৬৭ হাজার ৮৫৩ জন শিক্ষকের তথ্য অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অবশিষ্ট ৮ হাজার ৪২২ জন শিক্ষকের তথ্য এখনও ডাটাবেজে এন্ট্রি হয়নি। অনুমোদন করা ২ লাখ ৮৬ হাজার ১৪৪ জন শিক্ষকের মধ্যে ২ লাখ ১৬ হাজার ১১৫ জন শিক্ষকের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন ইএফটির মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে এবং ৬৯ হাজার ৯৯২ জন শিক্ষকের বেতন ভাতার ইএফটি আদেশ অপেক্ষমাণ।
আর ৩ হাজার ২১২টি বিদ্যালয়ে কোনো গেজেট/প্রজ্ঞাপন/বিজ্ঞপ্তি না থাকায় এসব বিদ্যালয়ের নাম আইবাস প্লাস প্লাসে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ফলে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা পেতে জটিলতার সম্মুখীন হবেন।