দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ক্রমান্বয়ে ভয়াবহ পর্যায়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ।
গতকাল বুধবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছে। শুধু মাত্র কালকে ছাড়া গত ১৪ দিন যাবৎ আমরা কেউ তার সঙ্গে কোনো সাক্ষাৎ করতে পারি নাই। গতকাল মঙ্গলবার তার পরিবারের সদস্যরা দেশনেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন তাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি- তিনি এতই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন দোতলা থেকে নিচের তালায়ও আসতে পারছেন না। তার এই অবস্থার জন্য সরকার দায়ী। এর জবাব দিতে হবে সরকারকে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা জানি- এই সরকার বেগম জিয়াকে কেন আটকে রেখেছে? তার একটি মাত্র কারণ হচ্ছে তারা অত্যন্ত আতঙ্কিত যে যদি বেগম খালেদা জিয়া বাহিরে থাকেন তাহলে গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য যে আন্দোলন হচ্ছে- এই আন্দোলনকে তারা কোনভাবেই প্রতিরোধ করতে পারবেন না। এবং তাদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী হবে।নেত্রীকে একটি ভূয়া সাজানাে মামলায় ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী সরকার অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকিয়ে রেখেছে।এবং এটি কোনো কারাগার? এমন একটি কারাগার যেটা পরিত্যাক্ত কেউ সেখানে বাস করে না সেই কারাগারে তাকে একটি স্যাঁতস্যাঁতে ঘরের মধ্যে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, বেগম জিয়ার চিকিৎসার জন্য আমরা বারবার সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়ে আমরা বলেছি- তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা ব্যক্তিগত চিকিৎসকদেরকে দিয়ে চিকিৎসা করার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল বিশেষ করে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন। আমরা বারবার বলেছি তাকে চিকিৎসার জন্য যে ধরনের এমআরআই করার দরকার সেটা অন্য কোথাও সম্ভব না। এর ব্যবস্থা অন্য কোথাও নেই। এতো কিছু বলার পরেও কয়েকদফা ডাক্তাররা যাওয়ার পরেও এখন ও পর্যন্ত তাকে কোনভাবেই নিজস্ব চিকিৎসকদেরকে দিয়ে তার পছন্দ মতো চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না।যার জন্য আমাদের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন তারপরেও না দেয়া অত্যন্ত দুঃখজনক।
তিনি বলেন, অবিলম্বে সংসদ ভেঙে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করে আগামী নির্বাচন দিতে হবে ।সেইসাথে খুব দ্রুত কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, সকল রাজবন্দীর মুক্তি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য সরকারকে আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে গিয়ে সরকারের লোকজনই এখন গর্তে পড়ে গেছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিহার করেননি। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। তারেক রহমানকে নিয়ে যারা বিতর্ক সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন তারা নিজেরাই এখন গর্তে পড়েছেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে হবে। এ সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক ভাবে হয়রানি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে মিথ্য মামমলায় কারাগরে আটকে রেখেছে। কারণ সরকার চায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মত প্রতারণার নির্বাচন করতে। কিন্তু এবার তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হবে না।
মোশাররফ বলেন, বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে বাহিরে রেখে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সংসদ ভেঙে সবার অংশ গ্রহণে নির্বাচন করতে বাধ্য করা হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার আইয়ুব খানের পথ অনুসরণ করছে। ১৯৬৮ সালে আইয়ুব খান সরকারও উন্নয়নের মিছিল করেছিলো। তার পরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা সরকারও উন্নয়নের মিছিল করেছে। এবার গণতন্ত্র ফিরে আসবেই। আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।
তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে বাহিরে রাখতে খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রেখেছে। এখন তারেক রহমানের পেছনে লেগেছে তাকে ছোট করতে। কিন্তু সরকারকে বলতে চাই এসব করে কোনো লাভ হবে না, জনগণের জোয়ারে ষড়যন্ত্রের সব বাধ ভেঙে যাবে।
মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপার্সন এর উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নুল আবদীন ফারুক। এছাড়া উপস্থিত আছেন ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড় এম জাহিদ হোসেন, উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, ক্রিড়া সম্পাদক আমিনুল হক প্রমুখ।
মানবন্ধনে আরও অংশ নেন ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন,চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদ অ্যাডভোকেট আব্দুল সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল,সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামিমুর রহমান প্রমুখ।
এদিকে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসুচি ছিল। তবে পুলিশ সেখানে করতে না দেয়ায় তারা দলীয় অফিসের সামনে করে।
বেলা ১১টায় শুরু হয়ে এ মানববন্ধন শেষ হয় দুপুর ১২টায়।পূর্ব ঘোষিত এ মানববন্ধনে যোগ দিতে সকাল সাড়ে ৯টা থেকেই বিএনপি ও এর অঙ্গ–সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। ফকিরাপুল মোড় থেকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত ছিলো নেতাকর্মীদের দখলে।
‘আমার নেত্রী আমার মা, বন্দি থাকতে দেবো না, বন্দি রাখা যাবে না’, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, মুক্তি চাই’, ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে,’- ইত্যাদি শ্লোগান দিতে থাকেন নেতাকর্মীরা। এসময় তাদের হাতে খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ডও দেখা যায়।
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গত ২২ এপ্রিল থেকে বিএনপি নতুন সাত দিনের কর্মসূচি শুরু করেছে। তারই অংশ হিসেবে আজ এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন হলো।
এ কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকেই বিএনপি কার্যালয়ের আশে-পাশে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে পুলিশ। মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ।
এদিকে মানববন্ধনে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বক্তব্য চলাকালে নেতাকর্মীদের কর্মসূচি ছেড়ে চলে যেতে দেখা যায়। আর সভাপতি হিসেবে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য শেষ না হতেই মানববন্ধন ফাঁকা।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব এক দৌঁড়ে রাস্তার বিপরীতে চলে যান, এ সময় তার সঙ্গে অন্তত ২০ নেতাকর্মী দৌঁড় দেয়।
এদিকে হাবিবুর রশিদ হাবিবের দৌঁড় দেখে উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অনেকের কৌতূহল তৈরি হয়, তিনি কেন এভাবে দৌঁড় দিলেন?
এ সময় এক কর্মী বলেন, কৌশলগত কারণে তিনি এভাবে চলে গিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বক্তব্যে বলেন, অনুমতি নেয়ার পরও আজকে পুলিশের এই যে আচরণ তা গণতান্ত্রিক নয়।