২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় তারেক রহমানসহ বিএনপির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া বিএনপি ক্ষুব্ধ হয়ে এই রায়কে সরকারের ফরমায়েশি রায় উল্লেখ করে প্রত্যাখান করেছে।
গতকাল দুপুরে রায়ের পর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি মনে করে এই রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক ফরমায়েশি রায় প্রত্যাখ্যান করছি। সরকার তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য আদালতকে ব্যবহার করল। যেমনটি জিয়া অরফানেজ মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায়ে করা হয়েছিল।
এই রায়ের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও আইনী কর্মূসূচিও থাকবে বলেও জানান ফখরুল। তবে তাৎক্ষণিকভাবে সেই কর্মসূচি তিনি ঘোষণা করেননি। পরবর্তীতে কর্মসূচির কথা জানিয়ে দেয়া হবে বলেও জানান ফখরুল।
মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পর্কে ফখরুল বলেন, দেশবাসী জানে তৎকালীন (চারদলীয় জোট) সরকারই দোষীদের বিচারের জন্য মামলা দায়ের করেছে। এফবিআই ও ইন্টারপোলকে তদন্তে সম্পৃক্ত করেছে। বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা করছে। এসব তদন্তে এবং এক এগারোর সরকারের সময়ে তদন্তে তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। তখন (এক-এগারোতে) কারাগার থেকে জবানবন্দিতে শেখ হাসিনা তারেক বা বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করেননি। ৬২ জন সাক্ষীর কেউ বিএনপি বা তারেক রহমানের নাম উল্লেখ করেনি।
ফখরুল বলেন, ক্ষমতায় আসার পর বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা কাহ্হার আকন্দকে নিয়োগ দিয়ে এ মামলাকে রাজনৈতিক রূপ দেয়া হয়েছিল। ২০০৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে প্রচারণা চালিয়েছেন। নতুন তদন্ত কর্মকর্তা মুফতি হান্নানকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে তারেক রহমানের নাম জড়িয়ে বক্তব্য নিয়ে এই মামলায় আসামি করে। পরবর্তীতে মুফতি হান্নান আদালতে বলেন, অত্যাচার করে তারেকের বিরুদ্ধে জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে। সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও মুফতি হান্নানের বক্তব্য প্রত্যাহার করার পর তারেকের বিরুদ্ধে অভিযোগের আর কোনও ভিত্তি থাকে না।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বক্তব্য উদ্বৃত করে ফখরুল বলেন, যে দেশে প্রধান বিচারপতিই সুবিচার পায় না, সেখানে সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়া সুদূরপরাহত।
এই রায়ের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, আমি দেশবাসীকে সজাগ হয়ে অনির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, ২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত। এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়াও ১১ জনকে বিভিন্ন দেয়া হয়েছে মেয়াদে সাজা।