Highlights

চার বছরেও অসমাপ্ত জামালপুর-শেরপুর-বনগাঁও আঞ্চলিক মহাসড়কের পূনঃনির্মাণ কাজ

Published

on

জামালপুর-শেরপুর-বনগাঁও আঞ্চলিক মহাসড়কটির পুনর্র্নিমাণ কাজ দীর্ঘ চার বছরেও শেষ হয়নি। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে কাজ শুরু হলেও মাঝপথে নিম্নমানের নির্মাণ কাজের অভিযোগে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সড়ক ও জনপথের শেরপুর জেলার তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন আহাম্মদ এর সাথে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় বাতিল করা হয় কার্যাদেশ। এ নিয়ে বিগত ১৩.০৭.২০২১ তারিখে ‘জামালপুর-শেরপুর-বনগাঁও সড়ক উন্নয়ন কাজে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ’ শিরোনামে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তৎকালীন সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জরিমানা সহ বিভিন্ন ব্যবস্থাও নেয়া হয়। তবে আশার কথা নতুন করে প্রাক্কলন অনুযায়ী ‘মেসার্স তমা কনষ্ট্রাকশন’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বাকি কাজ শেষ করতে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে।

জানা যায়, ১৯৯১-৯২ সালে আঞ্চলিক মহাসড়ক হিসেবে কুরিয়ান কোম্পানীর মাধ্যমে জামালপুর-শেরপুর বনগাঁও সড়কটি নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে সড়কটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় ১ শত ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে এর পূন:নির্মান কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে। ৩২.৪০ কি. মি. দীর্ঘ এ সড়কটির পূন:নির্মাণ কাজ পায় যৌথভাবে মেসার্স এসইপিএল প্রা: লি:, ওটিবিএল ও মেসার্স তূর্ণা এন্টারপ্রাইজ নামের ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু শুরু থেকেই সড়ক ও জনপথ বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে নিম্নমানের কাজ করার বিষয়টি জানতে পেরে জাতীয় সংসদের মাননীয় হুইপ মো. আতিউর রহমান আতিক এমপি সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে সড়কটি পূন:নির্মান কাজের অনিয়মের বিষয়ে তদন্তের সুপারিশ করেন। ২০২০ সালের জুলাই মাসে সড়ক ও জনপথ বিভাগের একাধিক তদন্ত টিমের তদন্তে নির্মান কাজে অনিয়ম ধরা পড়ে। ফলে কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। তবে তার আগেই ৯০ কোটি টাকা বিল উত্তোলন করে সটকে পড়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।

সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান জানান, পূর্ববর্তী ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করে বাকি কাজ শেষ করতে ইতোমধ্যে‌ই ৩৮ কোটি টাকা ব্যায়ে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। দ্রুতই কাজটি শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তবে কাজটি কবে নাগাদ শেষ হবে সেটি বলতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে ভোগান্তির শেষ নেই জনগুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কে চলাচলকারীদের। সড়কের কোয়ারিরোড থেকে টেংরাখালী পর্যন্ত অংশ একেবারে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নিম্নমানের কাজ করায় সড়কের কিছু কিছু জায়গায় ডেবে গেছে। জরাজীর্ণ এ সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ফলে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা।

সূত্র জানায়, তৎকালীন সওজ শেরপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে যৌথ যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের বিপরীতে পাওনার চেয়ে অনেক বেশী টাকা উত্তোলন করে চলে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পূর্বের সড়কটির দুই পাশ্বে ১মিটার করে ২ মিটার সম্প্রাসরণ কাজে দেড় ফুট বালি ও সাববেস ৮ইঞ্চি সাববেস, ৬ইঞ্চি সাববেস-২ ধরা থাকলেও তা করা হয়নি। এই কাজে অনেক নিম্ন মানের ইট বালি ব্যবহার করা হয়েছে। পুরনো সড়কের মেগাডম, কার্পেটিং ও বিটুমিনাস সম্পূর্ণ উঠিয়ে ফেলে সেখানে নতুন করে পাথর দিয়ে ৮ইঞ্চি (২০০ মিলি মিটার) ডব্লিওবিএম করে তার উপর আড়াই ইঞ্চি (৬০ মিলি মিটার) কার্পেটিং এবং ১ ইঞ্চি (২৫ মিলি মিটার) বিটুমিনাস দিয়ে ফিনিসিং দেয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। বরং পূরনো সড়কের উপরের সেই পুরনো পাথর এর সাথে সামান্য নতুন পাথর ব্যবহার করে সড়কটির প্রায় ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করা হয়। ডব্লিওবিএম করার পর তার উপর আড়াই ইঞ্চি কার্পেটিং এবং ১ ইঞ্চি বিটুমিনাস দিয়ে ফিনিসিং দেয়ার কথা থাকলেও তা শেষ করা হয়নি। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট হয়। বিষয়টি নিয়ে মাননীয় হুইপ মো. আতিউর রহমান আতিক এঁর হস্তক্ষেপে তদন্তে অনিয়ম পেয়ে তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন আহাম্মদকে শেরপুর থেকে বদলী করে ফেনি আর উপসহকারী প্রকৌশলী মাজাহারুল ইসলাম আজাদকে মেহেরপুর পাঠানো হয়।

ঝিনাইগাতী উপজেলার তিনআনীর বাজার অটোরিকশা চালক সমিতির সভাপতি ছামেদুল হক, সিএনজি চালক জাহাঙ্গীর আলম, অটোচালক মোশাররফ হোসেন। কোয়ারিরোডের সিএনজি চালক দানেশ মিয়া, কালিবাড়ি বাজারের অটোচালক শাহজাহান, মোছা আলীসহ অনেকেই জানান, ‘এই রাস্তা দিয়া চলাচলে কি আর কোনো নিরাপত্তা আছে? সব সময় দুর্ঘটনা হয়। আমরা রিস্ক নিয়াই চলাচল করি। আমরা চাই দ্রুত সমস্যা সমাধান হোক।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version