এমনিতেই সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে বেড়ানো মানুষগুলো পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন থাকেন বেশিরভাগ সময়। দীর্ঘ সময় পর জাহাজ যখন কোনও বন্দরে নোঙর করে, তখন সুযোগ মেলে টেলিফোনে পরিবারের সঙ্গে আলাপের। করোনার এই দুর্যোগে জাহাজে কাজ করা মানুষজনকে আরও বেশি বিচ্ছিন্ন করেছে। ডাঙায় ওঠা কঠিন হয়ে গেছে তাদের জন্য। সোমালিয়া বন্দরে একটি জাহাজে আটকে আছেন পাঁচ বাংলাদেশি। জাহাজ নিয়ে কোনও দেশের বন্দরে নোঙর করতে পারলেও কোনও অবস্থায়ই সেদেশের ভেতরে প্রবেশ করতে পারছেন না তারা। অন্যদিকে বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও দেশে ফিরতে পারছেন না। দেশে পরিবারের কাছে ফেরার আকুতি এই পাঁচ বাংলাদেশির।
দুবাইভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের জাহাজে কাজ করেন আলী আকবর। সেই জাহাজে ২৩ জন কাজ করেন, যার মধ্যে পাঁচ জন বাংলাদেশি। জাহাজটির সেকেন্ড অফিসার আতিকুল ইসলাম। পাঁচ মাসের চুক্তিতে জাহাজটিতে কাজ করতে আসলেও করোনার কারণে তিনি ৯ মাস ধরে আছেন এই জাহাজে। পাম্পম্যানের দায়িত্বে আছেন আনজাম হোসেন। তিনি আট মাসের চুক্তিতে এসেছিলেন, তিনিও ৯ মাস ধরে জাহাজ আছেন। বোসনের ( Bosun) দায়িত্বে আছেন নাইমুল ইসলাম, তিনিও আছেন ৯ মাস। ওয়ালার সোহেল রানা। এছাড়া বাকিরা ভারতীয় নাগরিক।
সেই জাহাজের অ্যাবল সীম্যান আলী আকবরের সঙ্গে যোগাযোগ হয় হোওয়াটসঅ্যাপে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের জাহাজটি কেমিক্যাল ট্যাংকার। আমরা ভারতের চেন্নাই বন্দর থেকে ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জাহাজে উঠি। জাহাজ নিয়ে চলে যাই ওমান। এরপর ইয়েমেন, সৌদিআরব, দুবাই, ভারতে একাধিকবার আসা-যাওয়া হয়েছে। এখন আমরা আছি সোমালিয়ার শহরের পাশের একটি বন্দরে। এখান থেকে এই মাসের ১২ /১৩ তারিখে দুবাই এর উদ্দেশে রওনা দেবো।’
আলী আকবর বলেন, ‘আমরা জাহাজে কাজে আসি চুক্তিভিত্তিক। নিদিষ্ট মেয়াদের চুক্তি শেষে হলে দেশে ফিরে আসি। কিন্তু এবার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও দেশে ফিরতে পারছি না। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকায় আমাদের জাহাজেই আটকে থাকতে হচ্ছে। পুরো সময়টাই আটকে থাকতে হয়েছে জাহাজে। বন্দর থেকে দেশের ভেতরে প্রবেশের পাস থাকলেও কোনও দেশই ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। আমরা এক প্রকার জেলখানার মধ্যে আছি। কারণ এই ৯ মাসে বন্দরে ছেড়ে কোথাও যেতে পারিনি। আবার যে জাহাজটিতে আছি সেটি ক্যামিকেল ট্যাংকার। ফলে সেখানে একটানা থাকারও এক ধরেণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে।’
চট্টগ্রামে স্ত্রী ও সন্তান রয়েছেন আলী আকবরের। তিনি বলেন, ‘এখন বন্দরে আছি বলে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। কিন্তু জাহাজ যখন সমুদ্রে থাকে তখন পুরো বিচ্ছিন্ন। সোমালিয়ার এই বন্দর থেকে দুবাই যাওয়ার পর আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে আমরা দেশে ফিরতে পারবো। তা না হলে আটকাই থাকতে হবে। আমরা সাধারণত দুবাই থেকে বিভিন্ন দেশে যাই। দেশের ফিরতে না পারলে আবার হয়তো অন্য কোনও দেশে জাহাজ নিয়ে যেতে হবে। আমরা চাই, স্বাভাবিক ফ্লাইট যদি চালু না হয়, তবুও সরকার যেন আমাদের দেশে ফিরে যেতে সহায়তা করেন। আমাদের নিয়ে পরিবারের যেমন উৎকণ্ঠা, আমরাও পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চাই।’
এই নাগরিকদের দেশে ফেরত আনার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, বিভিন্ন দেশ থেকে যারা সংকটে রয়েছেন তাদের ফিরেয়ে আানা হচ্ছে। যাদের ফেরা জরুরি যাচাই–বাছাই করে দেশে নিয়ে আসা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এখন পর্যন্ত দেশে ফিরছেন ২৮ হাজার ৮৪৯ প্রবাসী বাংলাদেশি।
বাকিদের যে যেখানে আছেন সেখানেই সেদেশের নিয়ম মেনে থাকার অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।