দেশজুড়ে

তফসিলের আগেই রসিকে নির্বাচনী সাজ-সাজ রব!

Published

on

রংপুর সিটি করপোরেশনের তফসিল ঘোষণার আগেই যেন নির্বাচন নিয়ে সাজ-সাজ রব। ব্যানার ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে পুরো নগরীর পথঘাট। নিজেকে যোগ্য প্রার্থী হিসে উপস্থাপন করে দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন সরকারি দল আওয়ামী লীগের হাফ ডজন নেতা। দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের দৃষ্টি আকর্ষণে নিচ্ছেন নানা উদ্যোগ। বসে নেই বিএনপিরও। তাদেরও প্রচারনায় সরব রয়েছে জেলা ও মহানগরের প্রায় হালি খানেক প্রার্থী। তবে নির্বাচনী প্রচারণায় জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হয়ে পূণরায় নির্বাচিত হতে দলকে সুসংগঠিত করে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বর্তমান মেয়র।

মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) রসিকের নির্বাচনী তফসিল ঘোষনার প্রায় এক মাস আগেই নগরের চিত্র যেন ব্যানার ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ছয়লাপ হয়েগেছে। অন্য জেলা থেকে আগত যেকোন মানুষ এই চিত্র দেখলে অনুমান করবে সপ্তাহ পেরুলেই ভোট!

সিটি কর্পোরেশনটার সূত্রে জানাগেছে, দেশের সপ্তম এই সিটি কর্পোরেশনে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল গত ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর। আর নির্বাচিতদের প্রথম সভা হয়েছিল ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। তাই এই হিসে অনুযায়ী গত ১৯ আগস্ট থেকে রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। যেহেতু সিটির মেয়াদ ধরা হয় প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর, তাই এ সিটিতে বর্তমান পর্ষদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেই হিসেবে রসিক সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক প্রস্তুতির কাজও শুরু করে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন।

নগরঘুরে দেখাগেছে সিটি নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যে স্থানীয় লোকজনের সেবার মাধ্যমে নিজেদের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন নানাভাবে। হাট-বাজার ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন তারা। খেলাধুলা, পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয়সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন নিজে থেকেই।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের এমন আগাম প্রচারণায় মেয়র-কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী কারা হচ্ছেন, কার অবস্থান কেমন, কে নির্বাচিত হতে পারেন তা নিয়ে সাধারণ মানুষও আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন। তবে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখাসহ পরিকল্পিত নগরায়নের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।

এদিকে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা মাঠে নেমে ভোটের অংক কষলেও সাধারণ ভোটার ও সচেতন মহল হিসেব কষছে প্রত্যাশিত উন্নয়নের আগাগোড়া নিয়ে। এখনো এই সিটিতে গঠন করা হয়নি রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। রাস্তাঘাটসহ চোখে পড়ার মতো বেশ কিছু উন্নয়ন হলেও কর্পোরেশনের অর্গানোগ্রাম ও মাস্টারপ্লান অনুমোদনসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সমাধান হয়নি। মূলত আগামী নির্বাচনে এসবই ইস্যু হয়ে উঠবে।

খোঁজ নিয়ে দেখাগেছে, রসিক নির্বাচনে মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যে প্রচারণায় নেমেছেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের প্রায় এক ডজন নেতা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ছয়জন, জাতীয় পার্টির একজন, বিএনপির তিনজন ছাড়াও জাসদ, বাসদ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একজন করে প্রার্থীর নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে বর্তমান মেয়রকে একক প্রার্থী হিসেবে দাবি করছেন জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী, পার্টির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর জাপার সভাপতি বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা সর্বত্রই প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার পক্ষে পার্টির মহানগর ও জেলা শাখার নেতাকর্মীরা মাঠে সক্রিয়ভাবে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন।

এছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে মাঠে প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে আছেন দলের রংপুর মহানগরের সভাপতি সফিয়ার রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আতাউর জামান বাবু ও রংপুর জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও শ্রমিকলীগ নেতা এম এ মজিদ। এসব প্রার্থীরা ইতোমধ্যে জনসমর্থন আদায়সহ দলীয় মনোনয়ন চেয়ে নগরীতে ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন ও স্টিকার লাগিয়েছেন। পাড়া-মহল্লাতে সভা-সমাবেশও করছেন। এছাড়া সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন চাইতে পারেন রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কাশেম, রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলন।

এদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় নেতারা বর্তমান সরকার ও ইসির অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আসলেও রংপুর সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে তাদের দলের দু-একজন নেতা প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সাবেক সহ-সভাপতি কাওছার জামান বাবলা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু ও জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু।

এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র আবদুর রউফ মানিক, নারী নেত্রী সুইটি আনজুম, ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান বনির নামও শোনা যাচ্ছে।

নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলেছেন, এ সিটি নির্বাচনে মূলত লড়াই হবে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মধ্যে। বিএনপি এবারের নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নাও নিতে পারে। তারা বলছেন, বিগত নির্বাচনে জাতীয় পার্টি পেয়েছিল ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯, নৌকা প্রতীক পেয়েছিল ৬২ হাজার ৪০০, ধানের শীষ পেয়েছিল ৩৫ হাজার ১৩৬ এবং ইসলামী আন্দোলন পেয়েছিল ২৪ হাজার ৬ ভোট। তাই এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ওপর নির্ভর করছে নির্বাচনী মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি।

এ ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়ার রহমান সফি জানান, তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলন করেছেন। সব সময় দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সরকারের ভিশন মিশন বাস্তবায়নে কাজ করে গেছেন। বিশেষ করে রংপুরের উন্নয়ন, সম্ভাবনা ও সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে তিনি দলের শীর্ষ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেষ্টা করে গেছেন। রংপুরকে পরিকল্পিত, গোছালো ও বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়তে হলে শুধু আবেগের বশে একটা দল বা ব্যক্তির পক্ষে না থেকে ভোটারদের বৃহৎ স্বার্থে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করতে এখনই চিন্তাভাবনা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দল থেকে মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে জয়ী হবো ইনশাআল্লাহ্। মানুষ এখন বোঝে উন্নয়ন করতে হলে সরকারি দলের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে হবে।

আর জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর সভাপতি বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, গত পৌনে পাঁচ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বর্ধিত এলাকাগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এবার কাজ করা হয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যেও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং জনসেবা বন্ধ ছিল না। যেকোনা সময়ের চেয়ে বর্তমান পরিষদ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিচার বিশ্লেষণে এগিয়ে থাকবে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, এই নগরকে পরিকল্পিত ও গোছালো হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। পাঁচ বছরে সবকিছু পরিবর্তন হবে না, এর জন্য সময় লাগবে। তবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেমে থাকেনি। আমার বিশ্বাস আসন্ন সিটি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারও বিপুল ভোটে জয়লাভ করব।

রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম শাহাতাব উদ্দিন জানান আগামী নভেম্বরে রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। এ লক্ষে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চলমান‌ রয়েছে। তবে এবারেও এ সিটিতে ইভিএমে ভোট গ্রহণে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন। আগামী ডিসেম্বরের শেষের দিকে এ নির্বাচন করার প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, পৌরসভা থেকে ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর সিটি কর্পোরেশন গঠন হয় ২০১২ সালের ২৮ জুন। এরপর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ওই বছর ২০ ডিসেম্বর। এতে প্রথম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন সরফুদ্দিন আহমেদ ঝণ্টু। বর্তমানে এই সিটির জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। আর ভোটার রয়েছে চার লাখের বেশি। ২০১৭ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনের সময় ভোটার ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version