Highlights

তালেবানের সংবাদ সম্মেলন, ‘শরিয়া আইন’ অনুযায়ী দেশ চালানোর ঘোষণা

Published

on

নিউজ ডেস্ক:
ঝটিকা অভিযানে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর প্রথমবার সংবাদ সম্মেলনে এসে ‘শান্তির’ বার্তা দিল কট্টর ইসলামী গোষ্ঠী তালেবান, সেই সঙ্গে জানালো, তাদের শাসনে নারীরা স্বাধীনতা পাবে শরিয়া আইন অনুযায়ী, তাদের নিয়ম মেনে সংবাদমাধ্যমও কাজ করতে পারবে। বিশ্বকে চমকে দিয়ে অতি দ্রুত কাবুল দখল করে ফেলার দুদিন পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন তালেবান নেতারা।

তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, “আমরা এটা স্পষ্ট করতে চাই, আফগানিস্তান আর কোনো যুদ্ধক্ষেত্র নয়। যারাই এতদিন আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, সবাইকে আমরা ক্ষমা করে দিয়েছি। শত্রুতর দিন শেষ হয়েছে। দেশের ভেতরে বা বাইরে- কোথাও কোনো শত্রু আমরা চাই না।”

গত ২০ বছর ধরে নেপথ্যে থেকে তালেবানের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করে আসা জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমেই প্রথমবার ক্যামেরার সামনে এলেন।

দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কর্মী আর ক্যামেরার সামনে তিনি বলেন, “২০ বছর সংগ্রামের পর দেশকে আমরা মুক্ত করতে পেরেছি, বিদেশিদের বহিষ্কার করেছি। পুরো জাতির জন্য আজ একটি গৌরবের মুহূর্ত।”

সন্দেহ আর সংশয় নিয়ে আফগানিস্তানের দিকে তাকিয়ে থাকা বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে তালেবান মুখপাত্র বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তারা আশ্বস্ত করতে চান যে, কারও কোনো ‘ক্ষতি করা হবে না’। “আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কোনো ঝামেলায় যেতে চাই না।”

পাশাপাশি তিনি এও বলেন, “আমাদের ধর্মীয় নিয়ম মেনে চলার অধিকার আমাদের আছে। অন্য দেশের দৃষ্টিভঙ্গি, নিয়ম আর আইন অন্যরকম হতে পারে, কিন্তু নিজেদের মূল্যবোধের ভিত্তিতে নিজেদের নিয়মকানুন তৈরি করে নেওয়ার অধিকার আফগানিস্তানের আছে।”

তালেবান মুখপাত্র বলেন, “শরিয়া আইন অনুযায়ী নারীদের অধিকার রক্ষায় আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। তারাও আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, কোনো বৈষম্য এখানে হবে না।”

গণমাধ্যমের কাজ নিয়েও ‘আশ্বস্ত’ করা হয় তালেবানের সংবাদ সম্মেলনে। জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, বেসরকারি গণমাধ্যম আফগানিস্তানে ‘মুক্ত ও স্বাধীনভাবে’ তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। তবে সবাইকেই তালেবানের ‘সাংস্কৃতিক কাঠামো’ মেনে চলতে হবে।

“গণমাধ্যমের কাজের কথা যখন আসবে, কোনো কিছুই ইসলামী মূল্যাবোধের বিরুদ্ধে যাওয়া চলবে না।

“আপনারা যারা সংবাদমাধ্যমে আছে, আমাদের সীমাবদ্ধতা আপনারা ধরিয়ে দেবেন, যাতে আমরা জাতির সেবা করতে পারি। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করা গণমাধ্যমের উচিত হবে না। দেশের ঐক্যের জন্যই তাদের কাজ করা উচিত।”

আফগানিস্তানে এর আগে যারা বিদেশিদের হয়ে ঠিকাদার ও দোভাষীর কাজ করেছে, তাদের ক্ষেত্রে তালেবানের ভূমিকা কী হবে, সেই প্রশ্নও করেছিলেন সাংবাদিকরা।

উত্তরে তালেবান মুখপাত্র বলেন, “কারো প্রতিই আমরা প্রতিশোধ নেব না। যে তরুণরা এখানে বেড়ে উঠেছে, আমরা চাই না তারা চলে যাক। তারা আমাদের সম্পদ।

“কেউ কারও বাড়িতে গিয়ে কড়া নাড়বে না, জানতে চাইবে না যে, আগে কার হয়ে সে কাজ করেছে। তারা সবাই নিরাপদ থাকবে। কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ বা ধরার চেষ্টা এখানে হবে না।”

জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, আফগানিস্তানের ‘স্থিতিশীলতা আর শান্তির জন্য’ সবাইকে তারা ‘ক্ষমা’ করে দিয়েছেন। “আমাদের যোদ্ধা, আমাদের সমর্থক, সবাই আমরা এটা নিশ্চিত করব, যাতে সমাজের সব পক্ষই আমাদের সাথে থাকে।”

তালেবান মুখপাত্র বলেন, তাদের শত্রুপক্ষের জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে যারা প্রাণ হারিয়েছে, সেটা ঘটেছে তাদের ‘নিজেদের দোষে’। “মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে পুরো দেশ আমরা জয় করে নিয়েছি। সরকার গঠন হয়ে গেছে সবকিছুই আরও অনেক স্পষ্ট হয়ে যাবে।”

জাবিউল্লাহ মুজাহিদ দাবি করেন, কাবুলে কোনো বিশৃঙ্খলা হোক, তালেবান তা ‘চায়নি’। প্রাথমিকভাবে তাদের পরিকল্পনা ছিল, তাদের যোদ্ধারা শহরের প্রবেশ পথগুলোতেই অপেক্ষা করবে, যাতে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া ‘মসৃণভাবে’ হতে পারে।

“কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আগের সরকার এতটাই অযোগ্য ছিল যে,… তাদের নিরাপত্তা বাহিনী শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছুই করতে পারেনি। ফলে আমাদেরই তা করতে হয়েছে। বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই আমাদের শহরে প্রবেশ করতে হয়েছে।” -বিডিনিউজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version