Highlights

তিন মাসে ২১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রিং আইডি

Published

on

২২ হাজার টাকা দিয়ে ‘গোল্ড আইডি’ কিনলে প্রতি মাসে আয় হবে ১৫ হাজার টাকা— এমন প্রলোভন দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করেছে কথিত সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম রিং আইডি। এভাবে কমিউনিটি জবসের নামে মাত্র তিন মাসেই তারা নিয়েছে ২১২ কোটি টাকার বেশি। বিশ্বাস অর্জনের জন্য তারা কাউকে কাউকে সামান্য কিছু টাকা দিয়েছেও। এছাড়া বেশিরভাগই আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ-মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এরইমধ্যে রিং আইডির পরিচালক সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরপর শনিবার তাকে দুইদিনের রিমান্ডেও পাঠানো হয়।

প্রতিষ্ঠানটির সন্দেহজনক কার্যক্রম লক্ষ্য করে আগেই বিষয়টি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) চিঠি লিখে জানিয়েছিল সিআইডি। বিএফআইইউ ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে অনুসন্ধানও শুরু করেছে। এছাড়া সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারও অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে সন্দেহের তালিকায় থাকা বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটের মতো রিং আইডিও অস্বাভাবিক ছাড়ে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি এবং ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে লেনদেন পরিচালনা করছিল। এর আগে করোনাকালে ডোনেশনের নামে লোকজনের কাছ থেকে তাদের অর্থ সংগ্রহ নিয়েও বিভিন্ন মহল থেকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

সাইবার পুলিশ সেন্টারের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, প্রাথমিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে যাত্রা শুরু করা রিং আইডি পরে নানা সার্ভিস যোগ করে কৌশলে বিপুল আমানত সংগ্রহ করে। এরমধ্যে রয়েছে বৈদেশিক বিনিয়োগ ও কমিউনিটি জবসসহ আরও কিছু কার্যক্রম। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বহু মানুষের কাছ থেকে তারা টাকা হাতিয়ে নেয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের একজন গত ৩০ সেপ্টেম্বর ভাটারা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও মাল্টিলেভেল মার্কেটিং নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। এরপরই অভিযুক্ত সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।

সিআইডি সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটি ব্র্যান্ড প্রমোশনের মাধ্যমে আয়ের কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা ব্র্যান্ড প্রমোটার হতে আগ্রহীদের কাছে ২২ হাজার টাকায় গোল্ড ও ১২ হাজার টাকায় সিলভার আইডি বিক্রি করত। বলা হত, গোল্ড আইডিতে প্রতিদিন ১০০ বিজ্ঞাপন আসবে। সেগুলো দেখলে প্রতিটি পাঁচ টাকা হিসেবে ই-ওয়ালেটে প্রতিদিন ৫০০ টাকা জমা হবে। এ হিসেবে মাসে আয় হবে ১৫ হাজার টাকা। একইভাবে সিলভার আইডিতে মাসে সাড়ে সাত হাজার টাকা আয় হবে। কিন্তু এগুলো ছিল মূলত সহজ-সরল মানুষদের সঙ্গে প্রতারণার কৌশল। কারণ কোথাও থেকে এমন কোনো বিজ্ঞাপন তারা পেত না, যা দেখলে একজন মানুষ দিনে ৫০০ টাকা পেতে পারেন। এরপরও বিশ্বাস অর্জনের জন্য প্রথম দিকে তারা কিছু টাকা দিয়েছে। তা দেখে অন্যরা উৎসাহিত হয়েছে। যিনি টাকা পেয়েছেন, তিনি তার ভাই-বন্ধুদের এতে নিয়ে এসেছেন। অনেকটা বহুস্তর বিপণণ বা মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের মতো হয়ে ওঠেছিল তাদের কার্যক্রম।

তদন্ত সংশ্নিষ্টরা জানান, কমিউনিটি জবস খাতে বিজ্ঞাপন দেখে টাকা উপার্জনের কথা বলে তারা মে মাসে ২৩ কোটি ৯৪ লাখ, জুনে ১০৯ কোটি ১৩ লাখ ও জুলাইয়ে ৭৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা অবৈধভাবে সংগ্রহ করে। আইনি প্রক্রিয়া চলার সময় যেন তারা অবৈধভাবে অর্থ দেশের বাইরে পাচার করতে না পারে, সেজন্য তাদের সব ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সিআইডি জানায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে রিং আইডির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। এরমধ্যে ভাটারা থানার মামলায় আসামি হিসেবে ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন- শরিফুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, ইরিন ইসলাম, সালাহ উদ্দিন, আহসান হাবিব, রফিকুল ইসলাম, নাজমুল হাসান, আবদুস সামাদ, রেদোয়ান রহমান ও রাহুল। এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলাটি সিডিউলভুক্ত হওয়ায় তদন্তের দায়িত্ব নেয় সিআইডি। এরপর শুক্রবার দুপুরে গুলশান এলাকা থেকে অন্যতম অভিযুক্ত সাইফুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাড়ি ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, আমানত সংগ্রহের কোনো অনুমোদন তিনি বা তার প্রতিষ্ঠান নেয়নি। তাদের কার্যক্রমে আরও কারা জড়িত, আমানতকারীদের টাকা কোথায় আছে, সেসব ব্যাপারে খোঁজ নিতে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে সিআইডি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version