জাতীয়

পহেলা আগস্ট এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার বাসায় ১৮ ঘণ্টা কাটিয়েছেন পরীমনি

Published

on

গত পহেলা আগস্ট এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার বাসায় ১৮ ঘণ্টা সময় কাটিয়েছিলেন বর্তমানে ঢাকাই সিনেমার  আলোচিত নায়িকা পরীমনি। একাত্তর টিভির পোর্টালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

একাত্তর পোর্টাল বলছে,  গত ১ আগস্ট  সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে পরীমনির সাদা রংয়ের একটি হ্যারিয়ার গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৫ ৯৬ ৫৩) এসে থামে পুলিশ কর্মকর্তাদের একটি আবাসিক ভবনের সামনে। প্রথম সেই গাড়ি থেকে লাল রংয়ের টি-শার্ট পরিহিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নামেন। এরপর সাদা রংয়ের একটি স্লিপিং গাউন পরিহিত অবস্থায় নামেন হালের আলোচিত নায়িকা পরীমনি। এ সময় তার কোলে ছিল তার প্রিয় বাদামি রংয়ের কুকুর, যার নাম পরিমনি আদর করে দিয়েছে ‘কুটু’।

পুলিশ কর্মকর্তাদের বাসভবনের নিচে নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে বাসার চাবি নেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর তারা দুজন লিফটে করে ওই কর্মকর্তার বাসায় যান। এরপর পরীমনির গাড়ি থেকে একটি ট্রলি ব্যাগও ওই কর্মকর্তার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।

বিষয়টি নিয়ে একটি সিসিটিভি ফুটেজও প্রকাশ করা হয়েছে একাত্তর টিভির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে। এতে এ বিষয়ে সতত্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

একাত্তর পোর্টাল বলছে, রাত দেড়টা, ওই ভবনের সামনে আবার আসে পরীমনির গাড়ি। চালক কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে সেখানে ঢোকেন। গাড়ি পার্কিং করে তিনি মোবাইলে উচ্চ শব্দ গান ছেড়ে শুনছিলেন।

সেই সময় দায়িত্বরত এক নিরাপত্তা সদস্যের বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হয়। কারণ, পুলিশের নিজস্ব কোন চালক এতো রাতে আবাসিক এলাকার মধ্যে এভাবে গান শোনার কথা না।

তিনি তখন পরীমনির ওই চালকের কাছে তার পরিচয় আবার জানতে চান। চালক তখন ওই নিরাপত্তা কর্মিকে বলেন, পরীমনির সাথে ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তার বিয়ে হয়েছে বলে তিনি জানেন।

এই গাড়ি আদৌ পরীমনির কিনা তা সন্দেহ করলে, চালক ভাইরাল হওয়া বোট ক্লাবে ক্লাবের ভিডিও ফুটেজ নিরাপত্তা কর্মীদের দেখিয়ে বলেন যে তার গাড়ি ও সেই গাড়ি একই গাড়ি কিনা। তখন উপস্থিত নিরাপত্তা কর্মীরা বিষয়টি বিশ্বাস করে পরিস্থিতি দেখতে থাকে। সোয়া দুইটার দিকে পরীমনি তার প্রিয় কুটু এবং ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও সাথে নিয়ে যাওয়া ট্রলি ব্যাগসহ বহুতল সেই ভবন থেকে নিচে নেমে আসেন।

সকালের সাদা পোশাকের পরিবর্তে এ সময় পরীমনির পড়নে ছিল কালো রংয়ের পোশাক আর পুলিশ কর্মকর্তার লাল টি শার্টের পরিবর্তে সাদা রংয়ের টি শার্ট।

পরীমনির গাড়িচালক মো. নাজির হোসেন কাছে ওই দিনের বিশদ ঘটনা বর্ণনা করে জানিয়েছেন, ওই দিন সকাল ৭টার দিকে পরীমনির ফোন পেয়ে তিনি বনানীর বাসায় যান। সেই বাসা থেকে এক সাথে গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও পরীমনি হ্যারিয়ার গাড়িতে ওঠেন।

এরপর তিনি তাদের ওই পুলিশ কর্মকর্তার সরকারি বাসভবনে নামিয়ে চলে যান। আবার রাতে ফোন পেয়ে সেই ভবনের সামনে যান। তখন তাকে নিরাপত্তা কর্মীরা নানা প্রশ্ন করেছিলেন।

এরআগেও পরীমনি ও ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা মধ্যরাতে হাতিরঝিল এলাকায় গাড়িতে ঘুরেছেন বলে জানিয়েছেন পরীমনির গাড়িচালক নাজির হোসেন।

ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তার সাথে পরীমনির বিয়ে হয়েছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে, নাজির জানান তিনি বিষয়টি সঠিক জানেন না, তবে শুনেছেন যে তারা বিয়ে করেছেন।

গোয়েন্দা পুলিশের যে কর্মকর্তা সাথে পরীমনির এমন ঘনিষ্ঠতাটা সেই কর্মকর্তা পরীমনির দায়ের করা ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় মূল অভিযুক্ত নাসির ইউ মাহমুদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মাদক মামলার তদন্তের তত্ববধায়ক (সুপারভাইজার)। তাই বিষয়টি নিয়ে পুলিশ ও সরকারের গোয়েন্দা দপ্তরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান বলেন, কোন মামলা সংশ্লিষ্ট নারীকে নিজ বাসায় নিয়ে যাওয়া পুলিশের কোন ধরনের কোড অব কন্ডাক্টের মধ্যে পড়ে না। এটা খুবই অশোভনীয় ও অপেশাদার কর্মকাণ্ড। এটি কোন স্বাভাবিক ভব্যতার মধ্যে পড়ে না বলে মনে করেন সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান।

আলোচিত সেই কর্মকর্তার নাম গোলাম সাকলাইন। তিনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হিসেবে কর্মরত আছেন। আর সরকারি ফ্ল্যাট রাজাবাগ অফিসার্স কলোনীর মধুমতি ভবনের ৯/সি।

এই বিষয়ে গোলাম সাকলাইন বলেন, ‘পরিমনির সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। কার সাথে আমি গাড়িতে ঘুরবো সেটা একটি অন্য একটি বিষয়। তবে, পরীমনিকে আমি বিয়ে করিনি’।

তিনি আরো প্রশ্ন রাখেন, ‘আমি কার সাথে ঘুরবো না ঘুরবো, সেটা এভাবে নিউজে আসবে কেন’। তিনি আরো বলেন, ‘বিষয়টি খুবই স্পর্শ কাতর, পরীমনি এই মুহূর্তে ডিবি কার্যালয়ে আছে সেখানেও তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে’।

গোলাম সাকলাইন দাবি করেন পরীমনি তার বাসায় যাননি। তবে একাত্তরের পোর্টালের হাতে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য আছে জানালে তিনি বিষয়টি সঠিক নয় বলেও দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অন্য কোনো কর্মকর্তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে হাতে পরীমনির গাড়িচালকের বক্তব্যের রেকর্ড ও অন্যান্য তথ্য প্রমাণ রয়েছে।

এদিকে গোলাম সাকলাইন ছাড়াও আরো কোন কর্মকর্তার সঙ্গে পরীমনির ঘনিষ্ঠতা রয়েছে কিনা, সেই বিষয়ে তথ্য নিতে সরকারে উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।

সূত্র : একাত্তর পোর্টাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version