নিউজ ডেস্ক:
বৃহস্পতিবার রাতে ঘড়ির কাটা যখন দশটায় পৌঁছেছে, ঠিক তখনই প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি) লিওনেল মেসির প্রতি তাদের প্রথম পদক্ষেপটি নিয়েছিল। এর দুই ঘন্টা পূর্বেই জানা যায় মেসি ক্যাম্প ন্যু ছেড়ে যাবেন। তারপরেও পিএসজি মেসিকে পাওয়ার জন্য দৃঢ় মনোবলের সঙ্গে যেভাবে আলোচনাটি পরিচালনা করেছে তা সত্যিই চমকপ্রদ।
সাধারণত খেলোয়াড়দের এক ক্লাব থেকে অন্য ক্লাবে যাওয়ার প্রস্তাবগুলো মধ্যস্থতাকারী কিংবা এজেন্টদের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে এবং বার্সেলোনা থেকে মেসিকে অন্য ক্লাবের প্রতি প্রলুব্ধ করার প্রচেষ্টাগুলোও একই পন্থায় হয়েছিল। কিন্তু পিএসজি ভালোভাবেই বুঝেছিল এই পন্থায় এগোলে মেসিকে পাওয়া যাবে না, তাই তারা এখানে এক ভিন্নধর্মী চমৎকার কৌশল খাটায়।
ক্রীড়া পরিচালক লিওনার্দো মেসির বাবা জর্জ মেসির আইনজীবীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন এবং পরবর্তীতে ক্লাবের প্রেসিডেন্ট নাসের আল-খেলাইফিও তাদের সঙ্গে আলোচনায় যোগদান করেন। এমন আলোচনায় খেলাইফির অংশগ্রহণ বিরল ঘটনা। তবে চার বছর পূর্বে নেইমারের বার্সেলোনা ত্যাগ করে পিএসজি-তে আসার সময়ও তিনি আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। তার উপস্থিতি থেকেই বোঝা যায়, মেসির ব্যাপারে পিএসজি কতটা আগ্রহী।
এমন ঘটনা যে ঘটতে পারে, তা বৃহস্পতিবার সকালেও অসম্ভব মনে হয়েছিল। ক্যাম্প ন্যু-তে অবস্থান করার পাঁচ বছরের এই চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য মেসি এবং তার বাবা আবারও ইবিজা থেকে বার্সেলোনায় ফিরে আসেন। সন্ধ্যা ৮টায় এ ব্যাপারে একটি ঘোষণার পরিকল্পনা করা হয় এবং বলা হয়, আর্থিকভাবে দুর্বল ক্লাবটিকে সহায়তার জন্য পাঁচ বছরের চুক্তিতে মেসি দুই বছরের বেতন নিবেন।
খেলাইফি, লিওনার্দো, জর্জ মেসি এবং খেলোয়াড়ের আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত চলে, সেই আলোচনা শুক্রবার পর্যন্ত গড়ায়। পরবর্তী মৌসুমে খেলার সুযোগ, সেই সঙ্গে দুই বছরের বেতন বোনাস মিলিয়ে ৩৫ মিলিয়ন ইউরোর চুক্তিতে মেসির পক্ষের সবাই বেশ উচ্ছ্বাসিত হয়। এছাড়া কর এবং স্পন্সরের মতো ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনায় অনেকটা সময় লেগেছিল। আর্থিকভাবে ফেয়ার প্লে-এর বিষয়গুলোও আলোচনায় উঠে এসেছিলো এবং এসব ক্ষেত্রে পিএসজি সর্বদাই আত্মবিশ্বাসী।
পিএসজি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতলে নেইমারের মতো মেসিকেও একটি বিশেষ বোনাস দেওয়া হবে এমন একটি ধারাও রয়েছে চুক্তিতে।
শনিবারে মৌখিকভাবে চুক্তি হওয়ার পর পিএসজি চুক্তির লিখিত কাগজাদি রোববার সকাল ১০টায় বার্সেলোনায় মেসির কান্নাজড়িত বিদায় সম্মেলনের কিছুক্ষণ আগেই পাঠিয়ে দিয়েছিল, যদিও সে সময়ে মেসি পিএসজির সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে ভক্তদের কিছু জানাননি। কারণ মেসির আইনজীবীরা দুই দিন সময় চেয়েছিলো খুঁটিনাটি সকল বিষয় আগে যাচাই করতে।
সোমবার রাতের মধ্যে, সবকিছু প্রস্তুত করা হয় এবং মঙ্গলবার সকাল ১০টায় চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই মেসি ও তার পরিবার বার্সেলোনা বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
শুক্রবার পিএসজির ড্রেসিং রুমে মেসির সম্ভাব্য আগমনের বার্তা শুনে উল্লাস শুরু হয়। কারণ, নেইমার আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই তার দলকে জানিয়েছিলেন তার সাবেক বার্সেলোনা সতীর্থ মেসি অবশ্যই তাদের সঙ্গে যোগ দিবেন।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে নেইমার পিএসজি বোর্ডের একজন সদস্যের মতোই কাজ করছিলেন, মেসিকে ফোন করে, মেসেজ দিয়ে পিএসজিতে যোগদানের ব্যাপারে তাকে যথেষ্ট উৎসাহ দিয়েছিলেন।
মাত্র এক সপ্তাহ আগেও পিএসজির সঙ্গে মেসির চুক্তি সই হওয়ার কোনো সম্ভবনাই ছিল না। কিন্তু সময়টা উপযুক্ত হলে সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত কিংবা অসম্ভব চমৎকার ঘটনাগুলো ঘটে যায়, ঠিক যেভাবে মেসির যোগদানে পিএসজির ভাগ্য প্রসন্ন হলো।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান