ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে চুরির ঘটনা। ছোটখাটো চুরির পাশাপাশি বেড়েছে গরু চুরির ঘটনা। প্রায় প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চুরির খবর পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি পৌর শহর সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হলেও ঠেকানো যাচ্ছে না চুরির ঘটনা।
গত রোববার রাতে পৌর শহরের গুয়াগাও এলাকার আরেফিন নামে এক ব্যক্তির বাড়ির প্রাচীর ভেঙে গরুর গলায় পরানো লোহার শিকল কেটে তিনটি বিদেশি গাভী চুরি করে নিয়ে যায় চোররা। একই রাতে উপজেলার সাগুনি গ্রামের মজাহারুলের বাড়ি থেকেও দুটি আড়িয়া গরু চুরি গেছে।
সম্প্রতি উপজেলার বোর্ডহাট, নোহানী, পটুয়াপাড়া, চন্ডিপুর, বেগুনগা, নাকাটিসহ বিভিন্ন এলাকায় গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। গরু চুরি রোধে প্রশাসনের কোনো তৎপরতাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। গরু ছাড়াও মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোন, পানির পাম্প, বাইসাইকেল, টিউবওয়েল, রিকশা-ভ্যানসহ স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনার পাশাপাশি টাকা ছিনতাইয়ের মতো স্পর্শকাতর ঘটনাও ঘটছে।
সম্প্রতি পৌর শহরের কলেজ বাজার থেকে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কিবরিয়া আবেদিনের প্রায় তিন লাখ, মুদি দোকানদার ছুটুর প্রায় দুই লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। দুই বস্তা ধান ও ১২ বস্তা ভুট্টা চুরি হয়েছে উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সুমন মন্ডলের শান্তিবাগ বাসা থেকে।
কয়েক দিনের মধ্যে উপজেলা পরিষদ থেকে ১২৫ সিসি ডিসকোভার একটি, আলহাসানা স্কুলের শিক্ষকের গুয়াগাও বাড়ি থেকে একটি পালসার, হাসপাতাল থেকে এক ডাক্তারের একটি ডিসকোভার, মশালডাঙ্গী থেকে একটি ডিসকোভার, কলেজ বাজার থেকে এক নেতার একটি ডিসকোভার মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। টাকা দিতে অস্বীকার করায় উপজেলার জাবরহাট এলাকায় ছিনতাইকারীরা জবাই করে হত্যা করে বিকাশ ব্যবসায়ী ইসাহাক আলীকে।
হত্যার ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করলেও গরু চুরিসহ অন্যান্য চুরি বা ছিনতাইয়ের ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। এ নিয়ে পুলিশের কোনো মাথাব্যাথা নেই। আইনশৃঙ্খলা’র অবনতি হচ্ছে এমনটাই দাবি সুধীমহলের।
অভিযোগ রয়েছে, চুরির ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিতে গেলে চোরের নাম চাওয়া হয় অভিযোগকারীর কাছে। বলা হয়, চুরি যাওয়া মালামাল কোথায় আছে, খবর নেয়, জানতে পারলে আমাদের (পুলিশকে) জানান, আমরা উদ্ধার করে দেব। এজন্য পুলিশের কাছে যায় না সাধারণ ভুক্তভোগীরা।
মোটরসাইকেল চুরি যাওয়া ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম রব্বানী বলেন, পুলিশ চুরি যাওয়া মোটরসাইকেলের কোনো খোঁজ দিতে না পারলেও একটি চক্র টাকার বিনিময়ে ফিরিয়ে দিচ্ছে চোরাই মোটরসাইকেল। এ ক্ষেত্রে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা গুনতে হয় মোটরসাইকেল মালিককে। চক্রটির বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দেওয়ার পরও তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। চক্রটির অন্তরালে কোনো প্রভাবশালীর হাত রয়েছে। এজন্য পার পেয়ে যাচ্ছে তারা। আমাদের ধারণা বিশেষ সুবিধা নিয়ে সব কিছু জানার পরও নিশ্চুপ থাকছেন পুলিশ।
নোহালী গ্রামের মহেন্দ্র নাথ ঠাকুর এবং তানিয়া আক্তার নামে উপজেলার আরেক ভুক্তভোগী বলেন, সম্প্রতি তানিয়াদের বাড়ি থেকে পাঁচটি ও মহেন্দ্রের বাড়ি থেকে একটি গরু চুরি হয়েছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও কোনো হদিস মিলেনি। পুলিশও কিছু করছে না।
দবিরুল ইসলাম নামে এক শ্রমিক নেতা বলেন, শহরের বিভিন্ন এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এতে কোনো কাজ হচ্ছে না। এর মাধ্যমে এখনো কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।
পীরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) খায়রুল আলম বলেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। যারা অভিযোগ করেছেন তাদের বিষয়গুলো দেখা হচ্ছে। চুরি রোধে তারা সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া থানার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
আনোয়ার হোসেন আকাশ/ঠাকুরগাঁও