Highlights

প্রতিশ্রুতি দিয়ে একযুগেও কথা রাখেনি কেউ, ভাঙা রাস্তায় চরম দুর্ভোগ

Published

on

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার আটাবহ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কাঞ্চনপুর এলাকায় ১৬শ’ মিটার রাস্তার বেহালদশা। এলাকাবাসীসহ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। জালশুকা-বাড়ইপাড়া আলিক সড়ক হইতে পশ্চিম বড়ইছুটি-কাকাঞ্চনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়ে ভেন্নারটেকি আব্দুল্লাহরচর ব্রিজ অভিমুখের রাস্তায় চরম ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করছে শিক্ষার্থী, কারখানার শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার কয়েক হাজার মানুষ। বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিলেও ১২ বছরে ওই রাস্তায় কোন কাজ করা হয়নি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার আটাবহ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের জালশুকা-বাড়ইপাড়া সড়ক হইতে বড়ইছুটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও কাঞ্চনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়ে ভেন্নারটেকি আব্দুল্লাহর চরের ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার দশা। প্রায় ১৬শ মিটার দুরত্বের ওই রাস্তায় বড়ইছুটি, কাঞ্চন , সাড়াবাড়ি, সোনাদিয়া, বরিয়াবহ ও রসুলপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ও এলাকার কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে। সংস্কারের অভাবে ভাঙ্গাচুড়া ও খানাখন্দে ভরা ওই রাস্তায় চরম ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করছে ওই এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষসহ শিক্ষার্থীরা।

পথচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে পানি আসার সাথে সাথে ১৬শ মিটার ওই রাস্তার প্রায় এক হাজার মিটার পানিতে ডুবে যায়। এর ফলে উপজেলা সদরে যেতে, স্থানীয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের স্কুল কলেজে যাওয়া, বাজার ঘাট, চিকিৎসার জন্য রোগীদের হাসপাতালে নিতে ও প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী বহন করতে নৌকা ছাড়া ওই এলাকাবাসির চলাচলের আর কোন উপায় থাকে না। প্রতি বছর বর্ষাকালের প্রায় ৪/৫ মাস চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন মুমুর্ষ রোগী, শিক্ষার্থী, কারখানার শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। রাস্তার কারনে সরকারের প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা ব্যায়ে দেড়কিলোমিটার রাস্তার শেষে নির্মিত ব্রিজটি যেন কোন কাজেই আসছে না।

এছাড়া ওই রাস্তা সংলগ্ন পশ্চিম বড়ইছুটি গ্রামের অংশে অবস্থিত রয়েছে একটি সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিক। ওই কমিউনিটি ক্লিনিকে বিভিন্ন সময় জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিসহ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পেতে ক্লিনিকে যেতে গর্ববতী মহিলাসহ বিভিন্ন রোগীদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। একই রাস্তায় ৬শ মিটারের মাথায় রয়েছে ৭০নং কাঞ্চনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে একটি ভোট কেন্দ্র। জাতীয় নির্বাচনসহ স্থানীয় ইউপি নির্বাচনে ভোট দিতে এসেও ভোগান্তিতে পড়েন ভোটাররা। বর্ষা মৌসুমে ওই রাস্তার এক হাজার মিটার পানির নীচে ডুবে থাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অত্যান্ত ঝুঁকি নিয়ে কখনো নৌকায় আবার কখনো পানির মধ্য দিয়ে পায়ে হেটে স্কুলে যেতে হয়।

অপরদিকে দীর্ঘদিনের পুরোনো ওই রাস্তার ইট এখন আর চোখে পড়ে না। রাস্তার মাঝে মাঝে ইট না থাকায় বড় বড় গর্তের ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শেষে গর্ভবতী মহিলাসহ মুমুর্ষ রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে হলে লাশবাহী খাট বা বিকল্প উপায়ে জালশুকা-বাড়ইপাড়া সড়ক পর্যন্ত নিতে হয়। ঘরবাড়ী নির্মানের জন্য বিভিন্ন সামগ্রী, কৃষিপণ্য ও গো-খাদ্যসহ বিভিন্ন মালামাল বেশী খরচ দিয়ে লেবারের মাধ্যমে মাথায় বহন করে নিতে হয়। এছাড়া রাস্তাটির ১৬শ মিটারের মাথায় রয়েছে ওই এলাকার সবচেয়ে বড় একটি সামাজিক কবরস্থান। রাস্তায় খানাখন্দের কারনে লাশ দাফনের জন্য কবরস্থানে লাশ নিতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আর বর্ষা মৌসুম হলেতো ভোগান্তির কোন শেষ নেই, নৌকা ছাড়া কবরস্থানে লাশ নেয়ার আর কোন উপায় থাকে না।

এলাকাবাসির দাবি, ওই রাস্তাটি ৩/৪ ফুট উচু করে মাটি ভরাটের মাধ্যমে মেরামত করার জন্য মাননীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের বরাবর লিখিত আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বিগত দিনে বিভিন্ন সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা রাস্তাটি মেরামতের জন্য প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করেনি।

এ ব্যাপারে কাঞ্চনপুর গ্রামের ভেন্নারটেকি এলাকার আব্দুল সাত্তার মিয়া জানান, এই রাস্তায় আমাদের অনেক কষ্ট আর ভোগান্তির মাধ্যমে চলাচল করতে হয়। প্রায় ২০ বছর যাবত নির্বাচন আসলে জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের প্রতিশ্রুতির কথা শুনে আসছি। আজ পর্যন্ত কেউ সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। প্রায় ১০/১২ বছর আগে এই রাস্তায় মাটি ফেলে ইটের সলিং করা হয়েছিল। তারপর আর কোন চেয়ারম্যান বা মেম্বার এই রাস্তাটির কোন খোজখবর রাখেনি।

পশ্চিম বড়ইছুটি এলাকার মাইদুল হোসেন জানান, মাননীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মহোদয়ের মাধ্যমে কালিয়াকৈর উপজেলার সব এলাকায় রাস্তাঘাটের অনেক উন্নতি হয়েছে। উপজেলার মধ্যে আমাদের এই এলাকাটি এখনো সবচেয়ে বেশী অবহেলিত রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত এই রাস্তাটি সংস্কারের অভাবে বেহাল অবস্থায় পরিনত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা পেতে এই এলাকার অনেকেই জালশুকা, বাড়ইপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বাড়ী ছেড়ে চলে যায়। আবার বর্ষা মৌসুম শেষে বাড়ী ফিরে আসে। কবে যে এ ভোগান্তির শেষ হবে একমাত্র আল্লাহ জানে। তবে এ এলাকার মানুষের ভোগান্তি ও দুঃখ দেখার যেন কেউ নেই।

আটাবহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাখাঁওয়াত হোসেন শাকিল মোল্লা জানান, জালশুকা-বাড়ইপাড়া আঞ্চলিক সড়ক হইতে পশ্চিম বড়ইছুটি-কাঞ্চনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়ে ভেন্নারটেকি আব্দুল্লাহরচর ব্রিজ অভিমুখে রাস্তাটি মাটি ভরাটের জন্য প্রজেক্ট দেয়া হয়েছে। বর্ষার পানি শুকিয়ে গেলে অল্প সময়ের মধ্যে এই রাস্তাটির মাটি ভরাটের কাজ শুরু হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, ওই রাস্তাটি উচু এবং প্রশস্থ করে মেরামত করার জন্য আমরা উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে রাস্তাটি আইডি ভুক্ত করেছি। উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে ওই রাস্তার সকল প্রকার উন্নয়ন কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version