Highlights

ফাঁদে ধরা ফকিরের কেরামতি!

Published

on

মাগুরা প্রতিনিধি:
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার রাজাপুর ইউপির কলমধারী গ্রামে ফকিরের ভুঁয়া কেরামতির ঘটনা ধরা পড়েছে এক ব্যক্তির ফাঁদে। পরে রোগীর বাড়িতে সহকারীসহ একদিন আটক থাকার পর ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে কোনোমতে রক্ষা পেয়েছেন ওই ফকির।

জানা যায়, কলমধারী গ্রামের হারেজ উদ্দীনের মেঝে ছেলে আক্তারুজ্জামানের স্ত্রী দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ্য (শরীরে কাঁপনী)। অনেক ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়ে ভাল হয় নি তার রোগ। পরে এক লোকের দেওয়া তথ্যে শরণাপন্ন হন পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার নোওয়াপাড়া ইউপির সীতারামপুর গ্রামের চন্নু ফকিরের।

আক্তারুজ্জামান জানান, ফকিরের শরণাপন্ন হলে তিনি ঘাড়ে জ্বীন হাজির করে রোগী দেখে বলেন- তাকে নষ্ট করা হয়েছে। নষ্ট করার জন্য বাড়িতে পুঁতে রাখা হয়েছে বিভিন্ন জিনিস। সেটি নষ্ট বা উদ্ধার করতে হবে। বংশের কেউ এটা করেছে বলে জানান তিনি। দেবর, ভাসুর, জা, ননদ, শাশুড়ী এ কাজ করেছে কিনা? -এমন প্রশ্নের জবাবে জানানো হয় এরা কেউ না, বংশের লোকে করেছে এ কাজ। এরপর একদিন ফকির চন্নুকে এনে বাড়ির দুই স্থান থেকে উঠানো হয় নষ্ট করার উদ্দেশ্য পুঁতে রাখা সেই সকল জিনিসপত্র। সেদিনও তার কাছে জানতে চাওয়া হয় কে করলো এ কাজ? জবাবে চন্নু বললো বংশের লোক করেছে এ কাজ। একটি আমল শিখিয়ে দেওয়া হবে যেটা করলে তারা নিজেরাই জানতে পারবে কে করেছে কাজটি।এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিলো ফকিরের কাজ। রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া শেষে কিছু টাকা পয়সাও নেন তিনি। রোগীও বেশ সুস্থ্য। কিন্তু বিপত্তি ঘটে কিছুদিন পর ফকির চন্নু বাড়িতে গিয়ে জানায় এ কাজ করেছে রোগীর শাশুড়ী। ফলে শুরু হয় পারিবারিক দন্দ্ব, চরমভাবে অশান্তিতে পড়ে যায় পরিবারটি।

আক্তারুজ্জামানের ভাষ্যমতে, ফকির কতটা সঠিক কথা বলেছে সেটা যাচাই করার জন্য তার ভাই লুৎফর একজন সুস্থ্য মহিলাকে পরিচয় গোপন করে পাঠান চন্নু ফকিরের কাছে। ফকির যথারীতি আসরে বসে ঘাড়ে জ্বীন হাজির করে বলে দেন ‘তাকেও নষ্ট করা হয়েছে’। তার বাড়িতেও বিভিন্ন জিনিসপত্র পুঁতে রাখা হয়েছে। এ কথার পর ২৩ জানুয়ারি চন্নু (৩৫) ও তার সহকারী একই উপজেলা দক্ষিণ চরবাগাট গ্রামের রজব আলী (৬৫)কে নিয়ে মাগুরা আসলে তাদের ঐ মহিলার বাড়ি না নিয়ে লুৎফরের এক বোনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আগের নিয়মানুযায়ী চন্নু তিন জনের প্রস্রাব দিতে বললে সেটা না দিয়ে টিউবওয়েলের পানি দেওয়া হয়। এরপর হাত চালান দিয়ে বের করা হয় সেই জিনিসপত্র। যেটা চন্নু আগে থেকে জোগাড় করে কাছে রাখতো। এরপর সেখানে লুৎফর ও তার অন্য ভাইয়েরা সেখানে পৌঁছালে ঘাবড়ে যায় ফকির চন্নু, অকপটে স্বীকার করেন তার এই ভুঁয়া কেরামতির কথা।

এরপর চন্নুর বাড়িতে খবর দেওয়া হলে তার ভাই মন্নু ও ভগ্নিপতি এবং নিকট আত্মীয়রা গতকাল বুধবার রাজাপুর ইউপির চেয়ারম্যান মো. শাকিরুল ইসলাম শাকিল ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিতে বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষে তাকে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে চন্নু তার অপরাধের কথা স্বীকার করে বলেন, আমি ফাইভ পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। ঘাড়ে জ্বীন আসা ও জিনিসপত্র উদ্ধার সব-ই মিথ্যা। আমার কয়েকটি সূরা মুখস্থ আছে, যা দিয়ে আমি ঝাড়ফুঁক করি।

এ বিষয়ে রাজাপুর ইউপির চেয়ারম্যান মো. শাকিরুল ইসলাম শাকিল বলেন, এক প্রতারককে এলাকাবাসী আটক করে। এরপর তাদের পরিবারের লোকজনকে খবর দিয়ে সে আর কখনও এই কাজ মর্মে প্রতিশ্রুতি দিলে এলাকাবাসী ও আমি উপস্থিত থেকে ফকির চন্নু ও তার সহকারী রজব আলীকে তাদের পরিবারের লোকজনের হাতে বুঝিয়ে দিয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version