Highlights

বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি, বিপাকে বন্যাদুর্গতরা

Published

on

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। কোমর পানিতে তলিয়ে আছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে চরম বিপাকে দুর্গত এলাকার মানুষ।

রবিবার থেকে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। দেশের ১০টি নদ-নদীর ২২টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুরসহ ১১ জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে, বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।

বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া শনিবার বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে এবং তারপর থেকে উন্নতি হতে শুরু করবে। এছাড়াও মধ্যাঞ্চলে আরো ৪৮ ঘণ্টা বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে, তারপর থেকে উন্নত হবে।

ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বেড়ে যাওয়ায় কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়ে পড়েছে নদ-নদী অববাহিকার দুই শতাধিক চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। গত ৪ দিন ধরে পানির নিচে তলিয়ে আছে জেলার ২৫ হাজার ১৫০ হেক্টর রোপা আমন, বীজতলা ও সবজি ক্ষেত। এতে চরম ক্ষতির মুখে চাষিরা। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সংকট।

এদিকে, সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা বরাদ্দ করা হলেও তা না পাওয়ার অভিযোগ বন্যার্তদের। গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল।

যমুনা নদীর পানি বাড়ায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার নদীতীরবর্তী ও চরাঞ্চলের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার প্রবেশ করেছে। বিভিন্ন ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২শ হেক্টর জমির মাশকালাই ও রোপা আমনের বীজতলা। ভেসে গেছে অন্তত ৯০টি পুকুরের মাছ।

এদিকে উজানে ভারি বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে নীলফামারীতে বিপৎসীমা ছাড়িয়েছে তিস্তা নদীর পানি। এতে তিস্তার তীরবর্তী জেলার ১০টি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে, ফরিদপুরে নদ-নদীর পানি বেড়ে ৬টি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানির বাড়ার ফলে জেলার সদর উপজেলার ডিক্রিরচর, নর্থচ্যানেল, চরমাধবদিয়া ও আলিয়াবাদ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাসহ নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলাগুলোর সাথে চরাঞ্চলের যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় কয়েকটি সড়কের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। ভেসে গেছে ফসলের ক্ষেত। দেখা দিয়েছে গবাদি পশুর খাদ্য সংকট।

এছাড়া ফরিদপুরের সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে পানি ঢুকে যাওয়ায় সেখানকার প্রায় ৬০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার অনেক জায়গায় শুরু হয়েছে নদীভাঙন। অনেক স্থানে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সিরাজগঞ্জে যমুনাসহ অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার অভ্যন্তরীণ সব নদ-নদী ও চলন বিলের পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত রয়েছে। কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজলার কমপক্ষে ৪০টি ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর ফসল। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, কয়েক দিন ধরে যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি আরো দুদিন অব্যাহত থাকবে। দুদিন পর থেকে পানি কমতে শুরু করবে।

সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ জানান, বন্যা মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। ৫৪১ টন চালসহ ডাল, শুকনো খাবার প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এছাড়া নগদ ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা হাতে রয়েছে। এরই মধ্যে বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোতে খাদ্যসামগ্রী বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ৭৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি বেড়ে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সদরসহ ছয়টি উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ভাঙন দেখা দেওয়ায় হুমকিতে টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধ। প্রবল স্রোতে সড়ক ছাপিয়ে লোকালয়ে ঢুকছে বন্যার পানি। সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। তলিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। সার্বিকভাবে টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। যমুনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়ে জেলা সদর, বাসাইল, কালিহাতি, ভূয়াপুর, গোপালপুর, নাগরপুর ও মির্জাপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে রাস্তাঘাটসহ বিস্তীর্ণ এলাকার সবজি ক্ষেত। পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন পার করছেন লক্ষাধিক মানুষ।

জামালপুরে সড়কে ঢুকছে বন্যার পানি। ঝুঁকি নিয়ে চলছে ছোটবড় যানবাহন। এরই মধ্যে জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার ৩৬টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ। বন্যা দুর্গতরা আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়াও বিভিন্ন উঁচু বাঁধ ও সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন। তলিয়ে আছে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। বন্যার্তদের জন্য জেলায় একশ ১২ মেট্রিক টন চাল, সাড়ে ৩৪ লাখ টাকা এবং ১ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য জেলার বন্যা ও ভাঙনে বিপর্যস্ত তিস্তাপাড়ের গ্রামগুলোর বাসিন্দারা। ভাটির টানে হারিয়ে যাচ্ছে জমি। ঘরবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা আশ্রয়হীন মানুষ। সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে তিস্তা, ভাঙনের শব্দে দিশাহারা মানুষ। পড়ে আছে বিধ্বস্ত বাড়িঘর। আশ্রয়হারা মানুষ চলে গেছে উঁচু স্থানের খোঁজে, কেউ গেছে অজানার উদ্দেশে।

এবার এ নিয়ে অন্তত ১০ বার বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে তিস্তা নদীর পানি। প্রতিবার পানি বাড়লে বন্যায় ভাসে আর কমলে পাড় ভাঙার নিষ্ঠুর খেলায় নিঃস্ব, অসহায় মানুষ। রংপুরের গঙ্গাচড়ায় বাঁমতীর ভেঙে গতিপথ বদলেছে তিস্তা। ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে রংপুর-লালমনিরহাট সড়কসহ অসংখ্য স্থাপনা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version