গত ১৮ মে মুক্তি পাওয়া হরিষ ব্যাস পরিচালিত ‘আংরেজি মে কেহতে হ্যায়’ সিনেমাতে অভিনয় করেছেন সঞ্জয় মিশ্র, অংশুমান ঝা, শিবানী রঘুবংশী, ব্রিজেন্দ্র কালা ও একাভলি খান্না । ছবিটি ভেনেজুয়েলা ফাইভ কন্টিনেন্টস ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা ছবি ও সেরা পরিচালকের পুরস্কার জিতেছে। আর ছবিতে সহকারি পরিচালক ছিলেন বাংলাদেশের জেরিন হোসাইন।
জেরিন হোসেনের জন্ম ঢাকায়। কলেজের পাঠ চুকিয়েছিলেন ঢাকার ইডেন কলেজে। ঢাকা থেকে বলিউডপাড়ায় জেরিনের পাড়ি দেওয়ার গল্পটা তারপর শুরু হয়। ২০১৪ সালে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য পাড়ি দেন ভারতে। দিল্লির সারদা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগে ভর্তিও হয়ে যান। ভারত পাড়ি দেওয়ার আড়াই বছর পর ‘এনডিটিভি’তে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পান তিনি।
কিভাবে বাংলাদেশের জেরিন সিনেমার জগতে ঢুকলেন এমন প্রশ্নে জেরিন শোনালেন সে গল্প –
ইডেনে পড়ার সময়ও আমার ইচ্ছে ছিল সাংবাদিকতা পেশায় আসার। কলেজ শেষ করার পর ইচ্ছেপূরণ করতেই মূলত সারদা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। ওখানে ভর্তি হওয়ার প্রথমদিকে পড়ালেখা করার বাইরে কিছু করার সুযোগই ছিল না। তারপর আস্তে আস্তে যখন পড়ালেখার চাপ কমতে শুরু করলো আমিও বিভিন্ন জায়গায় কাজ করার সুযোগ খুঁজি। সুযোগ পেয়ে যাই এনডিটিভিতে। যতদূর জানি বাংলাদেশ থেকে আমিই প্রথম সুযোগ পেয়েছি এখানে। শুধু তাই নয়, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শিক্ষার্থী হিসেবে এখানে কাজের সুযোগ পেয়েছি। এই ব্যাপারটা আমাকে আরো উত্সাহীত করে। তারপর আমি এনডিটিভিতে পুরোদমে কাজ করা শুরু করি। এনডিটিভির অনুষ্ঠান ‘সেল গুরু’ সহ-প্রযোজনা করেছি আমি। দেশি-বিদেশি ইভেন্ট কাভার করেছি অনেক সময় ধরে। কাজ বললে ভুল হবে, আমি আসলে এনডিটিভিতে অনেককিছু শিখেছি। নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি ভারি করেছি দিনদিন। সাক্ষাত্কার, ডেস্ক ওয়ার্ক, এমনকি এডিটিং সবকিছু শেখার চেষ্টা করেছি। এই দিনগুলোই বলিউডে কাজ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। এরপর বিভিন্ন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ শুরু করি আমি। অবশ্য এর আগেও করেছিলাম। হুট করে একদিন ‘ড্রামরোল পিকচার্স’ থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করা যায়।
‘ড্রামরোল পিকচার্স’-এ কাজ করার আগে এদেশের শোবিজ অঙ্গনেও কাজ করেন জেরিন। ক্যামেরার সামনে ও পেছনে দু-জায়গাতেই তার উপস্থিতি ছিল। প্রাণ ফ্রুটো জুসের বিজ্ঞাপনেই তাকে সর্বপ্রথম দেখা যায়। তাছাড়া এশিয়াটিকের তৈরি দুটি গেম শো করেছেন, করেছেন রিয়ালিটি শো ‘ফ্যান ক্লাব টুর্নামেন্ট’। এনটিভি ও এটিএন বাংলার দুটি অনুষ্ঠানের সহ-প্রযোজক ছিলেন, করেছেন থিয়েটারও। দিল্লি যাওয়ার আগ পর্যন্ত ৩ বছর পাবলিক রিলেশনের কাজ করেন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘পথিক’-এ।
‘ড্রামরোল পিকচার্স’-এর প্রোডাকশন ‘আংরেজি মে কেহতে হ্যায়’ ছবিতে পরিচালক হরিষ ব্যাসের ৬ জন সহকারি ছিল। ৬ জনের মধ্যে ৩ নম্বর সহকারি ছিলেন জেরিন। ছবির প্রি-প্রডাকশন ও পোস্ট-প্রডাকশন হয় মুম্বাইয়ে। শুটিং বেনারসে। সিনেমাটি নিয়ে জেরিন বলেন, ‘এটি একটি রোমান্টিক ছবি। সিনেমার গল্পটা অসাধারণ। ভারতে ভালোবাসার কথা বললে সবাই যুবক-যুবতীদের কথা বলে। কিন্তু ভালোবাসা শুধু তাদের জন্য নয়। ভালোবাসা যেকোনো সময় যেকোনো মানুষের সঙ্গে হতে পারে। সব বয়সের মধ্যেও কিন্তু নতুন করে ভালোবাসা আসতে পারে। সেটাই দেখিয়েছে এই ছবি।’
সিনেমায় সহকারি পরিচালকের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, ‘হরিষ ব্যাসের সঙ্গে আগে থেকেই পরিচয় ছিল। তার আগের কাজগুলো দেখেছি। সঞ্জয় মিশ্র, পঙ্কজ ত্রিপাঠী, ব্রিজেন্দ্র কালা সবাই ভালো অভিনয়শিল্পী। ক্যামেরায় ছিলেন ফারুক মিস্ত্রি, বলিউডের সেরা সিনেমাটোগ্রাফারদের একজন। তাদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা এক কথায় চমত্কার। এই সিনেমাটির মাধ্যমে আমার অভিজ্ঞতার ঝুলি আরো ভারী হলো। আর এই ছবির অভিজ্ঞতাটুকু পরবর্তী ছবিগুলোতে কাজে লাগাবো।’
পরবর্তী কাজ বলতে, বলিউডে মাত্র তার শুরু। হাতে আছে নতুন কাজ। জেরিন বলেন, ‘বলিউডে নতুন সিনেমার কাজ শুরু করবো কিছুদিনের মধ্যে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি, ঘোষণা দিলেই বিস্তারিত বলতে পারবো। জেরিন বলেন, ‘সাংবাদিকতাকেই প্রধান পেশা করতে চাই, পাশাপাশি সিনেমা পরিচালনা। অনেকেই অভিনয়ের কথা বলেন, আমার ততটা আগ্রহ নেই।’