বোদা (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি: ‘পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত, সবুজে হলুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত, ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়ে পড়ে,ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলো শুয়েছে মাঠের পরে’ পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের ‘ধানক্ষেত’ কবিতার মত পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার যে দিকে তাকানো যায়, শুধু বোরো ধানের দিগন্তবিস্তৃণ সবুজ শ্যামলিমা মাঠ প্রান্তর। উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার সর্বত্রই একই চিত্র দেখা যায়। যে দিকে চোখ যায় শুরু বোরো ধানের সবুজের দোল খাওয়া ক্ষেত আর ক্ষেত। ফসলের মাঠে সবুজ গাছে সোনালী ধানের শীষ। বাতাসে একই তালে মাথা দোলাচ্ছে। এলোমেলো হাওয়ায় দুলছে ধানক্ষেত গুলো। নদী বিধৌত এলাকাগুলোর ধানক্ষেতের র্স্বণালী সবুজ রুপ যেন আরও আকষণীয়, আরও অপরুপ। যেন শিল্পীর তুলিতে আকা নিখুত ছবি। আহা! এ কী অপরুপ দৃশ্য বোদার মাঠে প্রান্তরে। উচু-নিচু সমতল সব এলাকায় ধানের একই দৃশ্য। গত বছর আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় ও বাজার দর ভালো থাকায় এবারও কৃষকরা রাতদিন সমান ভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে ফলন ফলিয়ে ভালো দামের আশায়। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, উপজেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৯ হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার পোকামাকড় ও রোগবালাই ছিল না বললেই চলে। মাঠ ভরা ফসল দেখে হাসি ফুটছে কৃষকের মুখে। নতুন করে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার বোরোর ফলন কয়েক বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। এরই মধে অনেক জমির ধানের শীর্ষ দোল খাচ্ছে। আবার কিছু জমির ধান গাব আসতে শুরু করেছে। ক্ষেতে ফলন দেখেই কৃষক সুন্দর আগামীর স্বপ্ন বুনছেন। ঘরে ধান এলে বিক্রি করে কেউ মেয়ের বিয়ে দেবেন, কেউ ছেলের বউ আন বেন ঘরে। বছরের জামা কাপড়, ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচের জোগান দেবেন। ধান দেনা আর দাদনের টাকা পরিশোধ করবেন, স্ত্রীর শখ মেটাবেন। প্রকৃতির আশীবাদ যথাসময়ে বৃষ্টি হওয়ার ধানের গাছ হৃদপুষ্ট হওয়ার কৃষক স্বপ্ন দেখতে শুরু করছেন। পাশাপাশি চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ ভালো থাকায় এবং সার, ডিজেল পানি, ও কীটনাশকসহ প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ সহজে সরবরাহ পাওয়ায় তারা বাম্পার ফলনের আশা করছেন। পাচপীর ইউনিয়নের মেনা গ্রামের কৃষক তরিকুল, জাহাঙ্গীর সহ অনেকে বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১৮ থেকে ২০ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে জমিতে সেচ নিতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না। পাশাপাশি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাও নিয়মিত খোঁজ নিয়ে আমাদের বিভিন্ন রকম পরামর্শ প্রদান করে আসছেন। বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের তারা মিঞ্া বলেন, টানা কয়েক বছর ধান আবাদ করে লোকসানের মুখে পড়ায় ধান চাষ বাদ দিয়ে অন্য ফসল করার চিন্তা শুরু করেন। এরই মধ্যে আমন মৌসুমে বাম্পার ফলন ও ধানের ভালো বাজার দর থাকায় এবং স্থানীয় কৃষি বিভাগের অনুপ্রেরণায় এবার তারা অধিকাংশ জমিতে ধানের আবাদ করছেন। ধান গাছের তেজদীপ্ত অবস্থা দেখে বাম্পার ফলন আশা করছেন তারা। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার আল মামুন অর রশিদ বলেন, কৃষকের মাঝে সার, বীজসহ প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ বিতরণ শতভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে। কৃষকদের বোরো ধানের বীজ প্রণনোদনা দেওয়া হয়েছে। এখনও সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ খুব ভালো, আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুকুলে থাকলে উপজেলার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।